Koushani Mukherjee: পূর্ণার ব্যথাকে ফুটিয়ে তুলতে মাকে হারানোর যন্ত্রণা খোদাই করে প্রতিটি দৃশ্যে কেঁদেছি: কৌশানী

Koushani Mukherjee Killbill Society: কিলবিল সোসাইটিতে পূর্ণার চরিত্রে অভিনয় করেছেন কৌশানী মুখোপাধ্যায়। এই চরিত্রটার সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে কৌশানীর মাকে হারানোর যন্ত্রণা। ছবি মুক্তির আগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে সেই কথা শেয়ার করলেন কৌশানী।

Koushani Mukherjee Killbill Society: কিলবিল সোসাইটিতে পূর্ণার চরিত্রে অভিনয় করেছেন কৌশানী মুখোপাধ্যায়। এই চরিত্রটার সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে কৌশানীর মাকে হারানোর যন্ত্রণা। ছবি মুক্তির আগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে সেই কথা শেয়ার করলেন কৌশানী।

author-image
Kasturi Kundu
আপডেট করা হয়েছে
New Update
কিলবিলে আমি চুমুর দৃশ্যে রাজি হয়েছি মানে আগামীতে আমি সব ছবির ক্ষেত্রে রাজি হব এমনটা নয়: কৌশানী

কিলবিলে চুমুর দৃশ্যে রাজি হয়েছি মানে আগামীতে সব ছবির ক্ষেত্রে রাজি হব এমনটা নয়: কৌশানী

বহুরূপীতে কৌশানী মুখোপাধ্যায়ের যে স্পার্কটা দর্শক দেখেছে সেই সুযোগটা আরও আগে পেলে ভাল হত, আপশোস হয়?

Advertisment

কৌশানী:  হ্যাঁ, অনেকটা দেরিতেই আমাকে আবিস্কার করা হল। আমিও যে এই ধরনের চ্যালেঞ্জিং, ইনটেন্স চরিত্রে অভিনয় করতে পারি সেই ভরসাটা অনেকগুলো বছর পর দেখানো হল। এটা যদি আগে হত তাহলে আমার এতদিনের কেরিয়ারে আরও অনেক উন্নতি করতে পারতাম। আমিও আমার ট্যালেন্টটা সকলের সামনে মেলে ধরার সুযোগ পেতাম। বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন একজন অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারতাম। সেই জায়গা থেকে একটা আপশোস তো থেকেই যায়। তবে আমার পুর্নজন্ম যখন হয়েছে আগামীতে নিজের সেরাটুকু দেওয়ার চেষ্টা করব। এটা আমার কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। আশা করছি আমার কাছে আগামীতে ভাল সুযোগ আসবে আর আমাকে ছক্কা মারতে হবে। বহুরূপীতে ঝিমলি সকলের নজর কেড়েছে। তার আগে আবার প্রলয়তে মনিমা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তারপর কিলবিলের পূর্ণা। এই চরিত্রটা আমার কাছে স্পেশাল। কারণ ছবির প্রতিটি ফ্রেমজুড়ে পূর্ণা রয়েছে। আমার ১০ বছরের কেরিয়ারে এটা আমার প্রথম অভিজ্ঞতা শুটিংয়ের ফাঁকে দুমিনিট খাওয়ার সময় পাচ্ছি না। সকলে বসে গল্প করলেও আমাকে শটের জন্য ডাকছে। প্রতিটি সিনের জন্য আমাকে যেতে হচ্ছে, এটা বিরাট প্রাপ্তি। 

সিনেমার সংলাপে মেয়েবেলায় ফিরে যাওয়ার ইচ্ছের কথা বলা হয়েছে। বাস্তবে যদি ছোটবেলা কোনওদিন ফিরে পাওয়ার সুযোগ হয় তাহলে কোন কাজটা করতে চাইবেন?

