দেখলাম বহু আলোচিত 'কবীর সিং'। 'অর্জুন রেড্ডি'ও দেখেছি। কিন্তু একটা বিষয় আমার কাছে কিছুতেই স্পষ্ট নয়, যে তা নিয়ে এত মাতামাতি, মতবিরোধের কী আছে? সন্দীপ রেড্ডি ভাংগা পরিচালক এবং শাহিদ কাপুর মূখ্য অভিনেতা। ছবিটিতে নাকি মহিলাদের খুব ছোট করা হয়েছে। নারীসমাজের সম্মান প্রায় ধুলিসাৎ। এক শ্রেণির বক্তব্য, প্রেম করতেই পার, কিন্তু তা বলে এত পজেসিভ? কী জ্বালা!
অথচ বলিউডের হিন্দি ছবিতে নানারকম প্রেমের প্রকাশ দেখতে আমরা কিন্ত যথেষ্ট অভ্যস্ত। হঠাৎ করে এই ছবিটি দেখেই সবার টনক নড়ল কেন কে জানে। আমি মানছি, ছবিটিতে নায়িকা কিয়ারা আডবাণীর বিশেষ কিছু করার ছিল না। প্রথম এক ঘন্টা একটা কথাও উনি বলেন নি, শুধু মোমের পুতুলের মতো হেঁটেচলে বেড়িয়েছেন। ইন্টারভ্যালের একটু আগে শুধু নায়ককে একবার জিজ্ঞাসা করে বসেন, তাঁর মধ্যে নায়ক কী দেখে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট? ব্যস, এখানেই আবার নারীবাদী ঝড় ওঠে - কেন? একজন মহিলা কি পুরুষের চোখে শুধুমাত্র শারীরিক আবেদনেরই প্রতীক?
আরও পড়ুন, ‘কবীর সিং’ কেন টানবেই আপনাকে
এতে যে কী অবাক হলাম, বলে বোঝানো দুষ্কর। মহিলারা চিরকালই নিজেদের সৌন্দর্যায়নের স্বীকৃতি চান, চেয়ে এসেছেন এবং চেয়ে যাবেন। এ তো কোনো নতুন কথা নয়। অনেক পুরুষও প্রশংসা পছন্দ করেন, এবং তাও কোনোভাবেই দোষের নয়।
আজ্ঞে হ্যাঁ, নায়ক, নায়িকার ব্যাপারে বারংবার বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বলেছে, "হাঁ, উও মেরি বান্দি হ্যায়", তাতে মহাভারত অশুদ্ধ হলো বলে আমার মনে হয় নি। ভালবাসার ক্ষেত্রে মানুষ কত কীই তো করে, তার কাছে এ তো নস্যি।
ষাটের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক, বলিউডের কত লক্ষ ছবিতে যে আমরা নায়িকাদের নায়কদের হাতে নাস্তানাবুদ হতে দেখেছি, তার কোনো হিসেব নেই। নায়িকা রেগে আগুন হয়ে গটমট করে চলে যাচ্ছে, আর নায়ক তার পিছনে নাচতে নাচতে মস্করা করছে। এইসব সিকুয়েন্স থেকে কত সুপার ডুপার হিট গান জন্ম নিয়েছে, তার বেলায় তো কই কেউ কিছুই বলেন না। প্রেমে পড়েছেন অথচ কোনো খুনসুটি নেই, তাহলে প্রেমে পড়া আপনাকে মানায় না, এই হলো হাবভাব।
আরও পড়ুন, ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছবি ‘আর্টিকল ১৫’
দেব আনন্দ, গুরু দত্ত, শামী কাপুর, রাজেশ খান্না, অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান যদি কোনও দোষ না করে থাকেন, তাহলে শাহিদ কাপুরের আর কী দোষ দেব? সেইসব প্রজন্ম যদি ওই ছবি দেখে বখে না গিয়ে থাকে, তাহলে আজও যাবে না। ছবি আর বাস্তবের তফাতটা বোঝার ক্ষমতা আগেও ছিল, আজও আছে। সবাই জানে কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ। ২০১৯-এ দাঁড়িয়েও যদি আমরা একটা ছবির কুপ্রভাবের ভয় পাই, তাহলে আমাদের এখনো গোড়ায় গলদ।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)