রামপুরহাট 'গণহত্যা' নিয়ে উত্তাল রাজ্য। অগ্নিকাণ্ডে শিশু, মহিলা-সহ মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৯ জনের। রাজনৈতিক অভিসন্ধি না ষড়যন্ত্র? প্রশ্নে তোলপাড় সভ্যসমাজ। রাজ্যের শাসক দলের ভূমিকা নিয়েও তোপ দেগেছে বিরোধী শিবির। তৃণমূলের পঞ্চায়েত উপপ্রধানের খুনের বদলা নিতেই আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। এহেন নৃশংস কাণ্ডে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের হয়েছে হাইকোর্টেও। এমনকী রিপোর্ট তলব করা হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে। এবার রামপুরহাট গণদাহ কাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে মুখ খুললেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। মুখ খুলেছেন কৌশিক এবং ঋদ্ধি সেনও।
বামপন্থী মনোভাবাপন্ন কমলেশ্বর বরাবরই রাজ্যের তৃণমূল সরকার কিংবা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে রেয়াত করেন না। এবার রামপুরহাট অগ্নিসংযোগ কাণ্ডেও সরব হলেও তিনি। পরিচালক সাফ জানালেন, "আসলে এখন শাসক দলের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, পৌর পিতা/মাতা, পঞ্চায়েতের নেতৃত্ব, এমনকী দলের পদ-প্রার্থী, পরামর্শদাতা বা কোনও পদাধিকারী হলেও এত বেহিসেবী টাকা-পয়সা, নাম, যশ, ক্ষমতা বা সুবিধার উপহার পেয়েছে, যে শিশু-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নিজেদের লোককে আগুনে পুড়িয়ে দিতে বা ঘরছাড়া করতে দ্বিধাবোধ করছে না! যুক্তি-আবেগও এখানে পরাজিত। পুলিশ প্রশাসন, সুশীল সমাজ বা জনমাধ্যমের ওপরেও সেই ক্ষমতার চাপ। তাঁদের কাছে সুবিচার পাবার আশা করে ফল পাওয়া যাচ্ছে না।"
<আরও পড়ুন: ‘জঘন্য লাগল কাশ্মীর ফাইলস’, রামগোপাল বর্মার মন্তব্য শুনে বিবেক অগ্নিহোত্রী বললেন…>
এখানেই অবশ্য থামেননি কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। রামপুরহাট-কাণ্ডে তাঁর প্রশ্ন, "রাজ্য না নৈরাজ্য? ঘৃণ্য পরিস্থিতি। এক্ষেত্রে, সংগঠিত প্রতিবাদই একমাত্র পথ। তাছাড়া বাঁচার কোনো রাস্তা নেই।" সোশ্যাল মিডিয়াতেই প্রতিবাদী কণ্ঠ ছেড়েছেন তিনি।
ঋদ্ধি সেনের মন্তব্য, "তৃণমূলও বাংলার চেনা সন্ত্রাসের পথে হাঁটছে। অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে, খুনের ব্যখ্যা দেওয়া, গণতন্ত্রকে বাকরুদ্ধ করা- সবটাই চেনা ছকে চলছে। রাজ্যর শাসক দল নির্লজ্জ। অনেক তাড়াতাড়িই এই দল এপথে হাঁটছে। বাংলার ইতিহাসে অন্যতম ঘৃণ্য ভয়ঙ্কর ঘটনা রামপুরহাট-কাণ্ড।"
কৌশিক সেনের মন্তব্য, "কোনও রাজনৈতিক দলই দায় এড়াতে পারে না। এর আগেও বাম আমলে বীরভূমে হিংসা-হানাহানির ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টা হল, সিপিএম কিংবা তৃণমূল কোনও শাসনেই রাজ্যের পরিস্থিতি বদলায়নি। বাংলার অর্থনীতিও দীর্ঘদিন একজায়গায় রয়েছে। এই ঘটনার দায় নিতেই হবে রাজ্য সরকারকে। প্রশাসনিকভাবে এখনই না বদলালে, সেটা তৃণমূলের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে। কারণ গোটা দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বিজেপি-বিরোধী মুখ হিসেবে সেভাবে পরিচিতি পেয়েছেন। কাজেই ইমেজ রক্ষা করার দায়িত্ব তাঁরই।"
প্রসঙ্গত, বীরভূমে তৃণমূলের পঞ্চায়েত উপপ্রধানের খুনের পর থেকেই উত্তপ্ত বগটুই গ্রাম। একের পর এক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটেছে কমপক্ষে ৮ জনের। মৃতদের মধ্যে দুই শিশু-সহ মহিলাও রয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে এক নবদম্পতিরও। এদিকে বোমা ফেটে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। আগামীকালই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বগটুই যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, "রামপুরহাট কাণ্ডে অ্যাকশন হবে।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন