জনপ্রিয় সেলিব্রিটি শেফ ও ফুড নেটওয়ার্ক তারকা অ্যান বারেলকে, ১৭ জুন নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে নিজ বাসভবনে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছালেও তাকে আর বাঁচানো যায়নি। নিউ ইয়র্ক সিটির চিফ মেডিকেল এক্সামিনার অফিস থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, অ্যানের মৃত্যুর কারণ ছিল অ্যালকোহল ও প্রেসক্রিপশন ড্রাগের বিপজ্জনক সংমিশ্রণ।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অ্যানের শরীরে পাওয়া গিয়েছিল ডাইফেনহাইড্রামিন ও সেটিরিজিন (অ্যালার্জির ওষুধ), অ্যাম্ফেটামিন (সাধারণত ADHD চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়), এবং ইথানল (অ্যালকোহল)। যদিও প্রতিটি উপাদান এককভাবে নিরাপদ মাত্রায় গ্রহণযোগ্য, একসঙ্গে মিশে গেলে তা মারাত্মক হতে পারে। শেফ অ্যানের আকস্মিক মৃত্যু পুরো রন্ধনশিল্প ও ভক্তমহলে শোকের ছায়া ফেলেছে। আরও অবাক করা বিষয়, মৃত্যুর মাত্র পাঁচ দিন আগেই তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় হাস্যোজ্জ্বল ছবি পোস্ট করেছিলেন, যেখানে তাকে নিউ ইয়র্কের রাস্তায় হাঁটতে দেখা গেছে।
১৭ জুন অ্যানের বাড়ি থেকে জরুরি নম্বরে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দমকল বিভাগ। বাথরুমের মেঝেতে ‘অসহায়’ অবস্থায় তার দেহ পড়ে ছিল। প্যারামেডিকরা সিপিআর করার চেষ্টা করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে ঘটনাস্থলেই মৃত ঘোষণা করা হয়। অ্যানের মৃত্যু নিশ্চিত করে তার পরিবার এক বিবৃতিতে বলেন, "তিনি ছিলেন একজন প্রিয় স্ত্রী, কন্যা, বোন, সৎ মা এবং বন্ধু। তার উজ্জ্বল হাসি ও গভীর হৃদয় চিরকাল মনে থাকবে।"
অ্যান বারেলের জীবন ও ক্যারিয়ার
১৯৬৯ সালে নিউ ইয়র্কের কাজেনোভিয়া শহরে জন্মগ্রহণকারী অ্যান, ছোটবেলা থেকেই রান্নার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। মা’র রান্না দেখে অনুপ্রাণিত হতেন তিনি। এবং জুলিয়া চাইল্ডের প্রভাব তাকে শেফ হওয়ার পথে অনুপ্রেরণা যোগায়। ১৯৯৬ সালে তিনি কুলিনারি ইনস্টিটিউট অফ আমেরিকা থেকে স্নাতক হন এবং ইউরোপীয় রান্না শিখতে ইতালিতে চলে যান। তার পেশাগত যাত্রা শুরু হয় ‘আয়রন শেফ আমেরিকা’-তে সু-শেফ হিসেবে। কিন্তু সত্যিকারের জনপ্রিয়তা পান নিজের শো ‘সিক্রেটস অফ আ রেস্তোরাঁ শেফ’-এর মাধ্যমে। এছাড়া তিনি ‘চপড’, ‘কাটথ্রোট কিচেন’, ‘বিট ববি ফ্লে’-সহ আরও অনেক শো-তে অংশ নেন। তবে অ্যান বারেলের নাম সবচেয়ে বেশি পরিচিত ‘ওয়ারস্ট কুকস ইন আমেরিকা’ শো-এর জন্য, যেখানে তিনি ২৭টি সিজনে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি অদক্ষ রাঁধুনিদের রান্নায় পটু হতেই প্রাণবন্ত ভঙ্গিতে প্রশিক্ষণ দিতেন।
পারিবারিক জীবন ও উত্তরাধিকারঃ
অ্যানের স্বামী ছিলেন স্টুয়ার্ট ক্ল্যাক্সটন, ২০২১ সালে ইউনিভিশনের বিজ্ঞাপন নির্বাহী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার সৎ ছেলে জাভিয়ের, মা মার্লিন, ভাই বেন, এবং বোন জেন সহ আরও অনেক আত্মীয়-স্বজন তার শোকে মুহ্যমান। তার শেষ টিভি উপস্থিতি দেখা যাবে ২৮ জুলাই ফুড নেটওয়ার্কে "ওয়ারস্ট কুকস ইন আমেরিকা"–এর নতুন সিজনে, এবং পরদিন তা এইচবিও ম্যাক্স-এ স্ট্রিমিং হবে।