Fathers, Bengali Cinema, Bengali Television: বাবার জন্য় আলাদা করে কোনও দিন হয় না। কিন্তু বিশেষ বিশেষ দিনে বাবাকে একটু বেশিই ভালবাসতে ইচ্ছে করে। বাবার জন্য বিশেষ কিছু করতে ইচ্ছা করে এবং সেই ইচ্ছার মধ্য়ে কোনও ট্রেন্ড নেই। ফাদার্স ডে-তে একবার ফিরে দেখা যাক মিলেনিয়াম-পরবর্তী সময়ে বাংলা পর্দার চিরস্মরণীয় কয়েকটি বাবার চরিত্রকে। শুধু বড়পর্দা ও ছোটপর্দা নয়, বাংলা বিনোদনের নতুন মাধ্যম ওয়েবেও সম্প্রতি এমন কিছু চরিত্র এসেছে যা দর্শকের মনে থেকে যাবে বহু বছর।
প্রথমে বড়পর্দা দিয়েই শুরু করা যাক। সেখানে প্রথমেই আসবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্য়ায় অভিনীত দু'টি ছবির কথা-- 'সাঁঝবাতির রূপকথারা' (২০০২) এবং 'ময়ূরাক্ষী' (২০১৭)। অঞ্জন দাস পরিচালিত প্রথম ছবিতে সাঁঝবাতির বাবা সৈকত চরিত্রটি ব্যক্তিগত পরিসরে অভিভাকত্বের সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে লার্জার দ্য়ান লাইফ হয়ে ওঠে। শিল্পী সৈকত যেন নব্বই দশকেরই প্রতীক যার প্রজ্ঞা, দর্শন, বিদ্রোহ চিরাচরিত ছাপ রেখে যাবে যুগান্তরের ওপারে। আবার সাম্প্রতিক 'ময়ূরাক্ষী'-তে সমসাময়িক পৃথিবীর পিতাপুত্রের সমীকরণই ছবির মূল বিষয়। আর এই দু'টি চরিত্রেই অনবদ্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্য়ায়।
'ময়ূরাক্ষী' ছবিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্য়ায় ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: বাবাকে শ্রদ্ধা, সম্মান ফিরিয়ে দিতে পেরেছিলেন অনিন্দ্য
কিন্তু মিলেনিয়াম-পরবর্তী সময়ে বাংলা ছবিতে সবচেয়ে স্মরণীয় এবং উল্লেখযোগ্য় কোনও বাবার চরিত্র যদি এসে থাকে তবে তা অবশ্য়ই চ্যাপলিন ছবির 'বংশী'। ছবির চিত্রনাট্য, বুনন উচ্চ প্রশংসাযোগ্য় না হলেও চরিত্রটি ছাপিয়ে গিয়েছে ওই ধরনের বহু চরিত্রকে এবং তা অবশ্যই রুদ্রনীল ঘোষের কৃতিত্বে। উচ্চবিত্ত, মধ্য়বিত্ত, উচ্চশিক্ষিত বাবাদের কথা অনেক বলা হয়েছে বাংলা ছবিতে। কিন্তু সমাজের প্রান্তবাসী এক বাবার প্রতিদিনের অসম্ভব জীবনসংগ্রামকে যেভাবে পর্দায় এঁকেছে চ্য়াপলিন তা অনবদ্য।
'কালপুরুষ' (২০০৫) ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তী, 'চলো পাল্টাই' (২০১১) ছবিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও 'সিনেমাওয়ালা' (২০১৬) ছবিতে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় বাংলা ছবির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন যেমন, তেমনই নিতান্ত সাধারণ, ভুলভ্রান্তিতে ভরা, খানিকটা খোরাক, 'হামি' (২০১৮) ছবির বাবাকে দর্শক মনে রাখবেন বহু বছর, যে চরিত্রে অনবদ্য় শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তেমন বাবারাই কিন্তু ছুটির দিনে মাসের সঞ্চয় থেকে গুনে গুনে টাকা বার করে বাড়ির সকলের জন্য় বাংলা ছবির টিকিট কাটেন, ফিরতি পথে আইসক্রিম, বেলুন অথবা ট্য়াক্সির আরামের বায়না সামলে।
'হামি' ছবিতে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্য়ায় ও গার্গী রায়চৌধুরী।
আরও পড়ুন: ফাদারস ডে: সোশাল অ্যাকাউন্টে পোস্ট টলি তারকাদের
নিতান্ত গেরস্থ সেই বাবাই আবার আগুন হয়ে জ্বলে উঠতে পারেন। বাংলা ওয়েব সিরিজগুলির মধ্যে আড্ডাটাইমস-এর 'ইন দেয়ার লাইফ' সিরিজটির কথা বলতেই হয় এই লেখা প্রসঙ্গে। বিনা অপরাধে মরে যাওয়া সন্তানের মৃত্য়ুর প্রতিশোধে কতটা মরিয়া হতে পারেন একজন বাবা-- সব্যসাচী চক্রবর্তী অভিনীত চরিত্রটি তার চিরস্মরণীয় উদাহরণ। তেমনই অসহায় অথচ বার বার জ্বলে ওঠা চরিত্রে অসাধারণ শাশ্বত চট্টোপাধ্য়ায় 'সেই যে হলুদ পাখি' ওয়েব সিরিজে।
ছবি যেমনই হোক না কেন, 'উমা'-র বাবা এবং 'পোস্ত'-র বাবা, দু'টি চরিত্রেই অসম্ভব সংবেদনশীলতায় দর্শকের মনে ছাপ ফেলে যান যিশু সেনগুপ্ত। তবে বড়পর্দার অনেক আগেই ছোটপর্দায় তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন 'অপরাজিত' ধারাবাহিকের সিঙ্গল পেরেন্টের চরিত্রে। বাংলা টেলিপর্দায় মিলেনিয়াম-পরবর্তী সময়ে অত্য়ন্ত উল্লেখযোগ্য এই ধারাবাহিক। তেমনই উল্লেখযোগ্য রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত, 'তুমি আসবে বলে'-র চরিত্রটি যা কিনা ছিল এক সৎবাবার চরিত্র, যাদের নিয়ে টেলিপর্দা কেন বাংলা ছবিতেও খুব কমই কাজ হয়েছে।
'চ্য়াপলিন' ছবিতে রুদ্রনীল ঘোষ।
এমন আরও অনেক চরিত্র, সিনেমা এবং টেলিপর্দার উল্লেখযোগ্য কাজের কথা হয়তো বাদ পড়ল এ লেখা থেকে এবং তা লেখাটিকে আরও দীর্ঘায়িত না করার কারণেই। কিন্তু বাংলা পর্দার এই চরিত্রগুলি বার বার উঁকি দিয়ে যাবে দর্শকের মনে এবং তা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই।