/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/23/sayani-2025-08-23-17-51-18.jpeg)
অনেক বছর পর আবার মুম্বইয়ে পুজোর গানে পারফর্ম...
হ্যাঁ, এবারের পুজোটা মুম্বইয়ে থাকছি। চতুর্থবার মুম্বইয়ে পুজোর গানে পারফর্ম করছি। ২০১৯-এর পর মুম্বইয়ে পুজোর সময় পারফর্ম করা হয়নি। মাঝের সময়টুকু বিদেশেই কেটেছে। এইবছর পুজোর সময় মুম্বই থাকা-পারফম করা সবটা মিলিয়ে খুবই উত্তেজিত।
রণজয়ের সঙ্গে ডুয়েট বলেই জারিয়ার 'এভাবে থেকে যেও' এত পছন্দ হল?
আসলে জারিয়ার এই গানটা আমাকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করেছিল। কিছু গান আছে যা একবার শুনলেই মনে গেঁথে যায়। জারিয়ার 'এভাবে থেকে যেও'-যে কেউ একবার শুনলে বারবার শুনতে ইচ্ছে করবে। আমি যখন প্রথম গানটা শুনেছিলাম তখন গানটা কম্পোজ করেছিল মৌলি চক্রবর্তী নামে একটা বাচ্চা মেয়ে। নতুন কম্পোজাররা সত্যিই এত ভাল কাজ করছে! পরে যখন শুনলাম আমি আর রণজয় কাজ করব আরও ভাল লাগল। ব্যক্তিগতভাবে ওঁর সুর-গান আমার ভীষণ পছন্দের। তাছাড়া এই গানটার মধ্যে যেমন আছে শহর কলকাতার কথা তেমনই আছে প্রেমের গন্ধ।
শহর থেকে দূরে থেকেও তিলোত্তমার প্রতি কতটা টান?
কলকাতাকে আমি আজও ভীষণ ভালবাসি। স্কুল-কলেজ সবটাই তো এখানে কেটেছে। তাই দূরে থাকলেও শিকড়ের টান কখনও ভোলা যায় না। বাড়িটা আসলে বাড়ি-ই হয়। সারাদিন পর যখন নিজের বাড়ি-সেই চেনা খাটে একটু বিশ্রাম নেওয়া যায় সেই সুখ আর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
পুজোর সময় কলকাতাকে মিস করেন?
পুজোর সময় কলকাতাকে সেই অর্থে মিস করি না। কারণ আমি যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই তো বাঙালির জন্যই গান গাইছি। আর পুজোর সময় বেশিরভাগই পুজোর গান গাই। সাম্প্রতিক সময়ে আমার কাছে পুজো মানে গান গেয়ে বাঙালির মন জয় করা, তাঁদের আনন্দ দেওয়া, নতুন গান তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই রুটিনটা আমি খুব এনজয় করি। একটা সময় পুজো মানে ছিল প্যাণ্ডেলে গিয়ে ঠাকুর দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, খাওয়াদাওয়া। কলেজ জীবনে ব্যান্ডে গান করেছি। শেষ ১২ বছর পুজোর সংজ্ঞাটা বদলে গিয়েছে। এখন যদি পুজোয় আমি গান না গাই তাহলে খারাপ লাগে। আমার কাছে পুজো মানেই পারফরম্যান্স।
গান শেখার অনুপ্রেরণা কে?
আমি ছোট থেকেই গান শিখেছি। আমার বাবা-মা দু'জনের বাড়িতেই গানবাজনার চর্চা ছিল। তবে কেউ পেশাদার শিল্পী নয়। আমার পরিবার থেকে একমাত্র আমিই গানকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। একটি অনুষ্ঠানে অজয় চক্রবর্তীর গান আমার মা-বাবার মনে দাগ কাটে। তখনই ভেবেছিলেন মেয়েকে ওঁর কাছেই গান শেখাবেন। পরদিন সকালেই আমাকে নিয়ে যায়। চার বছরে কোলে বসে গান শেখার সেই জার্নি শুরু। ইন্ডিয়ান ক্ল্যাসিকল মিউজিকের তালিম নিয়েছি। মিউজিক ডিরেক্টরদের গান শুনিয়েছি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়েছি।
বাংলা ছবিতে ব্রেক পাওয়ার পর জীবন বদলে গেল...