কৌশানী: আমাদের কিন্তু, কম-বেশি প্রত্যেকেরই মাঝেমধ্যে মনে হয় যদি ছোটবেলায় ফিরে যেতে পারতাম। এটা তো নস্ট্যালজিয়া। কাজের ব্যস্ততা, মাথায় হাজার চিন্তা, আরও কত কী..সেই সব থেকে একটু রিল্যাক্সের জন্যই আমাদের মনে হয় আবার যদি ছোটবেলায় ফিরে যাওয়া যেত। ওটা তো আমাদের কাছে গোল্ডেন টাইম। বন্ধুবান্ধব, স্কুল, পড়াশোনা, পুজোর আড্ডা, মা-বাবার সঙ্গে সময় কাটানো, রাস্তায় দাঁড়িয়ে যখন খুশি ফুচকা খাওয়া, মাথায় কোনও চিন্তাভাবনা নেই, কেউ ছবি তুলে নিল এটা ভাবতে হয় না। এইরকম মুহূর্তগুলো ছোটবেলাতেই পাওয়া সম্ভব। তাই আমিও যখন দৈনন্দিন জীবনে খুব ক্লান্তি অনুভব করি আমারও মনে হয় মেয়েবেলায় ফিরে গিয়ে এই দিনগুলো আবার এনজয় করি।

Advertisment

হেমলক সোসাইটির মতো কিলবিল সোসাইটির গল্পজুড়েও রয়েছে ডিপপ্রেশন। ব্যক্তিগতজীবনে এইরকম কোনও অভিজ্ঞতা?

কৌশানী:  আমি  মেন্টালি নিজেকে সবসময় স্ট্রং রাখি। ডিপ্রেশন শব্দটা খুব ভারি। সবার জীবনেই ক্রাইসিস আছে, প্রচণ্ড কষ্টে চোখে জল আসে। কিন্তু, সেটাকে যদি ডিপ্রেশনে নিয়ে যেতে বাধ্য কর তাহলেই ওই স্টেজে পৌঁছবে। তার আগে যদি সলিউশন খোঁজা হয় তাহলে মানুষকে সেই জায়গায় যেতে হয় না। যে মানুষটা আত্মহত্যার কথা ভাবছে সে কিন্তু তখন স্বাভাবিক নয়। মানসিক চাপ চরমসীমায় পৌঁছলেই তখন এই ভাবনাচিন্তাটা আসে। তার আগে যদি সমস্যার সমাধান খুঁজে নিজেকে সেই পরিস্থিতি থেকে বের করে আনা যায় তাহলে ডিপ্রেশন পর্যন্ত বিষয়টা পৌঁছয় না। আমার মনে হয় সবটাই মাইন্ড গেম। মেন্টাল চ্যালেঞ্জ নিয়ে কঠিন মুহূর্তটা পার করতে হবে। মানসিকভাবে ভাবতে হবে এটা আমি পারব। আমি নিজেকে সেভাবেই তৈরি করেছি। মা-বাবাও সেটাই শিখিয়েছে। আমার জীবনে যা ঘটত বা এখনও ঘটে সেটা আমি আমার ঘনিষ্ঠমহলে শেয়ার করি। কোনওটাই নিজের মধ্যে চেপে রাখি না যা আমাকে ডিপ্রেশনের পেশেন্ট বানিয়ে দিতে পারে। 

পূর্ণা চরিত্রটা কৌশানী মুখোপাধ্যায়কে নতুন কী কী শেখাল?

কৌশানী: অভিনয়ের ক্ষেত্রে এটা নিঃসন্দেহে মাস্টার চান্স যেখানে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় কাজের সুযোগ পেয়েছি। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগটাও বড় প্রাপ্তি। তাঁর মতো একজন বাঘা অভিনেতার সঙ্গে কাজ করতে গেলে অবশ্যই অনেক কিছু শেখা যায়। চারপাশে যখন তাবড় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা থাকেন তখন নিজের কাজটাও অনেকটা বুস্ট আপ হয়। পূর্ণা চরিত্রটা এমন এক চরিত্র যা ছবি রিলিজের পর আজীবন আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ হয়ে থাকবে। কারণ পূর্ণা কিছুটা বাস্তবের জীবনের আমি আর কিছুটা আমার ক্রাইসিস। ও পুরোপুরি একটা ট্রাজিডি কুইন। ওর জীবনে অনেক কিছু ঘটে আর সেই প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে প্রতি পদক্ষেপে যে মেন্টাল ব্রেক ডাউন প্রতিনিয়ত বাড়ছে সেটা সিনেমার পর্দায় ফুটিয়ে তোলা সেটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। ব্যক্তিগতজীবনে যে মানুষটা ওই মেন্টাল ট্রমার মধ্যে দিয়ে যায়নি, পুরোটাই ভিজ্যুয়ালাইজেশনের উপর নির্ভরশীল। সেই লেয়ারগুলো ভেঙে কী ভাবে ক্যামেরার সামনে চরিত্রটাকে পরিবেশন করতে হবে সেটা আমি পূর্ণার থেকে শিখেছি। আগামী দিনে আমার জীবনে যদি কোনও বড় সমস্যা আসে তখন সেটা আমি আরও বোল্ডলি মোকাবিলা করতে পারব।

পূর্ণা তো নাকি খুব উচ্ছন্ন জীবনযাপন করে। বাস্তবে কৌশানী মুখোপাধ্যায় কেমন?

কৌশানী: আমি কিন্তু, পার্টি করতেও পছন্দ করি আবার খুব ঘরোয়াও। শুটিংয়ের চাপ কম থাকলে আমি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারি, পার্টি করি। মন থেকে যদি বাচ্চাসুলভ হও তাহলে বয়স বাড়লেও কোনও সমস্যা নেই। আমি জীবনটাকে এনজয় করতে ভালবাসি। কাজের পর যদি একটু সময় পাই তখন আমি বন্ধুদের সঙ্গে নিজের মতো করে সময় কাটাই। এছাড়াও বাড়ির প্রতি নিজের দায়িত্বটাও আমি সুন্দরভাবে পালন করি। বাবা একা সবটা পারেন না। তাই ঘরে-বাইরে দুটোই ব্যলেন্স করে চলি। মা চলে যাওয়ার পর ঘরটাকে অনেকটাই সামলাতে হয়। 

জীবনের সাফল্যগুলো মায়ের সঙ্গে কী ভাবে শেয়ার করেন?

কৌশানী: আমি রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আর সকালে উঠে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করার আগে মায়ের কাছে প্রার্থনা করি। আমার জীবনে কোনও সমস্যা এলে মাকে জানাই। আর কোনও না ভাবে আমি ঠিক সঠিক পথটা খুঁজে পেয়ে যাই। মায়ের পুরনো ছবি দেখা বা হোয়াটসঅ্যাপ খুলে সেগুলো দেখব সেই মনের জোরটা আমি পাই না। ওটা আমার ব্যথার জায়গা। এই আঘাতটা তো কোনওদিন শুকাবে না। আমার জীবনের প্রতিটি সুখ-দুঃখের সঙ্গে মা সবসময় জড়িয়ে ছিল। সাকসেসটাও মায়ের সঙ্গে শেয়ার করি। কোনও অ্যাওয়ার্ড পেলে মায়ের কাছে সেটা বলি। যখন কোনও কষ্ট হয় তখন মায়ের ছবির সামনে কেঁদে মনটাকে হালকা করি। 

ব্যক্তিগত জীবনের এই যন্ত্রণাগুলো পূর্ণার চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে সেটা আরও প্রকট হয়ে উঠেছিল?

কৌশানী: পূর্ণার জীবনের ঘটনাগুলোর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগতজীবনে কোনও মিল নেই। কিন্তু, ওর জীবনের যে যন্ত্রণা সেটাকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে সৃজিতদা কিন্তু আমাকে মায়ের স্মৃতিগুলো বারবার মনে করিয়েছে। ২০২১ সালে আমার জীবনে মাকে হারানোর আগে ১০টা দিনের যে ট্রাজিডি সেটা খোদাই করে প্রত্যেকটা দৃশ্যে কেঁদেছি। পর্দায় পূর্ণার ব্যথাটাকে ফুটিয়ে তুলতে আমার ব্যক্তিগত জীবনের ব্যথাটাকে অনুভব করা খুব প্রয়োজন ছিল। এই ছবির জন্য এটা আমার মেন্টাল ওয়ার্কশপ। আমি তো কোনওদিন মাকে হারানোর ওই মুহূর্তের স্মৃতিচারণা করতে চাইব না, কিন্তু ছবির স্বার্থে করতে হয়েছে। আর সেই জন্যই পূর্ণা আজীবন আমার মনে গেঁথে থাকবে। 

বহুরূপী, কিলবিল সোসাইটির পর এবার বাছাই করা ছবিতে দেখা যাবে?

কৌশানী: ২০২১ থেকেই বাছাই করা ছবিতে কাজ করছি। আবার প্রলয়, বহুরূপী যে বছর রিলিজ করেছে আমার আর কোনও ছবি করেনি। এবছর কিলবিল সোসাইটি। তবে আর একটা যে ছবিতে অভিনেত্রী হিসেবে অংশগ্রহণ অবশ্যই করতে চাইব সেটা হল রক্তবীজ ২। যে স্ক্রিপে গল্প আর চরিত্র দুটোই আমার পছন্দ হবে সেটাকে আমি কখনই না বলব না। 

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পর এবার কাকে হিরো হিসেবে পেতে চান?

