/indian-express-bangla/media/media_files/2025/06/10/hgmtz4fYudZsIVeOCOGc.jpg)
চলে গেলেন কিংবদন্তি
ইতালীয় কিংবদন্তি ডিজাইনার জর্জিও আরমানি, যিনি স্বল্প সৌন্দর্যের ধারণাকে (minimalist elegance) কোটি কোটি ডলারের সাম্রাজ্যে রূপান্তরিত করেছিলেন, আজ না ফেরার দেশে। বয়স হয়েছিল ৯১। তাঁর ফ্যাশন হাউস জানিয়েছে, আরমানি নিজ বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বিশ্ব ফ্যাশন জগতের অন্যতম সেরা নাম আরমানি সম্প্রতি ২০২৫ সালের জুনে বসন্ত-গ্রীষ্ম ২০২৬ পুরুষদের পোশাকের প্রিভিউ মিস করেছিলেন, কারণ তিনি একটি অজ্ঞাত অসুস্থতা থেকে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। মিলান ফ্যাশন উইকের চলতি আসরে তাঁর ৫০ বছরের ফ্যাশন হাউসের যাত্রা উদযাপনের একটি বিশাল আয়োজন করার পরিকল্পনা ছিল।
ফ্যাশন জগতে বিপ্লব
১৯৭০-এর দশকের শেষভাগে আনলাইনড জ্যাকেট, সাধারণ ট্রাউজার আর সিটি-ফ্রেন্ডলি কালার প্যালেট দিয়ে শুরু করে আরমানি তৈরি করেছিলেন এক নতুন স্টাইল। যা অর্ধ শতাব্দী ধরে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন দুনিয়ায় ইতালির রেডি-টু-ওয়্যার ফ্যাশনের পরিচয় বহন করছে। ব্যবসায়ী মহলের করিডর থেকে শুরু করে হলিউডের রেড কার্পেট পর্যন্ত, আরমানির সফট টেইলারিং আর নিরবচ্ছিন্ন সৌন্দর্যের পোশাকই ছিল ধনী ও সেলিব্রিটিদের প্রথম পছন্দ।
Ankush Hazra Exclusive: লাখ টাকার লক্ষীলাভে অর্থ সাহায্যের প্রস্তাব, অঙ্কুশ বললেন, 'ওটা আমার কষ্টের রোজগার, ইডি ডাকলেও'
সাম্রাজ্য আর সম্পদ
আরমানির গড়া ফ্যাশন সাম্রাজ্যের মূল্য আজ ১০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। শুধু পোশাক নয়, তিনি প্রসাধনী, সুগন্ধি, বই, গৃহসজ্জা, আনুষঙ্গিক সামগ্রী থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁ, বার, ক্লাব এমনকি বাস্কেটবল দল (EA7 এম্পোরিও আরমানি মিলান) পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দুবাই (২০০৯) আর মিলান (২০১০)-এ চালু করেন Armani Hotels।
স্টাইল ও দর্শন
নিজের সরল অথচ আধুনিক উপস্থিতিই ছিল তাঁর ব্র্যান্ডের প্রতীক—জিন্স, সাদা টি-শার্ট, ট্যান স্কিন, রূপালি চুল আর নীল চোখ। তিনি বলতেন, “আমি প্রকৃত মানুষের জন্য পোশাক ডিজাইন করি। যেটা ব্যবহারিক নয়, তার কোনো মূল্য নেই।”
জীবনপথ
১৯৩৪ সালের ১১ জুলাই ইতালির পিয়াসেনজায় জন্মগ্রহণ করেন আরমানি। প্রথমে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও মিলানের এক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে উইন্ডো ডেকোরেটর হিসেবে, কাজ করতে গিয়েই ফ্যাশন জগতের সঙ্গে পরিচয়। ১৯৭৫ সালে তাঁর সঙ্গী সার্জিও গ্যালিওটির সঙ্গে পুরুষদের পোশাকের লেবেল শুরু করেন। মহিলাদের লাইন আসে এক বছর পর। লাইনলেস জ্যাকেট ও টি-শার্ট-এর কম্বিনেশন আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়, যা একসময় অফিস ও রেড কার্পেট দুই জায়গাতেই আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়।
হলিউড কানেকশন
আরমানির জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয় ১৯৮০ সালের সিনেমা “আমেরিকান গিগোলো”-এর মাধ্যমে, যেখানে রিচার্ড গিয়ারের পোশাক ছিল আরমানির তৈরি। পরবর্তীতে তিনি ২০০টিরও বেশি ছবিতে পোশাক ডিজাইন করেন। অস্কারের লাল কার্পেটে তাঁর পোশাকের ঝলক ছিল নিয়মিত। শন পেন, অ্যান হ্যাথাওয়ে থেকে শুরু করে অসংখ্য তারকা আরমানির ডিজাইন বেছে নিয়েছিলেন।
আরমানির পাওয়ার স্যুট, অ্যান্ড্রোজিনাস স্টাইল আর নিখুঁত ডিটেইলিং বিশ্ব ফ্যাশনকে নতুন দিক দেখিয়েছে। তিনি কখনো নিজের সাম্রাজ্য বিক্রি বা একীভূত করেননি—“রে জর্জিও” সর্বদা ছিলেন নিজের বস।
ফ্যাশন দুনিয়ায় তিনি চিরকাল স্মরণীয় থাকবেন সরল সৌন্দর্যের রূপকার হিসেবে।