Advertisment

Mitin Mashi Review: ছবি মনোরঞ্জক কিন্তু গল্পের মিতিনের চেয়ে অনেকটাই আলাদা

Mitin Mashi Review: সাহিত্য থেকে সিনেমা মানেই বইয়ের পাতা রিডিং পড়া হবে না দৃশ্যমাধ্যমে এটাই কাম্য। কিন্তু মিতিনের মাতৃত্ব কেড়ে নেওয়া মানে সুচিত্রা ভট্টাচার্যের সৃষ্টিকেই অস্বীকার করা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Koel Mallick starrer Arindam Sil's Mitin Mashi is a pleasant watch

ছবি: সিনেমার সোশাল মিডিয়া পোস্টার থেকে

Mitin Mashi Movie Cast: কোয়েল মল্লিক, বিনয় পাঠক, জুন মালিয়া, শুভ্রজিৎ দত্ত, রিয়া বণিক, কোয়েল দাস

Advertisment

Mitin Mashi Movie Director: অরিন্দম শীল

Mitin Mashi Movie Rating: ৩.৫/৫

Mitin Mashi movie review: বাংলা ছবিতে এক নতুন গোয়েন্দার আবির্ভাব যা অচিরেই একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির আকার নেবে (আলাদা করে প্রথম মহিলা গোয়েন্দা বলে অভিহিত করলে সেখানে জেন্ডার বায়াসই প্রকাশ পায়)। প্রতি বছর নয়তো দুবছরে একবার, পুজো-দীপাবলি অথবা যে কোনও উৎসবে বাঙালির পাতে পড়বে মিতিনমাসির নিত্যনতুন অ্যাডভেঞ্চারের গল্প। তাতে খারাপ খুব একটা কিছু হবে না। গুপ্তধন সিরিজের থেকে মিতিন সিরিজটি সবদিক থেকেই উপাদেয় হবে বেশি। কিন্তু অরিন্দম শীলের মিতিনমাসি আর সুচিত্রা ভট্টাচার্যের প্রজ্ঞাপারমিতা-- দুটি ভিন্ন প্যারাডাইম।

Koel Mallick starrer Arindam Sil's Mitin Mashi is a pleasant watch তার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য একটা ঠান্ডা দৃষ্টি, যে দৃষ্টির ভিতরে রয়েছে প্রতি ন্যানোসেকেন্ডে ঘটে যাওয়া বহুস্তরীয় লজিকাল ডিডাকশন।

কোনও সাহিত্য থেকে যখন সিনেমা তৈরি হয় তখন যদি ওই লেখাটিই দর্শক পর্দায় পরীক্ষার পড়া মুখস্থের মতো পড়তে থাকেন, তাহলে অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে সিনেমা বানানোর কোনও মানে হয় না। সিনেমায় মূল টেক্সটের উপর ভিত্তি করে একটি নতুন টেক্সট তৈরি হবে, সেটাই কাম্য। তাই পরিচালক অরিন্দম শীল ও তাঁর সহ-চিত্রনাট্যকার পদ্মনাভ দাশগুপ্ত, সুচিত্রা ভট্টাচার্য-র 'হাতে মাত্র তিনটে দিন' গল্পটিকে সিনেমার প্রয়োজনে কিঞ্চিৎ বদলেছেন। তার থেকেও বড় কথা, মিতিন চরিত্রটিকেও নতুন করে গড়েছেন। এই ছবিতে মিতিন যা হয়ে উঠেছে তা যুগোপযোগী হয়তো কিন্তু সাহিত্যিকের চরিত্রের এসেন্স কিছুটা হারিয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘পাসওয়ার্ড’-এ নিরাপদ নয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নথি

সুচিত্রা ভট্টাচার্যের মিতিন একজন মা, একটি স্বাভাবিক চঞ্চল বাচ্চার মা, যাকে নিয়মিত পড়তে বসাতে হয়, মাঝেমধ্যে কঠিন অঙ্ক দিয়ে নাজেহাল করতে হয়। বুমবুমের স্কুল, হোমওয়ার্ক, বাড়ির খুঁটিনাটি সামলানো, স্বামী পার্থর প্রতি তার প্রেম এবং শাসন, বোনঝি টুপুরকেও কড়া নজরে রাখা-- এই সবকিছুর সঙ্গেই মিলেমিশে যায় মিতিনের গোয়েন্দাগিরি। এই অভিনবত্বের জন্যেই মিতিন এতটা জনপ্রিয় বাঙালি পাঠকের কাছে।

Koel Mallick starrer Arindam Sil's Mitin Mashi is a pleasant watch মিতিন যা হয়ে উঠেছে তা যুগোপযোগী হয়তো কিন্তু সাহিত্যিকের চরিত্রের এসেন্সটি হারিয়ে গিয়েছে।

