Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

Gumnami movie review: নেতাজীর অন্তর্ধান রহস্য, কিছু বাস্তব, কিছু স্বপ্ন

সত্যিই প্রশংসনীয় সৃজিত এবং তাঁর টিমের গবেষণা এবং হোমওয়ার্ক। অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন এই ছবি দেখে, শুনতে পাবেন মনোগ্রাহী কিছু পরিচিত গান, পাবেন আগাগোড়া ঝকঝকে উপস্থাপনা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
gumnami prosenjit

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

Gumnami movie cast: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, তনুশ্রী চক্রবর্তী

Advertisment

Gumnami movie director: সৃজিত মুখোপাধ্যায়

Gumnami movie rating: ৩/৫

প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো, এই ছবি নিয়ে এত তর্ক-বিতর্কের আদৌ কোনও প্রয়োজন ছিল না। যেখানে গোড়া থেকেই বলা হয়েছে যে ছবিটির অন্যতম প্রধান অনুপ্রেরণাই হলো দুই নেতাজী গবেষক অনুজ ধর এবং চন্দ্রচূড় ঘোষের লেখা বই ‘Conundrum: Subhas Bose’s Life after Death’, সেখানে যে নেতাজীর বিমান দুর্ঘটনায় রহস্যাবৃত মৃত্যুর বিপক্ষেই যুক্তি খাড়া করা হবে, তা বলা বাহুল্য।

হয়েছেও তাই। অনুজ এবং চন্দ্রচূড়ের ১৫ বছরের গবেষণালব্ধ বইয়ের দাবি, ১৯৪৫ সালের ১৮ অগাস্ট তাইপেই-এর (তৎকালীন ফরমোসা) তাইহোকু বিমানবন্দরের কাছে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান নি সুভাষচন্দ্র বোস। শুধু তাই নয়, সেদিন আদৌ কোনও বিমান ওড়েই নি, এবং নেতাজীরই নির্দেশে অতি সযত্নে বিমান দুর্ঘটনার কাহিনী সাজিয়েছিলেন জাপানি সেনাবাহিনীর শীর্ষ আধিকারিকরা। বাস্তবে নেতাজী মাঞ্চুরিয়া হয়ে প্রবেশ করেছিলেন রাশিয়ায়, সেখান থেকে শেষমেশ নেপাল হয়ে ফের পা রেখেছিলেন ভারতের মাটিতে।

ছবিটি দর্শক দেখেন মূলত চন্দ্রচূড়ের চোখ দিয়ে। ফলে নেতাজীর মৃত্যু রহস্য সংক্রান্ত তাঁর যুক্তি প্রাধান্য পায় আগাগোড়াই, যদিও ছবির গোড়াতেই স্পষ্ট করে দেওয়া হয় যে এই রহস্যের তিনটি সম্ভাব্য সমাধান রয়েছে।

আরও পড়ুন: সোনু নিগমের সঙ্গে ‘গুমনামি’ ছবিতে ফের জুটি বাঁধলেন সৃজিত

এখানে উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর নেতাজীর তথাকথিত অন্তর্ধানের বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকার সর্বমোট তিনটি কমিশন গঠন করেছে। ১৯৫৬ সালে গঠিত হয় শাহনওয়াজ কমিটি, যার নেতৃত্বে ছিলেন নেতাজীর এককালের সহযোদ্ধা তথা তৎকালীন সাংসদ শাহনওয়াজ খান। এই কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বিমান দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হয় সুভাষচন্দ্রের। কিন্তু সুভাষ বোস বেঁচে আছেন, এই গুজবের জেরে ১৯৭০ সালে ফের কমিশন গঠন করে কেন্দ্রীয় সরকার, নেতৃত্বে পঞ্জাব হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জি ডি খোসলা, যিনি চন্দ্রচূড়ের মতে পক্ষপাতদুষ্ট, কারণ তিনি দীর্ঘদিনের "নেতাজী-বিরোধী"। এই কমিশনও বিমান দুর্ঘটনার তত্ত্বকেই সমর্থন করে।

publive-image নেতাজীর লুকে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

এর পরেও ১৯৯৯ সালে ফের সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মনোজকুমার মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃতীয় একটি কমিশন গঠন করে ভারত সরকার। এই কমিশনের সামনে তথ্য পেশ করতে উপস্থিত হন চন্দ্রচূড় এবং তাঁর 'মিশন নেতাজী' সংগঠনের সদস্যরা, যাঁদের মধ্যে ছিলেন অনুজও। দীর্ঘ ছ'বছর তদন্তের পর ২০০৫ সালের ৮ নভেম্বর রিপোর্ট জমা দেয় মুখোপাধ্যায় কমিশন। এই রিপোর্টে বলা হয়, নেতাজী যে বিমান দুর্ঘটনাতেই নিহত হন, এ বিষয়ে অকাট্য প্রমাণ নেই, তবে তিনি যে ফৈজাবাদের গুমনামি বাবার ছদ্মবেশে ভারতে তাঁর বাকি জীবনের অধিকাংশ কাটান, সেই দাবির স্বপক্ষেও নিঃসন্দেহ হওয়া যায় না। অর্থাৎ, ধোঁয়াশা কাটল না।

