/indian-express-bangla/media/media_files/2025/03/27/vm8OswXFTttDy82kgv5A.jpeg)
কলকাতা তো জন্মস্থান, তাই এই জায়গাটাকে বড্ড মিস করি: কঙ্কনা
১০ বছরের বেশি সময় কলকাতার বাইরে, নিজের শহরকে কতটা মিস করেন?
২০১৩ থেকে আমি কলকাতার বাইরে। তবে যাতায়াত বন্ধ হয়নি। আমার মা-বাবা এখানে থাকেন। হোমটাউন বা বার্থ প্লেস যেটাই বলি না কেন, নিজের জায়গাটার প্রতি একটা আলাদাই টান থাকে। যে সময়গুলো আমি বাইরে থাকি তখন সত্যিই কলকাতাকে আমি ভীষণ মিস করি। তবে হোম অ্যান্ড ডেস্টিনেশন হল, যেখানে ভালবাসার মানুষজন থাকে। সেটা কলকাতা হোক বা মুম্বই কিংবা লস অ্যাঞ্জলস। বাড়িটা কোথায় সেটা খুব একটা ম্যাটার করে না। কিন্তু, কলকাতা তো জন্মস্থান, তাই এই জায়গাটাকে বড্ড মিস করি।
বিদেশ থেকে কলকাতায় এলে হারিয়ে যায়া মেয়েবেলাকে খুঁজে পান?
যখন আমি প্রথম কলকাতা থেকে লস অ্যাঞ্জেলসে গিয়েছিলাম তখন সেখানে গিয়ে এক টুকরো কলকাতাকে খুঁজতাম। ধীরে ধীরে সেখানের সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। আর এখন যে পরিস্থিতিতে আছি দুটো দেশের সংস্কৃতির সঙ্গেই আমি খুব সহজে মানিয়ে নিতে পারি। লস অ্যাঞ্জেলসে সারাক্ষণ কাজের পিছনেই সকলে ছুটে চলেছে। ফ্যামিলি ভ্যালুটা কোথাও একটু কম। কিন্তু, এখানে এলে মা,বাবার সঙ্গে সময় কাটানো, বড়দের সঙ্গে গল্প করা এগুলো কয়েকদিনের জন্য উপভোগ করতে পারি।
এখানে এলে লাইফস্টাইলে কোনও পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়?
কলকাতা বা মুম্বই এসে লাইফস্টাইলে পরিবর্তন বলতে এখানে সময়ের ব্যপারটা একটু অন্যরকম, মানে ১০টা বললে সেটা ১২ টা ধরে নেওয়াই ভাল। নিজের বাড়ি-ঘর ছেড়ে অনেক দূরে গিয়ে থাকলে জীবনকে নতুনভাবে চেনার সুযোগ আসে। যে কঙ্কনা কলকাতা ছেড়ে গিয়েছিল আর এখন যে কঙ্কনা কলকাতায় আসে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। এখানে আসলে যে জিনিসটা লক্ষ্য করি, সকলে আমার উচ্চতা আর হেয়ার স্টাইলটা নিয়ে আলোচনা করে। আমার উচ্চতা ৫ ফুট নয় ইঞ্চি। যেটা সাধারণত কলকাতার মেয়েদের হয় না। যুগ যতই পরিবর্তন হোক চেনা ছকের বাইরে মানুষ কিছু দেখলে আজও চর্চা করে। কিন্তু, লস অ্যাঞ্জলসে এটা কোনও ব্যাপার নয়। কলকাতা এলে আমাকে কিছুক্ষেত্রে সতর্ক হয়ে চলতে হয়। ওখানে হর্ন শুনলে চমকে উঠি। কিন্তু, এখানে তো এটাই স্বাভাবিক। রাস্তা পার হওয়ার সময় খুব সাবধান থাকতে হয়। ছোট ছোট কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হয়।
একজন পেশাদার অভিনেত্রী হিসেবে উচ্চতা বা লুকটা চরিত্রের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তৈরি করে?
ভারতবর্ষে আজও স্টেরিওটিপিক্যাল আইডিয়া রয়ে গিয়েছিল। বাঙালি সৌন্দর্য মানেই আজও অনেকের ধারণা ফর্সা গায়ের রং, লম্বা চুল গোল-গোল চোখ। আমাকে অনেকেই বলেছেন অভিনয় ভাল লেগেছে কিন্তু, কী ভাবে তাঁর ছবিতে ব্যবহার করবেন বুঝতে পারছেন না। এই লিমিটেশনসগুলো কখনই থাকা উচিত নয়। লিডিং অ্যাক্ট্রেস বিষয়টাই বুঝতে পারি না। আমি চরিত্রাভিনেতা হতে চাই। অর্থাৎ সিনেমায় আমার চরিত্রটা গুরুত্বপূর্ণ হোক। শুটিং লোকেশন পছন্দ না হলে যেমন পরিবর্তন করা যায়, তেমন চরিত্রের প্রয়োজনে যোগ-বিয়োগও সম্ভব। অভিনয়ের ক্ষেত্রে লুক টেস্ট শব্দটা তো আছে। ইমাজিনেশন করার আগে সেটা করা ভাল। লুক টেস্টে কোনও পরিবর্তন মনে হলে সেটা সমাধানের জায়গাও আছে। কিন্তু, আজকাল অনেকক্ষেত্রে তা না করে অন্য মুখের সন্ধান করা হয়। মিস্টার বচ্চনকেও বলা হয়েছিল পা কেটে ছোট না করলে কোনও অভিনেত্রী পাশে দাঁড়াতে পারবে না। ব্যারিটোন ভয়েজের জন্য চরিত্র পাবেন না। আজ তো এই দুটো জিনিসের জন্য তিনি বলিউডের শাহেনশা।
কলকাতার রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়া বা কফি শপে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা হয়?
