Indraneil Sengupta: যাঁরা এই দুনিয়ায় আছেন তাঁদের গুডবাই বলার প্রয়োজন নেই, কখনও না কখনও তো আবার দেখা হবেই: ইন্দ্রনীল

Goodbye Mountain: মুক্তির অপেক্ষায় ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অভিনীত 'গুডবাই মাউন্টেন'। তার আগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে আড্ডায় ইন্দ্রনীল।

Goodbye Mountain: মুক্তির অপেক্ষায় ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অভিনীত 'গুডবাই মাউন্টেন'। তার আগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে আড্ডায় ইন্দ্রনীল।

author-image
Kasturi Kundu
New Update
cats

আমার কাছে সম্পর্ক মানে একটা শান্তির জায়গা।: ইন্দ্রনীল

ভারী বর্ষায় খাস কলকাতায়, এনজয় করছেন?

Advertisment

আমি তো মুম্বইয়ে থাকি। ওখানে তো সারাক্ষণ বৃষ্টি। তাই কলকাতার এই বৃষ্টিটা আমার কাছে সত্যিই খুব কম মনে হচ্ছে। এখানের মানুষজন অবশ্য বলছেন মারাত্মক বৃষ্টি, কিন্তু মুম্বইয়ের তুলনায় এটা কিছুই নয়। 

পুরাতনের পর আরও একবার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে কাজ। এটা প্রাপ্তি নাকি লাক বাইচান্স?

Advertisment

এটা লাক বাইচান্স। আমরা যখন এই ছবিতে কাজ করেছিলাম তখন পুরাতন-এর বিষয় কিছুই জানতাম না। ঘটনাচক্রে পুরাতন আগে মুক্তি পেয়েছে। 'গুডবাই মাউন্টেন'-এর পর ঋতুর সঙ্গে আরও একটা ছবিতে কাজের সুযোগ পেয়েছি। আমাদের কাজ দর্শকের ভাল লেগেছে, সেটা একটা প্রাপ্তি।  

এই ছবির স্ক্রিপ্ট পছন্দ হওয়ার নেপথ্যে বিশেষ কোনও কারণ

এই ছবির গল্পটা আমার খুব পছন্দ হয়েছিল। তাছাড়া আমি এই ধরণের চরিত্রে প্রথমবার কাজ করছি। যে পরিস্থিতিতে পরিচালক গল্প বুনেছেন অর্থাৎ সিনেমার প্লট সেটা আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল। যে বয়ঃসন্ধির গল্প গুডবাই মাউন্টেন-এ রয়েছে সেটাও আমার কাছে একদম নতুন। এইরকম অনেকগুলো বিষয়ের জন্যই ইন্দ্রাশিষের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলাম।

ইন্দ্রাশিষের সঙ্গে প্রথম কাজ, অভিনয়ের ক্ষেত্রে কতটা স্বাধীনতা দিয়েছেন?

ওঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ভীষণ ভাল। খুব নিখুঁতভাবে চরিত্রগুলো বিশ্লেষণ করে। আর কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা বলতে, অভিনেতাকে মত প্রকাশের সুযোগ দেয়। কিন্তু, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা যদি প্রতিটি দৃশ্যে নিজের মাতমাত জারি করে সেটা কো পরিচালকের জন্য সমস্যাজনক। যেটুকু স্পেস দেওয়া প্রয়োজন সেটা ইন্দ্রাশিষ দিয়েছে।

একটা সংলাপ, 'এটা কেন হয়ে গেল', ব্যক্তিগত জীবনের কোনও ইমোশন অজান্তেই জড়িয়ে যায়? বাস্তবে এমন কোনও অনুশোচনা?

