/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/03/sayeeda-khan-1-2025-09-03-18-44-35.jpg)
যা হয়েছিল অভিনেত্রীর সঙ্গে...
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বাইরে থেকে যতই ঝলমলে দেখাক, এর আড়ালে অনেক শিল্পীর জীবনে লুকিয়ে থাকে দুঃখ ও বেদনাময় গল্প। অভিনেত্রী সাঈদা খান ছিলেন এমনই একজন, যিনি শৈশবেই অভিনয়ের জগতে প্রবেশ করেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত এক মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হন তিনি।
সাঈদার জন্ম কলকাতায়, আনোয়ারী বেগমের ঘরে। আনোয়ারী সিনেমায় নৃত্যশিল্পী হিসেবে কাজ করতেন। সংসার চালাতে যথেষ্ট উপার্জন করলেও পরিবারের আর্থিক অবস্থা কখনও স্বচ্ছল ছিল না। সেই কারণেই মাত্র ১১ বছর বয়সে সাঈদা চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। এক পার্টিতে পরিচালক এইচ.এস. রাওয়াইল তাকে দেখে নেন এবং ১৯৬১ সালে 'কাঁচ কি গুড়িয়া' ছবিতে মনোজ কুমারের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ দেন। এরপর কিশোর কুমারের সঙ্গে 'আপনা হাত জগন্নাথ' ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি। সাফল্যের আশায় এগোলেও, প্রত্যাশামতো সুযোগ আসেনি। ধীরে ধীরে প্রধান চরিত্রের পরিবর্তে তাকে সহায়ক চরিত্রে দেখা যেতে থাকে। ষাটের দশকের শেষের দিকে সেসবও কমতে শুরু করে।
Hooliganism-Rudranil Ghosh Exclusive: তিন ঘোষের 'হুলিগানিজমে' রুদ্র রোষে অনির্বাণ!
এই সময়ে তার সঙ্গে পরিচয় হয় চলচ্চিত্র প্রযোজক ব্রিজ সাদানাহর। ব্রিজ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং সাঈদা তা গ্রহণ করেন। ধর্ম পরিবর্তন করে তিনি “সুধা সাদানাহ” নাম গ্রহণ করেন। কিন্তু অতীত যেন তার পিছু ছাড়েনি। ব্রিজ মনে করতেন, বিয়ের আগে সাঈদার একটি সন্তান ছিল এবং সেই শিশু নাকি সাঈদার মা আনোয়ারীর কাছে বড় হচ্ছিল। এই সন্দেহ ব্রিজের মনে ক্রমশ ক্ষোভ তৈরি করে।
চিত্রনাট্যকার শাগুফতা রফিক, যিনি পরে আশিকী ২ ও মার্ডার ২–এর মতো হিট ছবির গল্প লিখেছেন, বড় হয়েছিলেন আনোয়ারী বেগমের কাছেই। বহু মানুষ তাকে বলতেন, যে তিনি সাঈদার অবৈধ সন্তান, আর আনোয়ারী তাকে লালন করেছেন মেয়ের সম্মান রক্ষার্থে। শাগুফতা নিজেও বলেছিলেন, যে তার চেহারা ও কণ্ঠস্বর অনেকটা সাঈদার মতো। ব্রিজ, শাগুফতার প্রতি এতটাই বিরক্ত ছিলেন এবং মনে করতেন এই জটিল সম্পর্কই তার দাম্পত্য জীবনে অশান্তি ডেকে এনেছিল।
Gauahar Khan: কোল আলো করে এল সন্তান, আবার মা হলেন গওহর
ব্রিজ ও সুধার সংসারে জন্ম নেয় দুই সন্তান- নম্রতা ও কামাল। কিন্তু পরিবারের সুখ বেশিদিন টিকল না। কামালের ২০তম জন্মদিনেই ঘটে ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডি। সেদিন মদ্যপ অবস্থায় ব্রিজ প্রচণ্ড রাগের মাথায় স্ত্রী সুধা, মেয়ে নম্রতা ও ছেলে কামালকে গুলি করেন এবং পরে নিজেও আত্মঘাতী হন। গুরুতর আহত অবস্থায়ও কোনোমতে বেঁচে যান কামাল। পরে তিনি জানান, "আমি রক্তাক্ত অবস্থায় মা আর বোনকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। তখনও বুঝিনি যে আমিও গুলিবিদ্ধ হয়েছি।"
শাগুফতা সেই রাতের স্মৃতিচারণা করে বলেছিলেন- "হাসপাতালে আসার সময় সাঈদার কোল রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। তিনি আমার কাছে বোনের মতো ছিলেন। ছোটবেলায় মা আনোয়ারী একবার বলেছিলেন, কেউ যদি জিজ্ঞেস করে সাঈদা কি তোমার মা, তবে হ্যাঁ বলো। সেই কথাগুলো মনে পড়লেই টুকরো টুকরো স্মৃতিগুলো একসঙ্গে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করি।”
পরিবারের এই করুণ পরিণতির কয়েক বছর পর কামাল সিনে-দুনিয়ায় পা রাখেন, তবে দীর্ঘস্থায়ী ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেননি। সাঈদা খানের জীবন শুরু হয়েছিল স্বপ্ন নিয়ে, কিন্তু শেষ হয়েছিল এক ভয়াবহ অধ্যায়ের মাধ্যমে। তাঁর গল্প বলিউডের উজ্জ্বল দুনিয়ার আড়ালে লুকিয়ে থাকা কঠিন বাস্তবতারই সাক্ষ্য বহন করে।