ফুচকা খাওয়াটা এখন একটু কমেই গিয়েছে। আর বন্ধুরা প্রত্যেকেই নিজেদের কাজে ব্যস্ত। আমিও তো খুব বেশিদিনের জন্য আসি না। তাই আমার কাছেও খুব একটা অপশন থাকে না। তবে আমি অনেক সময় কফি শপে যাই। ভাল ব্ল্যাক কফি খাই। সেই সঙ্গে বই পড়ি। যদি সঙ্গে কেউ থাকে তাহলে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করি। আমার উলটো দিকে বসে থাকা মানুষগুলোকেও খুব ভাল করে অবজার্ভ করি।
কলকাতায় এলে মায়ের হাতে কোন খাবার খাওয়ার আবদার করা হয়?
আমি মায়ের হাতে চিংড়ি মাছের যে কোনও আইটেম খেতে ভালবাসি। আর আমার মা অসাধারণ একটা বিরিয়ানি বানায়। ওটা খুব প্রিয়। ভাত, মাছ বা মিষ্টি আমার একদমই ভাল লাগে না। এগুলো বাদে মায়ের হাতের সব রান্নাই অমৃত। লস অ্যাঞ্জেলসে তো মায়ের হাতের রান্নাটা পাই না। যখন ওখানে খুব 'হোম সিক' হয় তখন কলকাতার খাবার পেলেও বাড়ির ফিলিংটা একদমই আসে না। আমি নিজেও টুকটাক কিছু রান্না করে নিই। এখন শিখেছি।
আপনার প্রোফাইলে শাড়ি পরা অনেক ছবি রয়েছে। বিদেশে থাকার পরও ভারতীয় সংস্কৃতিতে বহন করছেন...
আমার কাছে জামা-কাপড়ের বিষয়টা কমফোর্ট জোনের মতো। যেটা আরামদায়ক আমি সেটা পরতেই পছন্দ করি। তবে শাড়ি আমার খুবই প্রিয়। বিশেষ কিছু টাইপের শাড়ি যেমন হ্যান্ডলুম, সুতার শাড়ি, এক কালারের শাড়ি এগুলো আমার প্রিয় কারন আমি ভাল করে ক্যারি করতে পারি। কিন্তু, দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে এথনিক বা জিন্স-কুর্তা-শার্টেই আমি কমফোর্টেবল।
আপনি তো অমিতাভ বচ্চনের বিরাট ভক্ত। ওঁর সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্যই জার্নালিজম নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন?
সেই সময় ভাবতাম জার্নালিস্টরাই একমাত্র মিস্টার বচ্চনের জন্মদিনে তাঁর ক্লোজ হতে পারে। সেই জন্যই আমি জার্নালিজম পড়েছিলাম। জার্নালিস্ট হয়ে ওঁর কাছে যাব, ইন্টারভিউ নেব। ওটা ভেবেই জার্নালিজম নিয়ে পড়াশোনা করা। পরবর্তীকালে রেডিও, বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছি। কিন্তু, আমি চেয়েছিলাম অর্থনীতিবিদ হতে।
আপনার সিনেমার ট্রেলার বিগ বি শেয়ার করেছেন, জীবনের সেরা প্রাপ্তিগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম?
এর আগে উনি আমাকে সব কাজে উৎসাহ দিয়েছেন। আমার অনেক কাজ রিলিজ করেছেন। তবে এখনই আমি বলতে চাই না সব পেয়ে গিয়েছি। প্রত্যেকবারই একটা অন্য অনুভূতি কাজ করে। মনের ভিতর প্রশ্ন জাগে, আমি এটার যোগ্য তো? যে মেয়েটা একটা ফ্যান গার্ল হিসেবে কাজ শুরু করেছিল আজ মেন্টরই তার কাজ শেয়ার করছেন। এই অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করে যাবে না। প্রত্যেকবারের মতো এবারেও আমি ওঁর কাছে কৃতজ্ঞ।
রি রাউটিং গল্পের ভাবনাটা কোথা থেকে?
