চারিদিকে বোমা-সাইরেনের শব্দ। বাতাসে কাঁচা বারুদের গন্ধ। মুহূর্মুহূ রাশিয়ান মিসাইল থেকে বোমাবর্ষণ। ভীত-সন্ত্রস্ত ইউক্রেনবাসীরা প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছেন বাঙ্কারে। কেউ বা আবার হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন দেশরক্ষার স্বার্থে। শিক্ষাঙ্গন-অফিস থেকে ধর্মস্থান পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। মহিলাদের ভয়ঙ্কর অবস্থা কিয়েভে! এমতাবস্থাতেই কিয়েভ থেকে সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে প্রাণে বাঁচলেন প্রাক্তন মিস ইউক্রেন। কতটা দুঃসাহসিক ছিল সেই যাত্রা? গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরলেন সেই অভিজ্ঞতা।
ভেরোনিকা দিদুসেঙ্কো। ২০১৮ সালে মিস ইউক্রেনের মুকুট উঠেছিল তাঁর মাথায়। সেই তিনিই রুশ হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হলেন। ইউক্রেন থেকে বেরিয়েই শোনালেন সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। বললেন, যেদিন প্রথম রাশিয়া হামলা করল, সেদিন সারারাত দু' চোখের পাতা এক করতে পারিনি। প্রত্যেকটা মুহূর্তে বোমা-সাইরেনের শব্দ। পরিস্থিতি একসময়ে এরকম পর্যায়ে পৌঁছয় যে, একটা সময়ে বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি আমরা দু'জন। সেখানে অন্যান্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভীড়ে মিশে যাই। সীমান্ত অবধি পৌঁছতে হেন কোনও রাস্তা নেই যেখানে সাইরেনের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। অনবরত রকেট, বোম পড়েই চলেছে।
লস অ্যাঞ্জেলসে পৌঁছেই নারী দিবসে ওমেনস রাইট অ্যাটর্নি গ্লোরিয়া অলরেড আয়োজিত এক সাংবাদিক বৈঠকে যোগ দেন ভেরোনিকা। মাসখানেক আগেই গ্লোরিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব। সেখানেই ইউক্রেন থেকে বেরনোর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন তিনি। তবে লস অ্যাঞ্জেলসে পা দেওয়ার আগে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে মলডোভা এবং বেশ কয়েকটা ইউরোপিয়ান দেশে এযাবৎকাল ছেলেকে নিয়ে পরিযায়ীদের মতো দিন কাটিয়েছেন প্রাক্তন মিস ইউক্রেন। শেষমেশ জেনেভা, সুইৎজারল্যান্ডে পৌঁছন। সেখানেই ৭ বছরের সন্তানকে একা রেখে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছন শুধুমাত্র ওই সাংবাদিক বৈঠকে যোগ দিয়ে ইউক্রেনবাসীদের ভয়ঙ্কর অবস্থার কথা গোটা বিশ্বের কাছে জানাতে।
<আরও পড়ুন: গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি! লক্ষাধিক টাকা প্রতারণা বিতর্কে এবার মুখ খুললেন সোনাক্ষী সিনহা>
প্রাক্তন মিস ইউক্রেন ভেরোনিকা জানান, "এইমুহূর্তে লক্ষ লক্ষ ইউক্রেনের বাচ্চা ও তাঁদের মায়েরা বোমাবাজির শব্দে কাঁপছে। কেউ প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছেন সাবওয়ে স্টেশনগুলিতে আবার কেউ বা কোনও নিরাপদ বাঙ্কারে। আরও কষ্ট লাগছে এটা দেখে এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধ পরিস্থিতিতেই যেসব মহিলারা সন্তান প্রসব করছেন, তাঁদের দেখে।"
ভেরোনিকা এও জানান যে, আমেরিকার ভিসায় নিয়মনীতির কড়াকড়ির জন্য ৭ বছরের ছেলেকে আনতে পারেননি তিনি সঙ্গে করে। একাধিকবার সন্তানের ভিসা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। অতঃপর প্রাক্তন মিস ইউক্রেনের আর্জি আমেরিকা যেন এই পরিস্থিতিতে ভিসা পলিসিতে একটু ছাড় দিয়ে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ায়। যাতে ইউক্রেনবাসীরা এদেশে এসে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে পারে।
বক্তব্যের শেষে তিনি এও জানিয়ে দেন যে, "নিজেদের দেশ রক্ষার মতো সাহস ইউক্রেনবাসীদের রয়েছে। কিন্তু এভাবে অনবরত হামলা রোখা দরকার।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন