কৌশিক সেন
রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের অনেক গুণ রয়েছে। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরবর্তী নান্দীকারকে গড়ে তোলার পিছনে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের একটা বিরাট অবদান রয়েছে। নিজে অনেক ভাল ভাল নাটক পরিচালনা করেছেন। 'শেষ সাক্ষাৎকার' থেকে শুরু করে 'ফুটবল', 'গোত্রহীন', 'শঙ্খপুরের সুকন্যা'-র মতো অনেক নাটক রয়েছে যেগুলো আমার ব্যক্তিগতভাবে ভীষণ ভাল লাগে। ওঁর তত্ত্বাবধানে দেবশঙ্কর হালদার, সোহিনী সেনগুপ্ত, গৌতম হালদারের মতো অনেকে ডানা মেলেছেন। স্বাতীলেখা সেনগুপ্তকে নিয়ে 'অ্যান্টিমনি' ওঁর কিংবদন্তী প্রযোজনা। অসম্ভব ভাল নাটক অনুবাদ করেন। এইসব গুণগুলো আগে স্বীকার করতে হবে। তারপর যেটা বলতে হবে সেটা হল ওঁর ভিতর অসূয়াটা ভীষণ বেশি। এটা অন্য কেউ বলতে দ্বিধা করলেও আমার বলতে কোনও অসুবিধা নেই।
এটা আজ বলে নয়, গৌতম হালদার যখন নান্দীকারে ছিলেন তখন ওঁর সঙ্গে তুলনা করে আমাদের প্রজন্মের যাঁরা নির্দেশক-অভিনেতা তাঁদেরও অপমান করেছেন। এটা ওঁর স্বভাব, যেটা নতুন নয়। কিন্তু, চরিত্রের এই দিকটা ভাল নয়, শিক্ষনীয় নয়। উৎপল দত্ত 'স্ট্যালিন ৩৪' (Stalin 1934)-এর বাইরে আর কোনও ভাল নাটক করেননি সেটা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। আবার যদি বলা হয় উৎপল দত্ত শুধুমাত্র একজন কৌতুকাভিনেতা ছিলেন তাহলে 'আগন্তুক', 'জন অরণ্য', 'হীরক রাজার দেশে'-র মতো সিনেমায় অভিনয়ের কথা বলতে পারি। তাঁর এই কাজগুলো যদি কেউ জোর করে না দেখতে চায় তাহলে তো সে অন্ধ।
আমার বাবা উৎপল দত্তের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন সেই সঙ্গে 'অঙ্গার' নাটকের হিরো। উৎপল দত্তের নির্দশনায় 'অঙ্গার', 'রিচের মহল' তার আগে 'জুলিয়েট সিজার', 'ফেরারি ফৌজ' পর্যন্ত আমার বাবা লিটল থিয়েটার গ্রুপে ছিলেন। তারপর সেটা ভেঙে তৈরি হয় পিপলস লিটল থিয়েটার।
আমি অনেকটা কাছ থেকে উৎপল দত্তকে জেনেছি, চিনেছি। সেই সঙ্গে অবশ্যই ওঁর সম্পর্কে অনেক পড়াশোনা করেছি। তবে আমার জানাটা রুদ্রবাবুর থেকে একদম আলাদা। আমার মতে, রুদ্রবাবু যে কথাটা বলেছেন সেটা খুবই নক্কারজনক। আমি আবারও একটা কথাই বলতে চাই, এটা কিন্তু বয়স হয়ে গিয়েছে বলে ভুল করে বলে ফেলেছেন এমনটা নয়। উনি চিরকালই এরকম। আমাদের থিয়েটারের মানুষজন যথাসময় প্রতিবাদ করেনি। যতটা দরকার ছিল ততটা করা হয়নি। সেইজন্যই আজ এটা বড় আকার ধারণ করেছে। অসুখ যেমন বেড়ে যায় অসূয়াটাও বেড়ে যায়।
সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখন
Kaushik Sen: রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের অনেক গুণ রয়েছে কিন্তু ওঁর ভিতর অসূয়াটা অসুখের মতো বেড়ে যাচ্ছে: কৌশিক সেন
Rudraprasad Sengupta On Utpal Dutt: প্রয়াত কিংবদন্তী অভিনেতা উৎপল দত্ত প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন নাট্যকার রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। সেই প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে কথা বললেন বর্তমান প্রজন্মের নির্দেশক-অভিনেতা কৌশিক সেন।
