Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

সত্যজিতের জীবনে ইন্দিরা গান্ধী ও মারির ভূমিকা ঠিক কী?

Satyajit Ray: ২৩ এপ্রিল সত্য়জিৎ রায়ের মৃত্যুদিন। এই দিনে ফিরে দেখা এমন দুই নারীকে যাঁরা আজীবন সত্যজিতের গুণমুগ্ধ ছিলেন এবং চলচ্চিত্র জগতে তাঁর পথচলায় বরাবর পাশে থেকেছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Indira Gandhi with Satyajit Ray

সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধি। ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আর্কাইভ থেকে

Satyajit Ray, Indira Gandhi and Maire Seton: সত্যজিৎ রায় এমন একজন ব্য়ক্তিত্ব যিনি শুধুমাত্র যে এদেশের পরিচালক-অভিনেতাদের অনুপ্রাণিত করেছেন তা নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীরা এই কিংবদন্তি পরিচালকের দ্বারা প্রভাবিত। আজ ২৩ মে, সত্যজিৎ রায়ের ২৭তম মৃত্য়ুবার্ষিকীতে ফিরে দেখা যাক তেমন দুই নারীকে যাঁরা এই বিরল প্রতিভার অনুরাগী ছিলেন এবং আজীবন তাঁর পাশে থেকেছেন-- ইন্দিরা গান্ধী ও মারি সিটন।

Advertisment

স্বাধীনতার পরে যখন দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার সময়, তখন চলচ্চিত্র পরিচালকদের পৃষ্ঠপোষক হয়েছিলেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ও ইন্দিরা গান্ধী। দুজনেই ছিলেন চলচ্চিত্রমোদী এবং ভারতীয় পরিচালকদের বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে প্রভূত উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাঁরা। ব্রিটিশ চলচ্চিত্র পরামর্শদাতা মারি সিটন ছিলেন নেহেরুদের পারিবারিক বন্ধু। রুশ কিংবদন্তি পরিচালক সের্গেই আইজেনস্টাইনের জীবনী লেখার পরেই নেহেরু পরিবারের আমন্ত্রণে তিনি ভারতে আসেন। সিটনের সহায়তায় সরকারী চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রচারই ছিল তাঁকে এদেশে আমন্ত্রণ জানানোর মূল উদ্দেশ্য়।

আরও পড়ুন: গানের সর্বনাশ হয়ে গেছে, বলেছিলেন অমর পাল

অনেকেই হয়তো জানেন না, ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বের দরবারে ভারতীয় শিল্পকলাকে তুলে ধরতে অত্য়ন্ত উৎসাহী ছিলেন। তাঁর উদ্য়োগে এবং তাঁর পারিবারিক বন্ধু, ইন্দো-ফরাসী পরিচালক জাহাঙ্গির ভোয়ানগারি-র সহায়তায় এদেশে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনা হয়, ফিল্মস ডিভিশন-এর তত্ত্বাবধানে। এবছর সেই উৎসবের ৬৭তম বর্ষ। পঞ্চাশের দশকে ইন্দিরা দেশের চলচ্চিত্র প্রতিভাদের খুঁজে বার করতে অত্যন্ত সচেষ্ট ছিলেন। ১৯৫৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'পথের পাঁচালী'-র সূত্র ধরেই সত্যজিৎ রায় ও তাঁর প্রতিভা সম্পর্কে অবহিত হন ইন্দিরা। মারি সিটন-ও ভূয়সী প্রশংসা করেন ছবির। ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে নব্য়বাস্তবতা বা নিও-রিয়্যালিজমের সূত্রপাত করেছে 'পথের পাঁচালী', নেহেরু পরিবারকে ছবি সম্পর্কে এমনটাই জানিয়েছিলেন সিটন।

পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু সেই সময়ে শুধুমাত্র রাজনীতির আঙিনায় শেষ কথা ছিলেন তা নয়, চলচ্চিত্র-শিল্পকলার ক্ষেত্রেও তাঁর মতামত ও নির্ঘোষই চূড়ান্ত ছিল। 'পথের পাঁচালী' যেমন ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছিল, তেমনই সেই সময় এক শ্রেণির সমালোচক ছবিটি নিয়ে কিছু বিরূপ মন্তব্য় করেন। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন ফেলেছিল এই কথাটি-- ''সত্যজিৎ রায় বিদেশে ভারতের দারিদ্র্য়কে বিক্রি করছেন।'' এই তীব্র সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়ে নেহেরু বলেছিলেন, ''যদি কোনও পরিচালক এত সহমর্মিতার সঙ্গে দারিদ্র্যকে চিত্রায়িত করেন, তবে তাঁর কাজে আমার সম্পূর্ণ মত রয়েছে।''

