Ramprasad, Kalighat Temple, Sun Bangla: কালীঘাট মন্দির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস উঠে আসছে টেলিপর্দায়, 'মহাতীর্থ কালীঘাট'-এ। বহু ঐতিহাসিক ঘটনা ও চরিত্রের পুনর্নির্মাণ ঘটছে সান বাংলা-র এই ধারাবাহিকে। সম্প্রতি এই গল্পের অনুষঙ্গে এসেছে বিখ্যাত কালীসাধক ও শ্যামাসঙ্গীতের স্রষ্টা রামপ্রসাদ সেনের চরিত্র। অভিনেতা দেবাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়গুণে বাংলা টেলিভিশনের দর্শকের কাছে ধরা পড়ছেন এই কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব। রামপ্রসাদের জীবনসঙ্গিনী সর্বাণীর ভূমিকায় রয়েছেন শ্রীজিতা মুখোপাধ্যায়।
দেবাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বাংলা টেলিভিশনের সবচেয়ে গুণী অভিনেতাদের অন্যতম। অভিনেতা হিসেবে তাঁর ব্যাপ্তি এতটাই যে দর্শক তাঁকে নিতান্ত শহুরে খল চরিত্রে যেমন দেখেছেন, তেমনই একটা সময় দেবাঞ্জন দর্শকের কাছে বিশেষ আদরণীয় হয়েছিলেন 'জগজ্জননী মা সারদা' ধারাবাহিকে স্বামী বিবেকানন্দ-এর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য।
আরও পড়ুন: গুড়িয়ার স্বামী হয়েই এলেন জিতু, খল চরিত্রে লিজা
''রামপ্রসাদের অথেন্টিক জীবনীগ্রন্থ পাওয়া যায় না। ওঁর মারা যাওয়ার দেড়শো বছর পরে প্রথম জীবনী লেখা হয়। তাই ওঁর চরিত্র নির্মাণে জ্ঞান, সত্য, কল্পনা মিলেমিশে যায়'', ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানান দেবাঞ্জন, ''রামকৃষ্ণদেবের পূর্ব সময়ে, শাক্ত সাধক হিসেবে রামপ্রসাদের জুড়ি মেলা ভার। তাঁর অসংখ্য গান-কবিতা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের গান থেকে শুরু করে আধুনিক গানও কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই অনুপ্রাণিত হয়েছে রামপ্রসাদী থেকে। আমার খুব পছন্দের চরিত্র তো বটেই। এতদিন ধরে সিনেমায় বা টেলিভিশনে যেভাবে রামপ্রসাদকে যেভাবে দেখানো হয়েছে, সেই দেখানোটা হয়তো সম্পূর্ণ নয়। রামপ্রসাদ উচ্চশিক্ষিত ও বহুভাষাবিদ। সংস্কৃত, ফারসীতে অত্যন্ত ভাল দখল ছিল এমনকী ইংরেজি তর্জমাও করতেন। রামপ্রসাদী গান মানেই কিন্তু মা তারা, মা দুর্গার বন্দনা নয়। বর্গী আক্রমণের পরে তাঁর লেখা সমরসঙ্গীত পড়লে মনে হয় যেন যুদ্ধটা চোখের সামনে ঘটছে।''
আরও পড়ুন: মায়ের জন্যই আংটি পরা! ‘বিশ্বাস’ ও ‘অন্ধবিশ্বাস’ নিয়ে কী বললেন প্রসেনজিৎ?
অভিনেতা জানালেন, রামপ্রসাদের স্ত্রী ও ভৈরবী, সর্বাণীর পাশাপাশি উঠে আসবে রামপ্রসাদের সমসাময়িক বিভিন্ন ঐতিহাসিক চরিত্রেরা। আসবেন আলিবর্দি খাঁ, সিরাজ-উদ-দৌল্লা, জমিদার দুর্গাচরণ মিত্র এবং মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র দে। জমিদার দুর্গাচরণ মিত্রের কাছে খাতা লেখার কাজ নিয়েছিলেন রামপ্রসাদ। হিসেবের খাতায় একদিন লিখে ফেললেন গান। সেই গান পড়ে মুগ্ধ জমিদার তাঁকে বললেন ভিটেয় ফিরে গিয়ে সাধনা করতে, নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে যাবে মাসোহারা। ভবিষ্যতে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র দে-র সভার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পারিষদ হয়ে ওঠেন রামপ্রসাদ। তাঁকে কবিরঞ্জন উপাধি দিয়েছিলেন মহারাজা।
''রামপ্রসাদকে বলা হতো কালীর বেটা। বলা হয়, মা কালী নাকি ওঁর বাড়ির বেড়া বেঁধে দিতেন। বীরাচারী তন্ত্রসাধক ছিলেন রামপ্রসাদ। মদ্যপান করে বেঁহুশ হয়ে পড়তেন মাঝেমধ্যেই। তখন নাকি তাঁকে ঘাড়ে করে বাড়ি পৌঁছে দিতেন মা কালী। আসলে কালীঘাটের কালী হোক বা হালিশহরের কালী, তিনি তো একই'', বলেন দেবাঞ্জন।
আরও পড়ুন: টানা ২৫ সপ্তাহ শীর্ষে ‘কৃষ্ণকলি’, রইল এই সপ্তাহের সেরা দশ তালিকা
এই ধারাবাহিকে রামপ্রসাদ ও সর্বাণীর ট্র্যাকটি শুরু হয় উমার মৃত্যুর ২০০ বছর পরে। আত্মারাম, ব্রহ্মানন্দ ও উমা হোগলার মন্দির তৈরি করে গ্রামের মানুষের সহায়তায়। কিন্তু হরিহর এসে সেই মন্দিরে আগুন লাগায়। উমা নিজে সেই জ্বলন্ত মন্দিরে প্রবেশ করে ও মারা যায়। মা কালী দেখা দিয়ে বলেন যে উমার জীবনকাল সমাপ্ত হয়েছে এবং অন্য একটি রূপে সে জন্মগ্রহণ করবে আগামী সময়ে। গল্প এগিয়ে যায় ২০০ বছর এবং দেখা যায় হালিশহরে রামপ্রসাদ ও সর্বাণীর বিয়ে ঠিক হয়েছে। দুজনেই কালীসাধক। কিন্তু বিয়ের দিন নিরুদ্দেশ হয়ে যান রামপ্রসাদ। তখন মা কালী তাঁকে দেখা দিয়ে সর্বাণীকে বিয়ে করতে আদেশ করেন। আদেশ মতো রামপ্রসাদ গ্রামে ফিরতে গিয়ে ডাকাতের হাতে পরেন। কোনও প্রতিরোধ না করে রামপ্রসাদ মা কালীর বন্দনা গাইতে শুরু করেন এবং ডাকাতেরা মুগ্ধ হয় সেই বন্দনায়।
এর পরে কীভাবে সর্বাণীর কাছে পৌঁছন রামপ্রসাদ? সাধনায়, গেরস্থালিতে তন্ত্রসাধক রামপ্রসাদ ও ভৈরবী সর্বাণীর জীবনে কোন আশীর্বাদ নিয়ে আসেন মা কালী? ইতিহাস ও কিংবদন্তি মিশ্রিত সেই গল্প একটু একটু করে উন্মোচিত হবে ধারাবাহিকে।