৩৫ বছরের গায়কি কেরিয়ার। নব্বইয়ের দশক। কলকাতার কেদারনাথ ভট্টাচার্য তখন মুম্বই কাঁপাচ্ছেন। একের পর এক সুপারহিট হিন্দি গান। অভিনেতারাও মুখিয়ে থাকতেন তাঁদের ছবিতে কুমার শানুর কণ্ঠের জন্য। চার্টবাস্টার 'আশিকি' অ্যালবাম আজও সেই প্রজন্মের কাছে অতিপ্রিয়। তবে সময়ের সঙ্গে বলিউড মিউজিকের আঙ্গিক বদলেছে। তখনকার গানের সঙ্গে এখনকার হিন্দি সিনেমার গানের আকাশ-পাতাল তফাৎ! সেইপ্রসঙ্গেই বিস্ফোরক কথা বলে ফেললেন কুমার শানু।
যতীন-ললিত, অনু মালিক, নাদিম-শ্রবণ, আনন্দ-মিলিন্দ থেকে রাজেশ রোশনের মতো একাধিক তাবড় মিউজিক কম্পোজারদের সঙ্গে কাজ করেছেন কুমার শানু। 'সাজন', 'বাজিগর', '১৯৪২: আ লাভ স্টোরি', 'দিল হ্যায় কি মানতা নহি', 'দিলওয়ালে দুলহানিয়ে লে জায়েঙ্গে', 'কুলি নম্বর ওয়ান'-এর মতো বহু বলিউডি সিনেমায় তাঁর গান সুপারহিট। তিন দশকের মিউজিক কেরিয়ারে ২১ হাজারের বেশি গান গেয়ে ফেলেছেন। তাও আবার ২৬টা ভাষায়। তবে ১ হাজার থেকে ২ হাজার গান এখনও মিসিং! যে গতিতে এগোচ্ছেন, সম্ভবত তেইশ সালেই ২২ হাজার ছাড়িয়ে যাবে কুমার শানুর গাওয়া গানের সংখ্যা।
তবে মজার বিষয় হচ্ছে কুমার শানু নিজের গাওয়া গান কোনওদিন শোনেন না। এটি নাকি তাঁর সবথেকে বড় ভয়! কিশোর কুমার, লতা মঙ্গেশকর, মহম্মদ রফির গান শোনা তাঁর পছন্দের। বেশ কিছু ইংরেজি গানও তাঁর পছন্দের। তবে ভুল করেও এখনকার বলিউডি গান শোনেন না শানু। কেন? তাঁর মন্তব্য, "বর্তমানে হিন্দি সিনেমার গান একেবারে নৈব নৈব চ! ওগুলো একেবারে শোনার যোগ্য নয়। তাই এই প্রজন্মের হিন্দি গান আমি শুনিও না, ওই সম্পর্কে কোনও খোঁজখবরও রাখি না।" এখানেই অবশ্য শেষ নয়! বর্তমানে বলিউডে কীভাবে মিউজিকের কাজ হয়, সেই সিস্টেম নিয়েও বেশ বিরক্ত কুমার শানু।
<আরও পড়ুন: আমি সাধু নই! টাকা দেখলে..’, ৩০০ কোটির সম্পত্তি নিয়ে ‘বেঁফাস’ কপিল শর্মা>
বললেন, "তখনকার সঙ্গে এখনকার কাজের ধরণের অনেক তফাৎ রয়েছে। আজ পর্যন্ত যত গান রেকর্ড করেছি ছবির জন্য, কোনওদিন কোনও অভিনেতা বা অভিনেত্রী আমার রেকর্ডিং রুমে এসে নাক গলায়নি। তখন সকলেরই একে-অপরের ওপর এই বিশ্বাসটা ছিল যে, যাকে যে কাজটা দেওয়া হয়েছে, সে সেটা ভাল করেই করবে। এভাবে করো, ওভাবে করো.. বলে কেউ নজরদারি চালাত না। তবে এখন সেই জিনিসটার বড্ড অভাব। নাক গলানো-টা আজকাল একটা সমস্যায় দাঁড়িয়েছে। সে অভিনেতা হোক কিংবা প্রযোজক-পরিচালক, এঁরা মিউজিক কম্পোজারকে বলে দেন- আপনি শুধু গানটা রেকর্ড করে দিন, বাকিটা আমরা বুঝে নেব..। আগে কিন্তু এভাবে কাজ হত না।"
সম্প্রতি 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এর মুখোমুখি হয়ে কুমার শানুর আক্ষেপ, "তখনকার দিনে সবার কাজ ভাগ করে দেওয়া থাকত। কেউ কারও কাজে ঢুকত না। সকলেই কাজের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল। তবে বর্তমানে সেই বিষয়টার অভাব। একটা গান ৮-১০ জন গায়কদের দিয়ে রেকর্ড করানো হচ্ছে। কোনটা সিনেমার সঙ্গে যাবে, কোনটা ভাল লাগছে.. কেউ কিচ্ছু জানে না। অতঃপর এহেন কাজের পরিবেশে গায়করা নিজেদের সঠিক মূল্যায়ণ করতে পারছেন না।"