Satyajit Ray and Sharmila Tagore সত্যজিৎ রায় ও শর্মিলা ঠাকুর। ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আর্কাইভ থেকে

সত্যজিতের সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধী ও মারি সিটনের সুসম্পর্কের সেইখানেই ইতি নয়। মারি সিটন 'পথের পাঁচালী'-র প্রসঙ্গে জানার পরে কলকাতায় আসেন এবং কলকাতা ফিল্ম সোসাইটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে উদ্যোগী হন। ওই সোসাইটি ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও, পঞ্চাশের দশকের শুরুতে এই সোসাইটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বেশিরভাগ সদস্য়ই তখন নিজের নিজের ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। মারি সিটন দীর্ঘ সময় কলকাতায় থাকেন এবং ১৯৭১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা সত্যজিতের জীবনীগ্রন্থ-- 'পোর্ট্রেট অফ আ ডিরেক্টর- সত্যজিৎ রে'। সত্যজিতের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ বন্ধুত্বের সুবাদেই তিনি আজীবন এদেশকে ভালবেসেছেন। ১৯৮৪ সালে তাঁকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করা হয়।

ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গেও সত্য়জিৎ রায়ের সম্পর্ক ছিল ভারি সুন্দর। তিনি সত্যজিতের ছবির একজন মুগ্ধ দর্শক ছিলেন তো বটেই পাশাপাশি কাজের ক্ষেত্রে পরিচালকের যাবতীয় সমস্যাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখতেন। ষাট ও সত্তরের দশকে ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন বরাবর সত্যজিতের পাশে থেকেছেন ইন্দিরা। এমনকী প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসার আগে, ১৯৫৯ সালে যখন 'ফিল্ম সোসাইটিজ অফ ইন্ডিয়া' তৈরি হচ্ছে, যখন তাঁকে সংস্থার সহ-সভাপতি পদে যোগ দেওয়ার জন্য় আহ্বান করা হয়। খুব অল্প সময়ের জন্য সেই পদে ছিলেন ইন্দিরা কিন্তু তিনি রাজি হয়েছিলেন একটিমাত্র কারণে-- সত্য়জিৎ রায় ছিলেন ওই সংস্থার সভাপতি। সেই সময়ে সত্যজিতের উপস্থিতি এবং ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলনকে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেতে প্রভূত সাহায্য করেছিল।

আরও পড়ুন: অভিযোগ ইসলাম-বিরোধী মন্তব্য! ক্ষমা চাইতে হল বাংলাদেশের অভিনেত্রীকে

বিজয় মুলে, দিল্লি ফিল্ম সোসাইটির একজন অগ্রণী সদস্য একটি সাক্ষাৎকারে একবার জানান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী থাকার সময়ে ইন্দিরা গান্ধী ফিল্ম সোসাইটির সমস্ত ছবি প্রদর্শন থেকে সেন্সরশিপ তুলে নেন। সেটা সম্ভব হয়েছিল কারণ এই মর্মে দফতরের কাছে চিঠি লিখেছিলেন সত্য়জিৎ নিজেই। এছাড়া দেশের প্রমুখ চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাদের নিয়োগ করা হবে সেই সংক্রান্ত বিষয়ে সত্যজিতের পরামর্শ নিতেন ইন্দিরা। পুণের ফিল্ম ইনস্টিটিউট তখন সদ্য তৈরি হয়েছে। সেখানে ভাইস প্রিন্সিপাল পদে ঋত্বিক ঘটককে নিয়োগের আর্জি জানিয়েছিলেন সত্য়জিৎ। ইন্দিরা গান্ধীর সানন্দে সেই অনুরোধ রাখেন।

আমৃত্যু ইন্দিরা ও মারি সিটন দুজনেই সত্যজিতের ছবির অনুরাগী থেকেছেন। মারি সিটনের লেখা সত্যজিতের জীবনীগ্রন্থটিই এখনও পর্যন্ত পরিচালকের জীবন সম্পর্কে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য়ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত।

*ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি 'সাহাসূত্র', একটি অনলাইন ওপেন রিসোর্সের অংশবিশেষ। ভি কে চেরিয়ান একজন বর্ষীয়ান মিডিয়া প্রফেশনাল, ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলনের সদস্য এবং 'সেজ পাবলিকেশন' থেকে ২০১৭ সালে প্রকাশিত 'ইন্ডিয়াজ ফিল্ম সোসাইটি মুভমেন্ট: দ্য জার্নি অ্য়ান্ড ইটস ইমপ্যাক্ট' বইটির রচয়িতা।

satyajit ray Bengali Cinema
Advertisment