Advertisment

করণ জোহর: যাঁর ব্যাপ্তি নব্বইয়ের দশক থেকে জেনারেশন ওয়াই পর্যন্ত

আজ, তিনি যখন ৪৬টা বসন্ত পার করে এলেন, তখন বলাই যায় করণ জোহর নিজের জায়গাটা মানুষের মনে ঠিক তৈরি করেছেন। তবে লড়াই করে নয়, তাঁর প্রাপ্তি পুরোটাই বক্স অফিসের আনুকূল্যে। বলিউডের অন্য কোন পরিচালকের সঙ্গে তাঁর মিল খুঁজে পাওয়া দুর্লভ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

আরুশি জৈন 

Advertisment

কিছুদিন আগে আমি করণ জোহরের আত্মজীবনী 'অ্যান আনসুটেবল বয়' পড়ছিলাম। সাহিত্যগুণ যেমনই হোক, বইটি পড়া ভীষণ জরুরি। কারণ বইটিতে করণ লিখেছেন ছোটবেলায় তিনি কেমন জবুথুবু ছিলেন, কীভাবে খাদ্য তাঁর প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠল, ইত্যাদি। ভাবুন তো, এমন একজন সেলিব্রিটি যিনি সর্বজনবিদিত, তাঁর খোলামেলা স্বভাব, তাঁর অ্যাটিটিউড, বলিউডে অফুরন্ত বন্ধুর জন্য, তিনি কিনা যুদ্ধ করছেন তাঁর নানা অব্যক্ত অনুভূতি নিয়ে। বইটা পড়া শেষ করতে করতে বুঝতে পারলাম করণের লাজুক কিশোর থেকে বি টাউনের চর্চার বিষয় হয়ে ওঠার রহস্যটা, চিনলাম পরিচালক করণ জোহর বা কেজো কে।

এটা মোটেই বাড়িয়ে বলা হবে না যে করণ জোহরের মতো ফিল্মমেকার বলিউডে দ্বিতীয় নেই। একাধারে তিনি টেলিভিশন তারকা তো অন্যদিকে বলিউড ব্যক্তিত্ব, এমন একজন মানুষ যিনি তাঁর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কথা বলেন, যাঁর নিজের সেক্সুয়্যালিটি মেনে নিতে কোন সংশয় নেই, নিজের পছন্দ নিয়ে এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে সিঙ্গল ফাদার থেকে রেডিও জকি হয়ে লাভ গুরু হওয়ার যাত্রাটা অনায়াসে পেরোতে পারেন। এনটারটেনমেন্টের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিচালক তাঁর অবিসংবাদী উপস্থিতির স্বাক্ষর রেখেছেন।

টেলিভিশনের তাঁর শো মানেই হাসির কলরোল আর অনেকটা বাঁধনহীন কথোপকথন। বছরের পর বছর 'কফি উইথ করণে' তারকাদের রীতিমত কালঘাম ছুটিয়ে দেন তিনি, তাই এই শোয়ের জনপ্রিয়তা সবসময়ই তুঙ্গে। এর কারণ যদি শুধুমাত্র কেজোই হন, তাহলেই বা কার এই সাহসটা হয় যে, সলমন খানকে জিজ্ঞেস করেন তিনি ভার্জিন কি না, কিংবা রণবীর কাপুরের ছুটি কাটানোর সঙ্গীর কথা জানতে চান। শুধু তাই নয়, তাঁকে নিয়ে হাসিঠাট্টা হলেও তিনি জানেন কীভাবে তা ফিরিয়ে দিতে হয়। কেবলমাত্র সঞ্চালক হিসাবে নয়, রিয়্যালিটি শোয়ের বিচারকের আসনেও তিনি অনেকের গডফাদার। প্রতিযোগীদের আনন্দে তিনি খুশি হন আবার দুঃখে কষ্ট পান, এটাই হয়তো তার সঙ্গে দর্শককে আত্মীয়তায় বাঁধে।

publive-image করণ জোহর - ভারতীয় টেলিভিশনের জনপ্রিয় সঞ্চালক, তাঁর শো মানেই হাসির কলরোল আর অনেকটা বাঁধনহীন কথোপকথন

সেক্সুয়্যাল ওরিয়েন্টেশনের মত বিষয়ে করণ সবসময় স্বতঃস্ফূর্ত, কুন্ঠার জায়গা নেই সেখানে। তাঁর নিজের সেক্সুয়্যাল ওরিয়েন্টেশন অনেকদিন চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল, কিন্তু তিনি সেটাও পৃথিবীর সামনে সদর্পে স্বীকার করেছেন। বইয়ের একটি জায়গায় তিনি লিখেছেন, "প্রত্যেকে আমার সেক্সুয়্যাল ওরিয়েন্টেশন সম্পর্কে অবগত, আমার সেটা চিৎকার করে বলার প্রয়োজন নেই। বলার প্রয়োজন হলেও আমি সেটা করতে পারতাম না কারণ আমাদের দেশে তা করলে জেল হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সেইজন্যই, আমি করণ জোহর সেই তিনটি শব্দ বলতে পারব না যেটা মানুষ আমার সম্বন্ধে জানেন।"

publive-image করণকে নিয়ে হাসিঠাট্টা হলেও তিনি জানেন কীভাবে তা ফিরিয়ে দিতে হয়।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, 'এ দিল হ্যায় মুশকিলের' পরিচালক নিজের জীবনের পছন্দ নিয়ে সজাগ হয়েছেন। যেখানে অন্য কোন পরিচালক সামনে আসতেই লজ্জা পান, সেখানে কেজো হাজার হাজার দর্শকের সামনে নাচতেও পিছপা হননা। কেনই বা হবেন? তিনি নিজে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "দেখুন, আমি আদ্যপান্ত পাঞ্জাবি, আমি নাচতে ভালবাসি। তবে হ্যাঁ, একটু অদ্ভুদভাবেই নাচি। আমার নাচের মধ্যে বলিউডের নায়িকা আর পাঞ্জাবি ছেলের একটা সংমিশ্রণ আছে। আর সেটা নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই।"

সম্প্রতি তাঁর যমজ সন্তান যশ ও রুহি টিনসেল টাউনের নতুন চর্চার বিষয়। করণের সিদ্ধান্ত বহু চর্চিত ও বিশ্লেষিত হলেও তিনি কিন্তু নতুন উদাহরণ তৈরি করেছেন মানুষের কাছে। মাতৃত্ব যখন গর্বের সঙ্গে পালিত হচ্ছে, সেখানে সিঙ্গল ফাদারের ধারনাকে দৃঢ় করেছেন তিনিই।

আরও পড়ুন, জন্মদিনে কী উপহার পেলেন মাধুরী দীক্ষিত, দেখুন!

আজ, তিনি যখন ৪৬টা বসন্ত পার করে এলেন, তখন বলাই যায় করণ জোহর নিজের জায়গাটা মানুষের মনে ঠিক তৈরি করেছেন। তবে লড়াই করে নয়, তার প্রাপ্তি পুরোটাই বক্স অফিসের আনুকূল্যে। বলিউডের অন্য কোন পরিচালকের সঙ্গে তার মিল খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। শুভ জন্মদিন, করণ জোহর।

karan johar bollywood
Advertisment