কোয়েল মল্লিক অভিনীত মিতিনমাসি চরিত্রটিতে মিতিনের ক্ষুরধার ব্যক্তিত্ব এসেছে, বুদ্ধি ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব এসেছে। তারই সঙ্গে এসেছে মূল্যবোধসম্পন্ন একটি দয়ালু মন। কিন্তু অনুপস্থিত মাতৃত্ব। টুপুর-পার্থ ছাড়া যেমন মিতিন অসম্পূর্ণ, বুমবুমকে ছাড়াও মিতিনকে তাই অসম্পূর্ণ লাগবে রক্ষণশীল মিতিন-পাঠকের। তবে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে এই ছবির বহু দর্শকই সুচিত্রা ভট্টাচার্যের কোনও লেখারই পাতা উল্টে দেখেননি। তাই ছবি দেখতে বসে তাদের মনে বুমবুম-কেন্দ্রিক কোনও প্রশ্নও উঠবে না। কারণ তা বাদে ছবিটি বেশ মনোরঞ্জক, দুএকটি টিপিকাল খটকা ছাড়া, যে খটকাগুলি বাংলা ছবি দেখতে বসে প্রায়শই কটকট করে মনের মধ্যে বেজে ওঠে।

আরও পড়ুন: Mahatma Gandhi @ 150: রাম রাজ্য এবং হিন্দি ছবিতে বাপু

মিতিন এখানে সম্ভবত রানি মুখোপাধ্যায়ের 'মরদানি' থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কিঞ্চিৎ অ্যাকশন করে। কোনও কোনও সময় সেটা অতিরঞ্জিতও লাগে। যেমন ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যে মিতিন যখন বুক চিতিয়ে, রীতিমতো বাণিজ্যিক ছবির নায়কদের মতো গাড়ি থেকে নেমে হাতা গোটায়, এটা না জেনেই যে সামনের গাড়িতে বসা অপরাধীরা গুলি চালাবে কি চালাবে না, তখন গোয়েন্দা মিতিনের বিচক্ষণতায় খটকা লাগে। আবার প্রথম দৃশ্যে যখন ডিসিডিডি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে ঘোষণা করে যে মিতিনের একটি প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সি রয়েছে, তখন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে যায় ভাবুক ইমোজি। পেশাদার ডিটেকটিভরা জনান্তিকে ভিজিটিং কার্ড ধরাতে পারেন কিন্তু মাইকে নিজেকে ডিটেকটিভ বলে ঘোষণা করেন না, তদন্তের সুবিধার্থেই। এই টেকনোলজির বাড়বাড়ন্তের যুগে ভাইরাল ভিডিও হয়ে গেলে কি আর ভেক ধরে গোয়েন্দাগিরিটা করতে পারবে মিতিনমাসি?

এই ছবির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকগুলি হল সিনেম্যাটোগ্রাফি, অকারণ দীর্ঘায়িত না করা একটি চিত্রনাট্য, অত্যন্ত ভালো আবহ এবং সঙ্গীত পরিচালনা ও সর্বোপরি কোয়েল মল্লিকের অভিনয়। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের মিতিন বেশ ভাবলেশহীন বাইরে থেকে। সিনেমায় তেমনটা দেখালে বাণিজ্যিক ছবির দর্শক বোর হবেন। তাই অরিন্দম শীলের মিতিন অনেক বেশি অভিব্যক্তিপূর্ণ। তার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য একটা ঠান্ডা দৃষ্টি, যে দৃষ্টির ভিতরে রয়েছে প্রতি ন্যানোসেকেন্ডে ঘটে যাওয়া বহুস্তরীয় লজিকাল ডিডাকশন। কোয়েলের এই পরিণত এবং আধুনিক অভিনয়ই এই ছবিটি ভালো লাগার অন্যতম কারণ। তাঁর সঙ্গে ঠিকঠাক সঙ্গত করেছেন রিয়া বণিক টুপুর চরিত্রে এবং শুভ্রজিৎ দত্ত পার্থ চরিত্রে। জুন মালিয়া ও বিনয় পাঠকের অভিনয় নিয়ে নতুন করে আর বলার কিছু নেই। পার্শ্বচরিত্রগুলির কাস্টিংও ভালো। কোয়েল দাস, অনির্বাণ চক্রবর্তী, দেবপ্রিয় মুখোপাধ্যায় যেমন ভালো, তেমনই একটি ক্যামিও চরিত্রে ভালো লেগেছে নন্দিতা পালচৌধুরীকে। খুদে দুই অভিনেতার অভিনয়ও দর্শকের ভালো লাগবে।

Movie Review bengali films Bangla Movie Review
Advertisment