প্রত্যেক অভিনেতা-অভিনেত্রীর কাজের ধরণ আলাদা। অনেকে হয়ত ব্যক্তিগতজীবনের আবেগ-সুখ-দুঃখের মুহূর্তগুলোকে সিনেমায় ইন-কর্পোরেট করে। আমি সেটা কখনও করিনি। ব্যক্তিগত জীবনের আনন্দ-দুঃখ কোনও মুহূর্তকে ভেবে আমি চরিত্রকে নিখুঁত করার চেষ্টা করিনি। আমি চরিত্রের ইমোশনেই থাকতে স্বচ্ছন্দ্যবোধ করি। আর বাস্তবে তো জীবনে বিভিন্ন সময় এটা মনে হয়, এমনটা না হলেও পারত। তবে আমি কখনও হতাশ হই না। জীবনটা খোলা বইয়ের মতো, এগুলোর কোনও প্রভাব আমার জীবনে পড়ে না।

ঋতুপর্ণা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তকে বলছেন, আমাকে যদি ভুলটা একটু ধরিয়ে দিতে..., আলোচনার মাধ্যমে ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগে? 

কথা বললেই যদি সব সম্পর্ক ঠিক হয়ে যেত তাহলে তো ভারত-পাক সম্পর্ক ঠিক হয়ে যেত, ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের মধ্যে সব সমস্যার মিমাংসা হয়ে যেত। কথা বলে সব সমস্যা মিটে যাবে এটা আমাদের ধারণা কিন্তু, বাস্তবে সেটা সবসময় হবেই তা নিশ্চিত করা যায় না। মানুষেরও সম্পর্ক ভাঙে-গড়ে, অনেক সময় আলোচনার মাধ্যমে ভাঙা কাচ জোড়া লাগে, অনেকসময় আবার সেটা হয় না।

তৃতীয় ব্যক্তিকে নিয়ে সন্দেহ কোনও সম্পর্ক সত্যিই শেষ করে দিতে পারে?

নিশ্চয়ই। সন্দেহ যে কোনও সম্পর্ক শেষ করে দিতে পারে। সেটা শুধু ভালবাসা বা দাম্পত্য নয়। অনেক সময় সন্দেহের বশবর্তী হয়ে  বাড়ির পারিচারিকাকেও বের করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। সেটাও তো খারাপ একটা দিক। 

গুডবাই মাউন্টেন-এর এই ছোট ছোট ক্লিপিংগুলো ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের ব্যক্তিগতজীবনের সঙ্গে কোথাও মিলে যায়?

না, আমি তো সেরকম কিছু অনুভব করিনি। ওই যে বললাম, আমি চরিত্রের ইমোশনে বিশ্বাসী। 

আপনার মতে, সুখী সম্পর্কের চাবিকাঠি কী?

ব্যক্তিগতভাবে এই বিষয়টা পছন্দ করি না। আমি যে পেশার সঙ্গে যুক্ত সেটা খুবই অনিশ্চিত। কর্মজগৎ নিয়ে একটা চিন্তাভাবনা সময়ই থাকে। মানুষের জীবনও খুব অনিশ্চিত। শরীর কী ভাবে সুস্থ রাখতে হবে সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সম্পর্ককে যদিও 'টাস্ক'-এর মতো করে দেখতে হয় তাহলে তো মুশকিল। সম্পর্ককে কী ভাবে ঠিক রাখতে হবে সেটা নিয়েও যদি দুঃশ্চিন্তা থাকে...! আমার কাছে সম্পর্ক মানে একটা শান্তির জায়গা। সারাদিনের ক্লান্তির পর যেটা নিয়ে ভাবতে হবে না, শুধুই শান্তি পাওয়া যাবে। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে নির্দিষ্ট কোনও কাজ করতে হবে আমি সেটার বিরোধী।

ব্যক্তিগতভাবে পাহাড় না সমুদ্র পছন্দ? মন খারাপ হলে পাহাড়ের কোলে গিয়ে শান্তি খোঁজেন?

ব্যক্তিগতভাবে আমার পাহাড় পছন্দ। তবে মন খারাপ হলে সকলের আড়ালে চলে যাওয়া বিষয়টা আমার অপছন্দ। আমি নিজের ঘরে বসেও কষ্ট বা দুঃখের মুহূর্তটা কাটাতে পারি। মানসিক স্থিতি ঠিক করত পাহাড়ে বা সমুদ্রে কিংবা নির্জন স্থানে যেতে হবে আমার ক্ষেত্রে এইরকম কোনও ব্যাপার নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে একা থাকতে ভালবাসি। খুব বেশি পার্টি করা, হইচই ভাল লাগে না।

এমন কেউ আছে যাকে গুডবাই জানাতে কষ্ট হয়েছে?