২০১২-তে প্রথম বাংলা ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ আসে। 'প্রলয়', 'হনুমান ডট কম'-এর মতো ছবিতে গান গাইলাম। তারপর ধীরে ধীরে বাইরে পারফর্ম করার সুযোগ এল, রিয়্যালিটি শোয়ে অংশ নিলাম। মুম্বইয়ের একটি রিয়্যালিটি শো 'বেঙ্গল বিগ গোল্ডেন ভয়েস'-এ আমি বিজয়ী হই। সেই সূত্রে শঙ্কর এহসান লয়ের সঙ্গে কাজের সুযোগ আসে। 'কাট্টি বাট্টি' প্রথম বলিউড ছবি, যেখানে আমি গান গাওয়ার প্রস্তাব পাই। একইসঙ্গে মুম্বইয়ে হিন্দি গান ও কলকাতায় বাংলা গান গেয়েছি। সেই সঙ্গে পড়াশোনাও করেছি। কয়েকমাস আগেই পিএইচডি সম্পূর্ণ করলাম।
এমন কোনও সুরকার আছেন যাঁর সঙ্গে কাজের জন্য বিশেষ অপেক্ষা?
শিল্পীরা গানের বিষয়ে ভীষণ লোভী। মনে হয়, যত ভাল গান আছে সব যেন গাওয়ার সুযোগ পাই। অনেক সুরকার আছেন যাঁদের সঙ্গে এখনও কাজ করা হয়নি তাঁদের সুরে আমি গান গাইতে চাই। এখনও পর্যন্ত অনেকের সঙ্গে কাজ করেছি, আর অনেকের সঙ্গে কাজ করা বাকি আছে। তাই নির্দিষ্ট একজন বা দুজনের নাম বলাটা একটু কঠিন।
এমন কোনও অভিনেত্রী যাঁর লিপে গান গাওয়ার ইচ্ছেপূরণ এখনও হয়নি...
কাজল, ঐশ্বর্য রাই বচ্চনের লিপে গান গাওয়ার ইচ্ছে আছে। ওঁরা আমাদের ছোটবেলার আবেগ-ড্রিম গার্ল। আসলে শিল্পীরা সবসময় ভাল কাজের খোঁজে থাকে। কখনও সন্তুষ্ট হয় না।
গান গাওয়ার ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তিহীনতা কখনও মনের জোর কমিয়ে দিয়েছে বা কোনও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে?
এটা আমাকে একজন পরিচালকও জিজ্ঞাসা করেছিলেন। উনি বলেছিলেন, যখন তুমি একজন নায়িকার জন্য গান গাও তাঁকে কী ভাবে ইমাজিন করো? আমি তখন বলেছিলাম, চার বছর বয়স থেকেই হলে গিয়ে সিনেমা দেখি। ওই যে সিনেমা দেখার অভ্যেস সেটা রয়ে গিয়েছে তাই ইমাজিনেশনে কোনও অসুবিধা হয় না। একজন প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবেও এক্সপ্রেশনে কোনও সমস্যা হয় না।
চোখের সমস্যা জন্মগত?
হ্যাঁ, জন্ম থেকেই আমার চোখের রেটিনার ইনারসেল কাজ করে না। কর্নিয়ার সমস্যা হলে চক্ষুদানের পর আমি আবার দেখতে পেতাম। আর এই সমস্যার সঙ্গে আমি জন্মের পর থেকেই পরিচিত। তাই এমনটা তো নয়, একটা সময় দেখতে পেতাম-এখন পাচ্ছি না। সেই জন্যই আমার গান গাওয়ার ক্ষেত্রে নায়িকার মুখ না দেখলে অসুবিধা হয় না। তাই 'অসুর' -এর 'তোর হয়ে যেতে চাই'-এর মতো গানে আবেগ দিয়ে গাইতে সমস্যা হয় না।