Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

রিপোর্টারের ডায়েরি: পাল্টে যাওয়া উৎসবে সেলফি বেশি, ছবি দেখার ভিড় কম

"ফেস্টিভ্যাল থেকে আন্তর্জাতিক শব্দটা তুলে দিলেই তো হয়। একে তো বাইরের নতুন ছবির সংখ্যা কম, তার উপর যাও বা আছে, সেগুলোর প্রদর্শনীর সময় বদলে যাচ্ছে। অদ্ভুত।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ফোটো- শশী ঘোষ

সত্যিই তো মেলা বসেছে। খাবার-দাবারের স্টল, দূরে বাংলা অ্যাকাডেমির গা ঘেঁষে দু-তিনটে বইয়ের স্টল (প্রতিবার বসে), আর পাঁচটি সেলফি জোন, সঙ্গ দিতে মানুষের ফ্যাশন প্যারেড। এতকিছুর মধ্যে ফাঁক পেলে কোনও একটা হলে ঢুকে বসে পড়া, ছবি না পছন্দ হলে বেরিয়ে আসতেও বাধা নেই। আন্দাজ করতে পারছেন নিশ্চয়ই। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের কথাই হচ্ছে। ইংরেজিতে লিখলে Kolkata International Film Festival, সংক্ষেপে KIFF।

Advertisment

ছবি না দেখা মানুষের সংখ্যাটা তুলনায় বেশি হলেও 'ফিল্ম বাফ' যে একদম নেই, একথা বললে ভুল বলা হবে। নন্দন ওয়ান কিংবা রবীন্দ্র সদনের সামনে লাইনটা দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিনে সন্ধ্যেবেলায় বেশ ভিড় ছিল, হ্যাঁ মশাই, সিনেমা দেখারই ভিড় ছিল। সকালে হয়নি, তার কারণটা কিন্তু নন্দন কর্তৃপক্ষ। কেমন জানি সাপ-লুডো খেলার মতো একবার এই হল তো একবার ওই হল, বদলে দিচ্ছেন সিনেমার সময়সূচী।

আরও পড়ুন: বিরল ভাষার ছবির স্ক্রিনিংয়ে অভিনবত্ব চলচ্চিত্র উৎসবে

চলচ্চিত্র উৎসব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল চেয়ারম্যানের পদে বদল নিয়ে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের পরিবর্তে সেই আসনে রাজ চক্রবর্তী বসার পর থেকেই কেমন একটা 'প্রত্যাশা পূরণ হবে না' গোছের ভাবনা এসেছিল মানুষের মাথায়। সেই চিত্রের সঙ্গেই সবটা না হলেও বেশ কিছুটা মিল পেয়েছেন তারা। নন্দন চত্বরে ডিউটি পড়েছে এমন এক পুলিশ আধিকারিকের বয়ান, এখানে ৯০ শতাংশ মানুষ এসেছেন ঘুরতে, বাকি ১০ শতাংশ সিরিয়াস দর্শক। বিগত চারদিনে সেই চিত্র অবশ্য চোখে পড়েনি তা নয়। সিনেমা দেখার জন্য কোনও লাইন নেই, তবে সেলফি জোনে লাইন দিয়ে ছবি তুলছেন মানুষ।

publive-image কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের একজিবিশন। ফোটো- শশী ঘোষ

এ তো গেল দর্শকের কথা। তবে ছবির তালিকাও মনঃপুত হয়নি অনেকের। যাও বা খুঁজে পেতে দিনের শুরুতে একটা তালিকা তৈরি করেছিলেন, তা আর মানা গেল কই। 'টেকনিক্যাল এরর'-এর কারণে সবচেয়ে বেশি ছবির প্রদর্শনী আটকে গিয়েছে নন্দন ওয়ানে। তাহলে প্রশ্ন, উৎসবের আগের এতগুলো মাস ধরে কী 'রেনোভেশন' হলো? এমনই অবস্থা যে চেয়ারম্যানকে খোদ এসে ক্ষমা চাইতে হচ্ছে?

আরও পড়ুন: দেশি-বিদেশি ৫টি ছোটদের ছবি যা দেখা জরুরি

চোখে পড়েছে আরও একটা দিক। কেন জানিনা, আবারও 'ফিল্ম বাফ'-রা বলছেন, "ফেস্টিভ্যাল থেকে আন্তর্জাতিক শব্দটা তুলে দিলেই তো হয়। একে তো বাইরের নতুন ছবির সংখ্যা কম, তার উপর যাও বা আছে, সেগুলোর প্রদর্শনীর সময় বদলে যাচ্ছে। অদ্ভুত।" ফিল্ম স্কুলের এক পড়ুয়ার কথায়, "শহরে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল চলছে আর বাড়িতে থাকব, ভাবলে গিল্ট হয়, কিন্তু এসে দেখবটা কী? সব ছবির সময় বদলে দিচ্ছে।"

publive-image নন্দনে চলচ্চিত্র উৎসব চত্বর। ফোটো- শশী ঘোষ

আরও পড়ুন: এনএসডি-কে ন্যাশানাল স্কুল অফ টেলিভিশন বলতে ইচ্ছে করে: রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত

বিগত কয়েক বছর ধরে চালু হয়েছে বিশেষ বিভাগ, 'পাড়ায় পাড়ায় সিনেমা' - যদিও সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়েছিল, এক বছরের বাংলা ছবি দেখানো হবে পাড়ায় পাড়ায় প্রোজেকশন করে। কিন্তু তাতেও সমস্যা রয়েছে দর্শকদের। তাঁদের বক্তব্য, এটা তো সারাবছর করা যায়, চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য আলাদা কী হলো? তুলনামুলকভাবে সিরিয়াস সিনেপ্রেমীদের বক্তব্য, "এখন কেন ইন্ডিপেনডেন্ট ছবি দেখানো হচ্ছে না?"

মুক্ত মঞ্চে সিনেমার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও সেখানে কোনও ইন্ডিপেনডেন্ট ছবির পরিচালক নেই, অথচ ছবির বিষয় - 'বড় বাজেটে ব্লকবাস্টার নাকি কম বাজেটে ভাল ছবি'। যাঁরা সত্যিই কম বাজেটে ছবি বানান, তাঁরাই প্য়ানেলে নেই! আশ্চর্যের বিষয়, প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের মতো পরিচালক তাঁর ছবির টিকিট বিক্রি করছেন নন্দন চত্বরেই। ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল সৌকর্য ঘোষাল, অর্জুন দত্তের মতো তরুণ পরিচালকদের। অথচ মঞ্চে দেখা মিলেছে টলিউডের প্রথম সারির।

আরও পড়ুন:দ্য এন্ড উইল বি স্পেকটাক্যুলার’-এর নেপথ্য কাহিনি শোনালেন এরসিন সেলিক

সব মিলিয়ে টুকরো টুকরো ছবি জুড়লে মনে হয়, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব কর্মাশিয়াল হয়েছে ঠিকই, তবে মানে বাড়াতে পারে নি। যদিও এত কিছুর মাঝেও বিশেষ কৃতিত্ব প্রাপ্য রাজের। কিছু করার থাকুক বা না থাকুক, আগ বাড়িয়ে সমাধানের চেষ্টা করছেন প্রতিটি সমস্যার। আর কিছু না হোক, তাঁর ম্যানেজেমেন্ট প্রশংসনীয়।

Kolkata International Film Festival
Advertisment