Bengali Television Non-Payment, Rana Sarkar, Swarup Biswas: বকেয়া টাকার ইস্যুতে প্রযোজক রানা সরকারের প্রতি কড়া মনোভাব প্রকাশ করলেন 'ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিসিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া', সংক্ষেপে ফেডারেশনের সভাপতি, স্বরূপ বিশ্বাস। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি জানালেন, রানা সরকার যদি খুব দ্রুত বকেয়া পেমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় নো অবজেকশন সার্টিফিকেট না দেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে বড়সড় পদক্ষেপ নিতে পারে ফেডারেশন।
গত ১৬ মার্চ হস্তান্তরিত হয় দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া-র চারটি ধারাবাহিক-- 'আমি সিরাজের বেগম', 'জয় বাবা লোকনাথ', 'মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য়' ও 'খনার বচন'। ওই চারটি ধারাবাহিকের ইউনিটেই দীর্ঘদিন ধরে পেমেন্টজনিত অসন্তোষ থাকায় স্টার জলসা, জি বাংলা ও কালারস বাংলা, তিনটি চ্য়ানেলই সংশ্লিষ্ট ধারাবাহিকগুলির প্রযোজনার দায়িত্ব তুলে দেয় নতুন প্রযোজকদের হাতে। আর গত ফেব্রুয়ারি মাসেই বন্ধ হয়ে যায় 'প্রথম প্রতিশ্রুতি'। মোট পাঁচটি ধারাবাহিকের বেশিরভাগ শিল্পী ও টেকনিসিয়ানদের পেমেন্ট বকেয়া রয়েছে। কারও ক্ষেত্রে কয়েক দিনের পেমেন্ট বাকি আবার কারও ক্ষেত্রে কয়েক মাসের পারিশ্রমিক বকেয়া রয়েছে।
আরও পড়ুন: পেমেন্ট নিয়ে অসন্তোষে ব্যাহত ‘দেবী চৌধুরাণী’-র শুটিং
ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস জানালেন, শিল্পী ও টেকনিসিয়ানদের পারিশ্রমিক বাবদ সব মিলিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকা বাকি। হস্তান্তরের মাসখানেক আগে থেকেই ফোন ধরতেন না প্রযোজক, এমনটাই অভিযোগ উঠেছিল। হস্তান্তরের সময় তাঁর দক্ষিণ কলকাতার অফিসে তালা পড়ে যাওয়ায় আরও দিশেহারা অবস্থা হয় শিল্পী-টেকনিসিয়ানদের। আড়াই মাস পরে এখনও প্রযোজক রানা সরকারকে অধরা বলা যায় কারণ শুধুমাত্র ইমেল মারফতই তিনি যোগাযোগ করছেন, প্রকাশ্যে আসছেন না। অর্থাৎ বলা যায়, বিগত প্রায় চার মাস ধরে প্রাপ্য় পারিশ্রমিকের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন শিল্পী-টেকনিসিয়ানরা।
''রানা সরকার ইচ্ছে করে ডিলে করছেন এনওসি দিতে। ওই এনওসি এসে গেলেই চ্যানেল সমস্ত টাকা পেমেন্ট করে দেবে শিল্পী-টেকনিসিয়ানদের। কিন্তু রানা সরকার এখনও দেরি করে চলেছেন। কোন কোন টেকনিসিয়ানের কত টাকা বাকি, তার বিশদ তালিকা আমরা ইতিমধ্য়েই ফেডারেশনের পক্ষ থেকে রানা সরকারকে পাঠিয়ে দিয়েছি'', ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানালেন স্বরূপ বিশ্বাস।
আরও পড়ুন: এগিয়ে ‘লোকনাথ’, পিছিয়ে ‘রাসমণি’! রইল এই সপ্তাহের সেরা দশ তালিকা
ফেডারেশন সভাপতির বক্তব্য, শিল্পী ও টেকনিসিয়ানরা তাঁদের প্রাপ্য পারিশ্রমিকের টাকার জন্য় অনন্তকাল অপেক্ষা করতে পারেন না। তাই যদি দ্রুত এই বিষয়ের নিষ্পত্তি না হয়, তবে ফেডারেশন কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে রানা সরকারের বিরুদ্ধে। ঠিক কী পদক্ষেপ, সেই বিষয়ে আলোচনার জন্য আগামী ২৩ মে একটি একস্ট্রাঅর্ডিনারি জেনারেল মিটিং ডেকেছে ফেডারেশন। ওই মিটিংয়ে অংশ নেবেন প্রায় ৮০০০ টেকনিসিয়ান ও ৩০০০ শিল্পী, এমনটাই জানালেন ফেডারেশন সভাপতি।
অর্থাৎ পেমেন্ট সংক্রান্ত অচলাবস্থা কাটতে অন্ততপক্ষে আরও ২২-২৩ দিন অপেক্ষা করতে হবে শিল্পী ও টেকনিসিয়ানদের। ইতিমধ্য়েই আর্টিস্টস ফোরামের কার্যনির্বাহী সভাপতি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে টেকনিসিয়ানদের পেমেন্ট না হল, শিল্পীরা তাঁদের পেমেন্ট নেবেন না। ফোরাম সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকজন শিল্পীর প্রাপ্য টাকার পরিমাণ, পূর্বনির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি উল্লেখ করা হয়েছে তালিকায়, এমন অভিযোগ করেছেন রানা সরকার তাই শিল্পীদের বকেয়া টাকার তালিকাটি পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: টেকনিসিয়ানদের পাশে দাঁড়াল ফোরাম, বকেয়া টাকার ইস্যুতে কড়া সিদ্ধান্ত
এই গোটা প্রক্রিয়াটি যদি রানা সরকার নিজে এসে, ফোরাম ও ফেডারেশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে নিষ্পত্তি করে নিতেন, তবে অনেক দ্রুত সমাধান হতো। কিন্তু তিনি পুরোটাই ইমেলের মাধ্য়মে করছেন এবং তাতে সময় অনেক বেশি লাগছে। কেন তিনি কিছুতেই প্রকাশ্যে আসছেন না, তার কোনও সদুত্তর নেই। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে দূরভাষে এবং টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে কিন্তু তিনি কোনও উত্তর দেননি।
একই অভিযোগ ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসেরও। ''আমরা বার বার রানা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। আপনাদের মাধ্য়মেই তাঁকে আবারও জানাতে চাই যে তিনি যেন অবিলম্বে এনওসি দিয়ে দেন। একজন প্রযোজক এত টাকা বাকি রেখে বসে আছেন। এখানে কতজন দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন। তাঁরা অত্যন্ত বিপদের মধ্যে রয়েছেন। এভাবে তো দীর্ঘদিন চলতে পারে না। যদি দ্রুত এনওসি না আসে, এবার কড়া পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করতে বাধ্য় হব আমরা'', জানালেন স্বরূপ বিশ্বাস।