Valentines Day:এখন তাঁর বয়স ৭৬। কিন্তু, মনেপ্রাণে তাঁর জীবনে এখনও ভরা যৌবন, অহরহ প্রেমের আনাগোনা। সর্বদা প্রেমে থাকতেই ভালবাসেন। বয়স তাঁর কাছে একটা সংখ্যা মাত্র। প্রেমিক মনে লাগল বসন্তের ছোঁয়া? তিনি নান আদার দ্যান কবি-সংগীতশিল্পী কবীর সুমন। তিনি বরাবারই স্পষ্টবক্তা। গানওয়ালের গানে যে প্রেমের ছোঁয়া তা যেন প্রেমিক মনকে শিহরিত করে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম নাগরিক কবিয়ালের গানে উদ্দাম প্রেমের উদযাপনে মাতাল হয়ে যায়। গুচ্ছ গুচ্ছ প্রেম এসেছে তাঁর জীবনেও। কোনওদিন লুকোচুরির প্রয়োজনবোধ করেননি। আজেকের প্রজন্ম 'লিভ-ইন রিলেশনশিপ', 'সিচুয়েশনশিপ' নিয়ে মাতামাতি করে তখনও কবীর সুমন ৭৬-এ পা রেখেও তাঁর ভিতরের রাধিকা জাগ্রত। প্রেমিকার উষ্ণ ছোঁয়ায় জাগিয়ে তুলতে রাজি তাঁর ভিতরের আদিম মানুষটাকে। চোখে-ঠোঁটে-গালে চুমু এঁকে রাসলীলায় মত্ত হয়ে যেতে চান।
ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে এক নারীকে জড়িয়ে ছবি পোস্ট করেছেন কবীর সুমন। জীবনে নতুন প্রেমের ছোঁয়া লাগল কিনা জানতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অনলাইনের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, 'ও আমার খুব ভাল বন্ধু। পারিবারিক বন্ধু। ওঁর পরিবারের সঙ্গেও আমার ভাল সম্পর্ক। অসম্ভব ভালবাসি ওকে কিন্তু, প্রেমিকা নন। ওঁর নাম সৌমি বসুমল্লিক। স্কুলের শিক্ষিকা। আমার বাড়িতে উনি একজন বিশিষ্ট জন, আমার স্বজন যিনি আমার যত্ন নেন ও দেখভাল করেন। আমাকে তো বাঁচিয়ে রেখেছে...। আজ সকালে যখন স্কুলে যাচ্ছিল তখন খুব যত্ন করে ভালবেসে ছবিটা তুলেছি। আমার এখন শরীরের যা অবস্থা একা থাকা বারণ। দু-তিনজন পালা করে থাকেন। কাল রাতে সৌমি ছিলেন। উনি আমাকে ওষুধপত্র দেন, খাওয়াদাওয়ার দিকে খেয়াল রাখেন। আজ সকালে উঠে মনে হল, অনেকদিন তো কোনও ছবি তোলা হয়নি। তাই আদর করে একটা ছবি তুললাম। বারবারই বলছি, আমি ওঁর প্রেমিক নই।'
ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, 'আমি একটা সময় ভ্যালেন্টাইনস ডে সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানতামই না। যখন আমেরিকায় চাকরি করতাম তখন আমার বয়স ৩০। ওখানে প্রথম এই দিনটা সেলিব্রেট করতে দেখেছিলাম। প্রিয় মানুষকে বলা হত, 'বি মাই ভ্যালেন্টাইন'। দু-একজন আমাকেও পছন্দ করতেন। একজন আমেরিকান প্রোডিউসর ছিলেন। অল্প বয়সী মেয়ে। আমার থেকে বছর পাঁচেকের ছোট। আমাকে পছন্দ করতেন। ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে আমার টেবিলে একটা কাগজের উপর হার্ট চিহ্ন এঁকে লিখেছিলেন, বি মাই ভ্যালেন্টাইন। আরেকজন ছিলেন উনি দোকানে কাজ করতেন। আমাকে দেখে এগালে একটা চুমু ওগালে একটা চুমু দিয়ে হাতে একটা চকোলেট দিয়েছিলেন। তারপর বললেন, বি মাই ভ্যালেন্টাইন। ব্যাপারগুলো খুব মিষ্টি। আমার কখনও মনে হয়নি টিপিকল প্রেমিক-প্রেমিকা।'
'ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে একটু গান না গাইলে আমার ভাল লাগত না। খেয়ালই তো আমার জীবন। খেয়াল-এই আমি বেঁচে আছি। তাই বসন্তের রাগ-এর কয়েক কলি গেয়ে পোস্ট করলাম। আজকের দিনে সকলের জন্য ভালবাসার ইস্তেহার করতেই গানটা গেয়েছি। আমার মনে হয় আমাদের এই বঙ্গভূমিতে ভ্যালেন্টাইনস ডে-টা অর্থাৎ ভালবাসার দিনটা রাসলীলায় পালন করলে খুব ভাল হয়। আমার গানে বারবার ফিরে এসেছে রাধা-কৃষ্ণ। চাঁদ কাজির লেখা একটা গানে আমি সুর দিয়েছি। 'যখন আমি বইসা থাকি গুরুজনার মাঝে/ নাম ধইরা বাজাও বাঁশি আমি মইরি লাজে/ বাঁশি বাজানো জানো না অসময়ে বাজাও বাঁশি পরান মানে না'- এই গানটা লিখছেন চাঁদ কাজি যিনি একজন বাঙালি মুসলমান ও কবি। সেই সঙ্গে কৃষ্ণনগরের জেলাশাসক। আজ থেকে ৪০০ বছর আগে লেখা। এটা তো আমাদের সম্পদ। এখানে কোনও ধর্মের যোগ নেই। রাসলীলা আমাদের সকলের ভালবাসার দিন। আমি মনে করি বেঁচে আছি ভালবাসার জন্য, মরবও ভালবাসার জন্য। এর সঙ্গে রয়েছে বাংলা খেয়াল। রাসলীলা আমাদের নিজের জায়গা। আমাদের ঘর। এর সঙ্গে ধর্ম, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও সম্পর্ক নেই।'
'আমি যখন বইসা থাকি গুরুজনের মাঝে, নাম ধইরা বাজাও বাঁশি...'-কী অসাধারণ! আমার মধ্যে যদি রাধিকাই না থাকে তাহলে বৃথাই জন্ম। আমি খুব সরস মানুষ। প্রেম করে ফাটিয়ে দিয়েছি। আমার ভিতর রাধিকা না থাকলে কখনও গান লিখতেই পারতাম না। রবীন্দ্রনাথের ভিতরেও রাধিকা ছিলেন। সেই জন্যই অত ভাল গান লিখতেন। রাসলীলা ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। প্রেম যত প্রসারিত হবে ততই পরোক্ষভাবে অনেক মানুষও লাভবান হবে। অনেক প্রোডাক্ট তৈরি হবে, মিষ্টি তৈরি হবে, গিফট-কার্ড কেনার ধুম পড়বে। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করবে। ভালবাসায় গতি আসবে। এই বিশেষ দিনে গোলাপ দিয়ে মনের কথা চিরকুটে লিখে প্রিয় মানুষকে প্রেমের প্রস্তাব দেবে। সেই কাগজের নীচে হয়ত লিখে দেবে এক অজ্ঞাত ভক্তের থেকে একটা ফুল। বেরসিক হওয়ার তো কারন নেই। ভালবাসা আমাদের শেষ সম্বল।'
'আজকের আকাশটাও যেন তাঁকে চাইছে, আদর চাইছে। হাত ধরে বেরিয়ে পরার দিন। তাঁর কাছে বলার দিন, দেখো আমি তোমার জন্য এসেছি। আজ থেকে বহু বছর আগে আমার মায়ের বয়সী একজনের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। আমাকে একদিন ডেকেছিলেন। আমি গেলাম তাঁর কাছে। আমি বললাম কোথায় বসব? উনি আমাকে পালটা বললেন আপনার কী মনে হয় কোথায় বসা উচিত? এরপরই বলেছিলেন, আপনি এক প্রাচীন দেশের আদিম পুরুষ। আমি সোজা ওঁর পায়ের কাছে গিয়ে বসলাম। উনি বললেন, এটাই আপনার সঠিক জায়গা। অদ্ভুত একটা আদর, অনুভূতি। বাঙালিই পারে এমন ভালবাসায় জড়িয়ে রাখতে। প্রেম না থাকলে কীসের জীবন! জয় ভালবাসা।'