আমার গল্পে সবসময় জেনারেশন গ্যাপটাই তুলে ধরি। রি-রাউটিং ৩৫ মিনিটের একটি শর্ট ফিল্ম। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। দুটো চরিত্রের গল্প। একটা রাতের গল্প আর একটা রাতে একের পর এক ঘটনা ঘটতে থাকে। সেই ঘটনার মধ্যে দিয়ে তাঁরা একে অপরকে রি-রাউট করতে পারবে কিনা সেটাই সিনেমার গল্প। বরুণ চন্দ স্যার মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যিনি সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করেছেন তাঁর সঙ্গে কাজের সুযোগ পেয়েছি। এটা আমার পরম প্রাপ্তি।
বিগ বি-র কোন কাজ বা স্বভাব আপনাকে অনুপ্রাণিত করে?
অনেকটা বড় হয়েই আমি বিগ বি-র ভক্ত হয়েছি। তখন সম্ভবত দশম শ্রেনিতে পড়ি, দো আনজানে সিনেমাটা ঠাকুমার সঙ্গে দেখেছিলাম। তখন টিভির স্ক্রিনে বচ্চন স্যারের প্রেজেন্সটাই আমার মনে দাগ কেটেছিল। কিন্তু, এখন যদি বলেন, তাহলে বলব উনি যেভাবে উলটো দিকের মানুষটাকে কথা বলার সুযোগ দেন, তাঁর কথা শোনেন সেটা আমাকে অনুপ্রাণিত করে। আমাদের জেনারেশন কথা শুনতে ভুলে গিয়েছেন। যখনই ওঁর সঙ্গে দেখা হয়, আমরা অনেকে মিলে কথা বলি তখন মুখ দেখলেই বোঝা যায় কতটা মনযোগী হয়ে কথাগুলো শুনছেন। আমি একটা বিষয় উপলব্ধি করেছি মিস্টার বচ্চনের এই গুণটাই স্ক্রিনে ওনাকে এতটা ম্যাগনেটিক (স্ক্রিন প্রেজেন্স) করে তোলে। আর একটা গুণ, ভক্তদের ভালবাসেন ও শ্রদ্ধা করেন। মিস্টার বচ্চন আমার পথপ্রদর্শক। আমার সঙ্গে যদি কেউ কথা বলতে চায় বা আমার অভধি পৌঁছতে চায় আমি সেখানে আরও দু'পা এগিয়ে যাই। ওঁর এই দুটো গুণ আমি চিরদিন বহন করে নিয়ে যেতে চাই।
অমিতাভ বচ্চনের নায়িকা হওয়ার ইচ্ছে হয়?
আমার জীবনের প্রথম কাজ (ডকুমেন্টরি) Women Prayed and Preyed Upon-এ উনি ছিলেন। তবে এখন আমাদের মধ্যে যে সম্পর্কটা আছে সেটা নিয়ে আমি খুশি। উনি আমার মেন্টর, আমার কাজ শেয়ার করছেন, উৎসাহ দিচ্ছেন। অভিনয়ের যদি সুযোগ আসে নিশ্চয়ই করব। আর যদি ভাল গল্প পাই তাহলেও কাজ করা যেতে পারে। কিন্তু, এমনটা নয় যে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কাজ করতে হবে ভেবে ছবির গল্প ভাবব বা আমাকে জোর করে অভিনয় করতে হবে।
বর্তমান প্রজন্মের কোন অভিনতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে?
আমার নেশা অভিনয়। লস অ্যাঞ্জেলসে আমি একজন পেশাদার অভিনেত্রী। কলকাতাতেও অনেক ছবিতে অভিনয় করেছি। পাশাপাশি ছবি পরিচালনার কাজটা করি। সুদীপ্তা ম্যাম (সুদীপ্তা চট্টোপাধ্যায়)-এর সঙ্গে কাজ করার খুব ইচ্ছে। গৌতম স্যার, পরমব্রত, অপর্ণা ম্যাম, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় কাজ করতে চাই। আদিল হুসেন স্যারের সঙ্গে কাজ করার স্বপ্ন দেখি।
অপর্ণা সেনের সঙ্গে কখনও দেখা করার সুযোগ হয়েছে? মেয়ের নাম আর আপনার নাম নিয়ে কোনও মজার মুহূর্ত?
কোনওদিন দেখা করার সুযোগটাই হয়নি। তবে আমাদের দুজেনর নামের বানানটা একদম আলাদা। বাংলায় আমাকে কঙ্কনা বানিয়ে দেয়। কিন্তু, এটা আমার অরিজিনাল নামের উচ্চারণ নয়। তবে একজন পরিচালক হিসেবে কঙ্কনা আমার ভীষণ প্রিয়। নারীকেন্দ্রীক চরিত্র বললে আমার পছন্দ স্মিতা পাটিল, তব্বু, কঙ্কনা সেনশর্মা, নন্দিতা দাস।