Rudraprasad Sengupta On Utpal Dutt: প্রয়াত কিংবদন্তী অভিনেতা উৎপল দত্ত প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন নাট্যকার রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। সেই প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে কথা বললেন বর্তমান প্রজন্মের নির্দেশক-অভিনেতা কৌশিক সেন।
আমাদের থিয়েটারের মানুষজন যথাসময় প্রতিবাদ করেনি : কৌশিক সেন
কৌশিক সেন
রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের অনেক গুণ রয়েছে। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরবর্তী নান্দীকারকে গড়ে তোলার পিছনে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের একটা বিরাট অবদান রয়েছে। নিজে অনেক ভাল ভাল নাটক পরিচালনা করেছেন। 'শেষ সাক্ষাৎকার' থেকে শুরু করে 'ফুটবল', 'গোত্রহীন', 'শঙ্খপুরের সুকন্যা'-র মতো অনেক নাটক রয়েছে যেগুলো আমার ব্যক্তিগতভাবে ভীষণ ভাল লাগে। ওঁর তত্ত্বাবধানে দেবশঙ্কর হালদার, সোহিনী সেনগুপ্ত, গৌতম হালদারের মতো অনেকে ডানা মেলেছেন। স্বাতীলেখা সেনগুপ্তকে নিয়ে 'অ্যান্টিমনি' ওঁর কিংবদন্তী প্রযোজনা। অসম্ভব ভাল নাটক অনুবাদ করেন। এইসব গুণগুলো আগে স্বীকার করতে হবে। তারপর যেটা বলতে হবে সেটা হল ওঁর ভিতর অসূয়াটা ভীষণ বেশি। এটা অন্য কেউ বলতে দ্বিধা করলেও আমার বলতে কোনও অসুবিধা নেই।
এটা আজ বলে নয়, গৌতম হালদার যখন নান্দীকারে ছিলেন তখন ওঁর সঙ্গে তুলনা করে আমাদের প্রজন্মের যাঁরা নির্দেশক-অভিনেতা তাঁদেরও অপমান করেছেন। এটা ওঁর স্বভাব, যেটা নতুন নয়। কিন্তু, চরিত্রের এই দিকটা ভাল নয়, শিক্ষনীয় নয়। উৎপল দত্ত 'স্ট্যালিন ৩৪' (Stalin 1934)-এর বাইরে আর কোনও ভাল নাটক করেননি সেটা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। আবার যদি বলা হয় উৎপল দত্ত শুধুমাত্র একজন কৌতুকাভিনেতা ছিলেন তাহলে 'আগন্তুক', 'জন অরণ্য', 'হীরক রাজার দেশে'-র মতো সিনেমায় অভিনয়ের কথা বলতে পারি। তাঁর এই কাজগুলো যদি কেউ জোর করে না দেখতে চায় তাহলে তো সে অন্ধ।
আমার বাবা উৎপল দত্তের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন সেই সঙ্গে 'অঙ্গার' নাটকের হিরো। উৎপল দত্তের নির্দশনায় 'অঙ্গার', 'রিচের মহল' তার আগে 'জুলিয়েট সিজার', 'ফেরারি ফৌজ' পর্যন্ত আমার বাবা লিটল থিয়েটার গ্রুপে ছিলেন। তারপর সেটা ভেঙে তৈরি হয় পিপলস লিটল থিয়েটার।
আমি অনেকটা কাছ থেকে উৎপল দত্তকে জেনেছি, চিনেছি। সেই সঙ্গে অবশ্যই ওঁর সম্পর্কে অনেক পড়াশোনা করেছি। তবে আমার জানাটা রুদ্রবাবুর থেকে একদম আলাদা। আমার মতে, রুদ্রবাবু যে কথাটা বলেছেন সেটা খুবই নক্কারজনক। আমি আবারও একটা কথাই বলতে চাই, এটা কিন্তু বয়স হয়ে গিয়েছে বলে ভুল করে বলে ফেলেছেন এমনটা নয়। উনি চিরকালই এরকম। আমাদের থিয়েটারের মানুষজন যথাসময় প্রতিবাদ করেনি। যতটা দরকার ছিল ততটা করা হয়নি। সেইজন্যই আজ এটা বড় আকার ধারণ করেছে। অসুখ যেমন বেড়ে যায় অসূয়াটাও বেড়ে যায়।
সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখন