Uttam Kumar-Satyajit Ray: উত্তমকুমারের কাছে এক বিশেষ অনুরোধ করেন সত্যজিৎ রায়, দ্বিধা কাটাতে পেরেছিলেন 'নায়ক'?

দশ-বারো বছর পর, সত্যজিতের সুযোগ হয় উত্তমকুমারের সঙ্গে কাজ করার। ইতিমধ্যে উত্তম-সুচিত্রা জুটি হয়ে উঠেছে বাংলা রোম্যান্টিক ছবির অপরিহার্য অংশ।

দশ-বারো বছর পর, সত্যজিতের সুযোগ হয় উত্তমকুমারের সঙ্গে কাজ করার। ইতিমধ্যে উত্তম-সুচিত্রা জুটি হয়ে উঠেছে বাংলা রোম্যান্টিক ছবির অপরিহার্য অংশ।

author-image
IE Bangla Entertainment Desk
New Update
Uttam kumar death anniversary mahanayak praised by Satyajit ray

মহানায়ককে নিয়ে কী বলেছিলেন তিনি?

১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই, উত্তমকুমার প্রয়াণের দিন যেন গোটা বাংলার আকাশজুড়ে মেঘ করেছিল। সেদিন যেন সকলের চোখের জল বৃষ্টি হয়ে নেমেছিল। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে চলে গিয়েছিলেন তিনি। ঠিক তাঁর মৃত্যুর ২ দিন পর সত্যজিৎ রায় স্মৃতিচারণ করে এক পত্রিকায় বেশ কিছু কথা লিখেছিলেন। ‘নায়ক’ সিনেমার নির্মাতা জানিয়েছিলেন, কেন তিনি মহানায়ক।

Advertisment

সত্যজিৎ তাঁর লেখার মধ্যে দিয়েই প্রকাশ করেছিলেন, “উত্তমকুমারকে প্রথম যখন পর্দায় দেখি, তখন আমি নিজেই সিনেজগতে প্রবেশ করিনি। শুনেছিলাম, নতুন এক নায়কের আগমন ঘটেছে ইন্ডাস্ট্রিতে। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ দেখে এলাম। নির্মল দে-র ছবি মানেই চমৎকার পরিচালনা। ছবিটি দেখে ভালো লাগল, আর এরপর দেখে ফেললাম ‘বসু পরিবার’ ও ‘চাঁপাডাঙার বউ’। তিনটি ছবি দেখার পর মনে হলো- এই মানুষটার মধ্যে অভিনয় ও ব্যক্তিত্বে এক স্বতন্ত্র ছাপ রয়েছে। সেই সময়কার নামী অভিনেতাদের তুলনায় তাঁর অভিনয়ে এক নতুন ধরণের ছোঁয়া ছিল। মনে হলো, হয়তো হলিউডের ছবিও দেখে থাকেন। তাঁর চলন-বলনে থিয়েটারীয় ভঙ্গি নেই, বরং একধরনের সহজাত সাবলীলতা আছে। ক্যামেরার উপস্থিতি যেন তাঁর কাছে তুচ্ছ।

Uttam Kumar Death Anniversary: অসাড় হয়ে গিয়েছিল শরীর, উত্তমের মৃত্যুর খবর কানে পেতেই যা মনে হয়েছিল শর্মিলার..

Advertisment

‘নায়ক’—উত্তমকুমারকে ঘিরে জন্ম নেওয়া এক চিত্রনাট্য

দশ-বারো বছর পর, সত্যজিতের সুযোগ হয় উত্তমকুমারের সঙ্গে কাজ করার। ইতিমধ্যে উত্তম-সুচিত্রা জুটি হয়ে উঠেছে বাংলা রোম্যান্টিক ছবির অপরিহার্য অংশ। সেই সময়কার চলতে থাকা ধারার বাইরে গিয়ে ‘নায়ক’ ছবির ভাবনা শুরু করেন সত্যজিৎ, আর উত্তমকুমারকে মাথায় রেখেই লেখেন গল্পটি।

'নায়ক’ ছবির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এক মধ্যবিত্ত ঘরের অভিনয়প্রেমী যুবক, যিনি সিনেজগতে পা রেখেই ক্রমশ পৌঁছে যাচ্ছেন সাফল্যের শিখরে। এই সাফল্যের পেছনে থাকা টানাপোড়েন, মানসিক দ্বন্দ্ব, মূল্যবোধের পরিবর্তন- এসবই ছিল গল্পের বিষয়বস্তু। চিত্রনাট্য শুনে নাকি উত্তম বেজায় খুশি হন। গল্পের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কিছুটা মিল ছিল, যা হয়তো তাঁকে চরিত্রটির প্রতি আকর্ষন করেছিল। মিস্টার রায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, এ গল্প কোনও প্রচলিত প্রেমের ছবি নয়। প্রেম আছে, তবে তা প্রচ্ছন্ন। নায়কের চরিত্রে দোষ-গুণ উভয়ই রয়েছে।

Uttam Kumar: শুধু অভিনেতা-পরিচালক নয়, মহানায়ক উত্তম গানও গেয়েছেন এই…

সত্যজিৎ আরও জানান তিনি উত্তমকে বলেছিলেন, সাম্প্রতিক সময়ের পানবসন্তের দাগগুলি মেকআপ ছাড়া প্রকাশ পাবে ক্যামেরায়, আর তিনি এটাই চান। তাঁর মুখে সামান্য দ্বিধা দেখেছিলেন পরিচালক, কিন্তু মহানায়ক সহজেই তা কাটিয়ে উঠেছিলেন। এই মানসিক প্রস্তুতি আর পেশাদারিত্বই তাঁকে আলাদা করেছিল।

কিংবদন্তি বলেছিলেন, “উত্তমকুমারের সঙ্গে কাজ করে আমি তেমন তৃপ্তি পেয়েছিলাম, যা আমার ২৫ বছরের ফিল্ম কেরিয়ারে খুব বেশি সময় পাইনি। তিনি ছিলেন খাঁটি প্রফেশনাল। প্রতিদিনের সংলাপ মুখস্থ করে, পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে শ্যুটিংয়ে আসতেন। তাঁর অভিনয়ে সহজাত লাবণ্য ফুটে উঠত।”

 ছবি- পার্থ পাল 

‘নায়ক’–এর পর ‘চিড়িয়াখানা’

‘নায়ক’–এর সাফল্যের পর ‘চিড়িয়াখানা’-য় আবার একসঙ্গে কাজ করেন তাঁরা। সেই ছবিতে কোনও নায়িকা ছিল না। একটি গোয়েন্দা-কাহিনিনির্ভর ছবি। ফলে উত্তমকুমারের অভিনয়কে এখানেও এক ব্যতিক্রমী উচ্চতায় নিয়ে যেতে হয়েছিল, আর তাতেও তিনি ছিলেন সফল।

satyajit ray Uttam Kumar Entertainment News