রবিবার দক্ষিণ কলকাতায় ‘ফেমিনিস্ট ইন রেসিস্ট্যান্স’ গ্রুপের সদস্যরা সিএএ-র বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল করছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল সচেতনতা বৃদ্ধি করা। সেই মিছিলেই পরিচালক তথা অ্যাক্টিভিস্ট দেবলীনা মজুমদারের উপর হামলার অভিযোগ আসে।
ঘটনা প্রসঙ্গে দেবলীনা বলেন, "প্যামফ্লেট নিয়ে আমরা জনা পঁচিশ লোক ছিলাম। দেওয়ালে ছোট ছোট সিনেমা দেখাচ্ছিলাম, সিএএ এবং এনআরসি-র অর্থ বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম।" রাত ৯.৪৫ নাগাদ মিছিল শেষ হয়ে যাওয়ার পর গ্রুপের সদস্যরা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েন, এবং দেবলীনা ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু বাঘাযতীনের কাছে চায়ের দোকানে ছিলেন।
দেবলীনার কথা অনুযায়ী, "হঠাৎ দেখি বেশ কিছু লোক আমাদের এক বন্ধু কৌস্তুভ দাশগুপ্তর উপর হামলা করেছে। উনি একটি কলেজে পড়ান। আমি ছুটে যাই, কিন্তু লোকগুলো আমাদের দুজনকেই মারতে শুরু করে। আমার সঙ্গে ক্যামেরা ছিল, তারা সেটাও ভাঙার চেষ্টা করে। বলতে থাকে, কোনওভাবেই এই জায়গায় এই ধরনের কাজ তারা সমর্থন করবে না। তারা বলে, আমরা অ্যান্টি-হিন্দু, অ্যান্টি-ইন্ডিয়া।"
আরও পড়ুন, জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসব, ‘এক যে ছিল রাজা’-র জন্য পুরস্কার নিলেন সৃজিত
পরিচালক হিসেবে যথেষ্ট খ্যতনামা দেবলীনা। তাঁর বানানো তথ্যচিত্র এবং ফিচার ফিল্ম নামজাদা আন্তর্জাতিক ফিল্মোৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। সম্প্রতি বার্লিন ফিল্মোৎসবেও প্রদর্শিত হয় দেবলীনার ছবি।
অপ্রত্যাশিত হামলার পরে এখনও কার্যত স্তম্ভিত হয়ে রয়েছেন দেবলীনা। তিনি জানিয়েছেন, আক্রমণকারীদের "স্পর্ধা" তাঁকে "বাকরুদ্ধ" করেছে। তাঁর কথায়, "আমি কল্পনাও করতে পারি না, কলকাতার বুকে কেউ ধর্মের নামে আমাকে আক্রমণ করতে পারে।"
‘ফেমিনিস্ট ইন রেসিস্ট্যান্স’ গ্রুপের আরেক সদস্য ঝিলম রায় জানিয়েছেন, হামলাকারীরা নিজেদের সঙ্গে লাঠি এনেছিল। "ওরা আমাদের নিগ্রহ করেছে, গালাগালি দিয়েছে, শ্লীলতাহানি করেছে, আমাদের নাম ধরে হুমকি দিয়েছে যে আমরা এখানে ফিরে এলে আমাদের আরও কঠোর শিক্ষা দেবে," বলেন ঝিলম।
আরও পড়ুন, কলকাতায় দুষ্কৃতিদের হাতে আক্রান্ত পরিচালক দেবলীনা মজুমদার
তবে এই গ্রুপের সদস্যরা অভিযুক্ত হামলাকারীদের একজনকে ধরে যাদবপুর থানায় নিয়ে যান ও এফআইআর দায়ের করেন। হামলাকারীদের মধ্যে কয়েকজন তাদের বন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার দাবিতে থানা পর্যন্ত ধাওয়া করে। "পুলিশ কনস্টেবলরা থানার বাইরে কয়েকজন সন্দেহজনক লোককে দেখে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। আমরা বাইরে গিয়ে দেখেছিলাম, তাদের মধ্যে একজন আমাদের ওপর হামলা চলার সময়ও ছিল। তাকেও হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।"
অভিযুক্তদের ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১ (অন্যায়ভাবে প্রতিহত করা), ৩২৪ (ইচ্ছাকৃতভাবে বিপজ্জনক অস্ত্র দিয়ে আঘাত), ৩৫৪ (মহিলার শালীনতা খর্ব করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ বা বলপ্রয়োগ), ৫০৬ (অপরাধমূলক হুমকি), ৪২৭ (ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে অপকর্ম) এবং ৩৪ (সাধারণ অভিপ্রায়কে সামনে রেখে বিভিন্ন ব্যক্তির কার্যকলাপ) ধারায় এফআইআর করা হয়েছে।