এখনও পর্যন্ত তো হয়নি। তবে হ্যাঁ, আমার খুব কাছের মানুষজন যাঁরা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন তাঁদের গুডবাই জানাতে কষ্ট হয়েছে। বাবা-মায়ের ওঅনেক বয়স হয়ে গিয়েছে। কোনও না কোনওদিন তাঁরা আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন। মানুষ তো অমর নয়।  সেই সময় আমার ওঁদের গুডবাই বলতে সত্যিই খুব কষ্ট হবে। যাঁরা এই দুনিয়ায় আছেন তাঁদের গুডবাই বলার প্রয়োজন নেই, কখনও তো আবার দেখা হবেই। 

মুম্বই-কলকাতা দুই জায়গাতেই কাজ করেন, কোন জায়গায় কাজের আনন্দ বেশি তৃপ্তি দেয়?

কলকাতায় কাজের ক্ষেত্রে আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনও কোনও সমস্যার সম্মুখীন হইনি। ফিল্ম মেকিংয়ের ক্ষেত্রে খুব একটা পার্থক্য আমার চোখে পড়েনি। এটা ঠিক যে মুম্বইয়ের সঙ্গে কলকাতার বাজেটের একটা বিস্তর ফারাক থাকে। স্বাভাবিকভাবে টাকার অঙ্ক যেখানে বেশি সেখানে কাজের সুযোগ সুবিধাটাও বেশি। কিন্তু, কলকাতায় কম বাজেটের মধ্যেও যেভাবে সুন্দর ছবি তৈরি হয় সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। ফাইভ স্টার হোটেলের খাবারই যে ভাল আবার ছোট রেস্তোরাঁর খাবার খারাপ সেটা যেমন নয়, তেমনই মুম্বই-কলকাতা দু'জায়গারই কাজ উন্নতমানের। 

এমন কোনও কাঙ্খিত চরিত্র আছে যেটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত?

একটা চরিত্রের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম, সেটা ফেলুদা। ওটা করে ফেলেছি। তাছাড়া আমি সব চরিত্রেই কাজ করতে ভালবাসি।  

বরখা বিস্ত আর ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তকে আর কখনও একসঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করতে দেখা যাবে?

না, এই মুহূর্তে সেটা হয়ত আর সম্ভব নয়। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছে, অসম্ভব। তবে ভবিষ্যৎ তো কেউ বলতে পারে না। 

জীবনকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা?

না, জীবন নিয়ে আমি ওত পরিকল্পনা করি না। প্রতি মুহূর্তেই জীবনে কিছু না কিছু ঘটে চলেছে। তাই যা হওয়ার সেটা সময়ের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। অনেক বছর হয়ে গেল নির্দিষ্ট ছকে জীবনকে বাঁধার বিষয়ে কিছু ভাবিনি। 

সম্পর্কের গুঞ্জন-ট্রোল, এগুলো মনের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে?

আমি তো মানুষ, তাই অবশ্যই প্রভাব ফেলে। তবে আজকের দিনে তো নরেন্দ্র মোদী, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, রণবীর কাপুর ট্রোল হয়ে যাচ্ছেন। সেখানে আমি কে? এখন তো আন্তর্জাতিক স্তরে পরনিন্দা-পরচর্চা হয়। এগুলোর সঙ্গে নিজেকে এখন মানিয়ে নিয়েছি। মাঝে মধ্যে মনে হয় সোশ্যাল মিডিয়াকে গুডবাই বলতে ইচ্ছে হয় কিন্তু, যে পেশার সঙ্গে যুক্ত সেটা সম্ভব নয়। তাই চামড়া মোটা করে নিয়েছি আর শুনেও না শোনার ভান করে থাকি। যে কোনও জিনিসই প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগে, একঘেয়ে হয়ে গেলে গা-সওয়া হয়ে যায়।

Bengali News Indraneil Sengupta