এই রিপোর্ট ২০০৬ সালের ১৭ মে সংসদে পেশ করা হয়, কিন্তু তৎকালীন সরকার তা খারিজ করে দেয়। ফলে সরকারিভাবে এখনও বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর তত্ত্বই প্রতিষ্ঠিত। এই তত্ত্বেরই বিপরীতে হাঁটে অনুজ এবং চন্দ্রচূড়ের বই, এবং প্রকারান্তরে সৃজিতের ছবি, যেখানে আমরা দেখি, একটি অ্যাসাইনমেন্টের দৌলতে নেতাজীর অন্তর্ধান রহস্য কীভাবে আগাগোড়া ওলটপালট করে দেয় সাংবাদিক চন্দ্রচূড়ের জীবন এবং জীবনযাপন।

আরও পড়ুন: ‘গুমনামি’ কীভাবে নেতাজি মৃত্যু তত্ত্বগুলিকে ফের আলোচনায় নিয়ে এল?

সৃজিতের ছবিতে অভিনয়ের মান, বা শিল্পভাবনা, বা ডিটেলিং নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। ছবি মুক্তির আগে নেতাজীর ভূমিকায় প্রসেনজিতের 'লুক' নিয়ে কৌতূহল ছিল তুঙ্গস্পর্শী। সেই নিরিখে নিরাশ হবেন না দর্শক, সত্যিই আশ্চর্যরকম মানিয়েছে তাঁকে, সঙ্গে রয়েছে অত্যন্ত স্বচ্ছন্দ অভিনয় এবং শরীরী ভাষা।

একইরকম প্রভাব ফেলেন অনির্বাণও, যিনি এ ছবির সিংহভাগ জুড়ে রয়েছেন। কারণ ছবির আপাত লক্ষ্য যদিও নিরপেক্ষভাবে মুখোপাধ্যায় কমিশনের তদন্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা, বাস্তবে তা বহুলাংশেই হয়ে দাঁড়ায় চন্দ্রচূড়ের গবেষণা তথা সংগ্রামের কাহিনী। ইতিহাস-মনস্ক দর্শক যদি কমিশনের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে আরও একটু গভীর রেখাপাত আশা করেন, তবে হতাশই হবেন।

gumnami গুমনামী-র লুকে ইন্ডাস্ট্রি।

আরও পড়ুন: প্রশ্ন করলে কি ‘স্বার্থে ঘা’ লাগে, জানতে চাইলেন সৃজিত

বাস্তবিক, গভীরতার অভাব অনুভূত হয় আরও বেশ কিছু জায়গায়, এবং শেষ পর্যন্ত মনে হয়, সৃজিত হয়তো ক্যানভাসটা একটু বেশি বড় করে ফেলেছেন, যার ফলে তদন্ত প্রক্রিয়ার গভীরে যাওয়ার সুযোগ ঘটে নি এই ছবির। আমরা যা শুনতে পাই, তা হলো মোটের ওপর চন্দ্রচূড়ের মুখের কথা, তাঁর বা কমিশনের কার্যকলাপের বিবরণ দেখতে পাই না। এছাড়াও ছবির শেষের দিকটা যেন একটু তড়িঘড়ি এগোয়, ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত দানা বাঁধার সময় পায় না।

তবে সাদা-কালো এবং রঙিন ফ্ল্যাশব্যাকে নেতাজী এবং গুমনামি বাবার প্রায় 'থ্রিলার' আঙ্গিকে উপস্থাপিত জীবনচরিত যথেষ্ট উপভোগ্য, এবং প্রশংসনীয় সৃজিত এবং তাঁর টিমের গবেষণা এবং হোমওয়ার্ক। অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন এই ছবি দেখে, শুনতে পাবেন মনোগ্রাহী কিছু পরিচিত গান, পাবেন আগাগোড়া ঝকঝকে উপস্থাপনা। কিছু দৃশ্যের পরিকল্পনা সত্যিই ব্যতিক্রমী, যেমন চন্দ্রচূড়ের সঙ্গে গুমনামি বাবার নৈশ কথোপকথন।

আরও পড়ুন, ‘আরাধনা’য় শর্মিলা না হয়ে সুচিত্রাও হতে পারতেন ‘সপনো কি রানী’!

সব মিলিয়ে পুজোয় দেখে ফেলুন 'গুমনামি'। আর কিছু না হোক, বাঙালিকে দীর্ঘদিন ধরে পীড়া দিচ্ছে যে রহস্য, তা সমাধানের লক্ষ্যেই।

prosenjit chatterjee netaji Srijit Mukherji
Advertisment