Bollywood: 'ওরাও গোপনে দেখত', দানব তৈরি করতেন এই ফিল্মি পরিবার? আঁতকে ওঠার মতো ঘটনায়...

১৯৮৪ সালের ছবি 'পুরানা মন্দির' মূলধারার বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ছবিটি আড়াই কোটির ব্যবসা করে এবং কাপুর পরিবারের মতো বলিউডের বড় প্রযোজক পরিবারগুলির নজর কাড়ে।

১৯৮৪ সালের ছবি 'পুরানা মন্দির' মূলধারার বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ছবিটি আড়াই কোটির ব্যবসা করে এবং কাপুর পরিবারের মতো বলিউডের বড় প্রযোজক পরিবারগুলির নজর কাড়ে।

author-image
IE Bangla Entertainment Desk
New Update
bolly

কারা এরা, যাদের হাত ধরে ভয়ে কাঁপতে শুরু করেছিল...

১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর বর্তমান পাকিস্তান থেকে, বহু পরিবার কলকাতা ও মুম্বাইয়ে পাড়ি জমায়। তাঁদের কেউ কেউ সিনেমা স্টুডিও স্থাপন করেন। সেই তালিকায় আনন্দ এবং কাপুর পরিবার যেমন ছিল, তেমনই ছিল সিন্ধ প্রদেশের রায়হানিয়া পরিবারও। তবে হিন্দি ছবির ইতিহাসে এই পরিবারকে প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়। কাপুররা যেখানে বড় বাজেটের ছবিতে, তারকা ভরসা করে কাজ করতেন, রায়হানিয়ারা সেখানে একেবারে ভিন্ন পথে হাঁটতেন। ছোট বাজেট, অল্পকিছু ক্রু আর গ্রামীণ দর্শকদের জন্য ভয়-জাগানো ভৌতিক ছবি তৈরি করে। এঁরাই পরবর্তীতে পরিচিত হন রামসে ব্রাদার্স নামে। 

Advertisment

গবেষক কার্তিক নায়ারের মতে, পরিবারের কর্তা এফ. ইউ. রায়হানিয়া নিজের নাম পাল্টে ব্রিটিশ-বান্ধব 'রামসে' রাখেন, কারণ শাসকদের তাঁদের আসল নাম উচ্চারণে অসুবিধা হত। দেশভাগের আগে এই পরিবার করাচিতে ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসা করত, কিন্তু দেশভাগের পর সব হারিয়ে মুম্বাই চলে আসেন। সেখানেই সাত ভাই- শ্যাম, তুলসী, কিরণ, গাঙ্গু, কেশু, অর্জুন ও কুমার- নতুন করে ব্যবসা শুরু করলেও খুব একটা সাফল্য পাননি। 

তখন এফ. ইউ. রামসে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় হাত দেন। প্রথম কয়েকটি ছবি ব্যর্থ হলেও ১৯৭০ সালে তিনি বানালেন এক 'নানহি মুন্নি লড়কি থি'। এতে অভিনয় করেছিলেন মমতাজ, শত্রুঘ্ন সিনহা এবং পৃথ্বীরাজ কাপুর। ছবিটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। কিন্তু এক বিশেষ অভিজ্ঞতা পরিবারকে নতুন দিশা দেখায়। তুলসী রামসের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ছবির একটি ডাকাতির দৃশ্যে, পৃথ্বীরাজ কাপুরের প্রবেশে দর্শকরা ভয়ে চমকে উঠেছিল। তখনই তাঁদের মাথায় আসে পূর্ণদৈর্ঘ্য ভৌতিক সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা।  

Advertisment

ধর্ম পাল্টে বিয়ে করেন, অবৈধ সন্তান-ও ছিল? নায়িকার শেষ পরিণতি এত সাংঘাতিক যে শিউরে উঠবে গা..

এই ভাবনা তাঁদের ভাগ্য বদলে দেয়। অল্প বাজেটে, আত্মীয়স্বজন আর বন্ধুবান্ধব মিলে, মুম্বাইয়ের শহরতলিতে ভাড়া করা জরাজীর্ণ প্রাসাদে তাঁরা শুরু করেন নিজেদের ভৌতিক সিনেমা নির্মাণ। অনেক সময় হলিউডের ড্রাকুলা বা দ্য মামি-র অনুকরণে হতো সেসব ছবি, কিন্তু ভৌতিক মেকআপ আর চমকপ্রদ দৃশ্যে ভর করে ছবিগুলো গ্রাম ও ছোট শহরে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। তাঁদের প্রথম বড় সাফল্য আসে 'দো গজ জমিন কে নীচে' ছবির মাধ্যমে, যা মাত্র ৩.৫ লক্ষ টাকায় তৈরি হলেও, ৪৫ লক্ষ টাকার ব্যবসা করে। এরপর একের পর এক ভৌতিক ছবি বানিয়ে তাঁরা দর্শকদের মুগ্ধ করেন।  

তাঁদের ১৯৮৪ সালের ছবি 'পুরানা মন্দির' মূলধারার বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ছবিটি আড়াই কোটির ব্যবসা করে এবং কাপুর পরিবারের মতো বলিউডের বড় প্রযোজক পরিবারগুলির নজর কাড়ে। তুলসী রামসে পরে জানান, “ওরা আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করত, ভাবত আমরা ভাইয়েরা কী করছি! কিন্তু ওরাই আবার আমাদের ছবি গোপনে দেখত।”

রামসে ব্রাদার্সের কাজের ধারা ছিল ভিন্ন। সাত ভাই একসঙ্গে থাকতেন, রাতে আড্ডায় ভূতের গল্প বলতেন, বাজি ধরতেন কে সবচেয়ে ভয়ানক গল্প বলতে পারে। তাঁদের কাছে তারকা অভিনেতা না থাকলেও, তাঁরা বিশ্বাস করতেন তাঁদের বানানো দানব চরিত্রই আসল তারকা। তুলসীর ভাষায়- “আমার রাজেশ খান্না ছিল, আমার শাহরুখ খান ছিল- ওরা আমার তৈরি দানব।” ছোট শহরের দর্শক তাঁদের ছবির সঙ্গে বেশি সংযোগ অনুভব করত। শ্যাম রামসে বলেছিলেন, “শহুরে বাস্তবতার বাইরে গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে ভয়ের আবহ অনেক সহজে তৈরি করা যেত, আর মানুষও সহজে তা বিশ্বাস করত।”

তবে নব্বই দশকের পর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। দর্শকদের রুচি পাল্টায়, আর ভাইদের মধ্যে একতা কমতে থাকে। চলচ্চিত্র সমালোচক খালিদ মোহাম্মদ মন্তব্য করেছিলেন, "রামসেদের ছবির পতন দর্শক কমে যাওয়ার কারণে হয়নি, বরং ভাইয়েরা আর একসঙ্গে কাজ করতে পারেনি বলেই হয়েছিল।" পরবর্তীতে অর্জুন রামসের ছেলে দীপক ছোট পর্দায় জি হরর শো বানিয়ে কিছুটা জনপ্রিয়তা পান। কিন্তু ২০০০-এর দশকে মাল্টিপ্লেক্স সংস্কৃতির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে রামসে ব্রাদার্সের ভৌতিক সিনেমার অধ্যায়ও কার্যত শেষ হয়ে যায়।

bollywood Entertainment News Today Entertainment News