কৌশানী: আমি আবির দার সঙ্গে কাজ করার খুব ইচ্ছে। জুটি হিসেবে আমাদেরকে এক্লপ্লোর করা হোক, এটা আমি ভীষণভাবে চাই। পরমদা আর আমার জুটিটা কিন্তু ইউনিক। গানগুলো দর্শক পছন্দ করছে। আবিরদার সঙ্গেও আমার জুটিটা ভাল লাগবে। 

বনির সঙ্গে কি ভাবে সাকসেস সেলিব্রেট করলেন?

কৌশানী: শুধু বনির সঙ্গে সাকসেস সেলিব্রেট করেছি তা নয় পরিবারের সকলের সঙ্গে করেছি। বন্ধুরা তো পার্টি চেয়েই যাচ্ছে কিন্তু, আমার সময় হচ্ছে না। প্রিমিয়ারের দিন একটা সেলিব্রেট করার প্ল্যান আছে। বহুরূপীর পর একদিন আমরা সবাই ডিনারে গিয়েছিলাম। কিলবিলের রেজাল্ট কেমন হয় সেটা দেখে আবার একটা প্ল্যান করা যাবে। বাবা, মাসি-মেসো, বনির পরিবার, বন্ধুবান্ধবদের নিয়েই আমি আনন্দ করি। 

চুমু নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছে। বনি বা আপনি দুজনেই অন স্ক্রিন চুমুতে নারাজ ছিলেন। কিলবিলের ক্ষেত্রে রাজি হওয়াটা কী ভাবে? বনির অনুমতি নিয়েই?

কৌশানী: পার্টনার হিসেবে বনি একেবারেই ইতস্তত করেনি তা নয়। আমি হলেও তাই করতাম। আমাদের ইমোশন আছে। অভিনয়ের ক্ষেত্রে এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। সেটা খুব বড় চ্যালেঞ্জ। অন স্ক্রিন আমি কোনওদিন বনির সঙ্গেও লিপলক করিনি। আমরা কেউই সেটা প্রশ্রয় দিই নি। তাই এই দৃশ্যটা আমার কাছে একটু বেশিই চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমাদের কাছে ওটা সত্যিই একটা আইস ব্রেকিং মোমেন্ট। তবে চুমুটাই এই ছবির সর্বস্ব নয়। সিনেমাটা দেখলে দর্শক সেটা বুঝবে। চুমু এই ছবির একটা পার্ট, এর বাইরে সিনেমাটায় অনেক কিছু আছে। কিলবিলে চুমুর দৃশ্যে রাজি হয়েছি মানে আগামীতে আমি সব ছবির ক্ষেত্রে রাজি হব এমনটা একেবারেই নয়। পূর্ণা চরিত্রটার লোভে আমি না বলতে পারিনি। 

এই ছবিতে তো প্রায় নো মেকআপ লুক...

কৌশানী: হ্যাঁ, সৃজিতা দা আমাকে একটুও মেক আপ করতে দেয়নি। আমি মেক-আপের প্রতি আশক্ত নই। মেক আপ ছাড়া বাইরে বরতে পারি। কিন্তু, ভ্রূ আঁকা  আর লিপস্টিকটা আমার না হলে চলে না। সেটাও করতে দেয়নি। এমনকী লিমবাম লাগালেও সেটা তুলে দিয়েছে। 

কেরিয়ারে সাকসেসের গ্রাফ ঊর্ধমুখী, এবার বিয়ে নিয়ে ভাবনাচিন্তা?

কৌশানী: না, এবছর আমাদের সত্যিই প্ল্যানিং নেই। কেরিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট। তাই কাজ নিয়েই আপাতত ভাবতে চাই। বিয়ে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন আছে। ওটার জন্য আমার একটা আলাদা সময় চাই। সেই জন্য দু-তিন মাস শুধু প্ল্যানিংয়ের জন্য সময় চাই। যখন সেই সময়টা পাব তখনই আমি বিয়ে নিয়ে ভাবনাচিন্তাটা শুরু করব। 

Koushani Mukherjee Killbill Society Bengali Actress Bengali Cinema Bengali Film Bengali Film Industry Bengali News