প্রাক-স্বাধীনতা যুগের ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে অবস্থান এই ছবির। মূল গল্পের কেন্দ্রে রয়েছেন এক নাগা সাধু, যিনি বেরিয়েছেন এক বিপদসঙ্কুল অভিযানে। নাম তাঁর গোঁসাই, এবং বুন্দেলখন্দের দুর্গম পাহাড়ি পথ ধরে তাঁর যাত্রাসঙ্গী হন দর্শক। সে যাত্রাপথে আমরা পাই পেল্লায় রাজপ্রাসাদ, পাহাড়ি গুহা, এবং ব্রিটিশ, মারাঠা, ও মুঘল সৈন্যদের সশস্ত্র বাহিনী। এর মাঝে বড় বড় ডাকাতদের সঙ্গেও লড়াই করেন গোঁসাই, আবার গালে (এবং মনে) দাগ নিয়ে তাঁকে নির্দিষ্ট কাজের ভার দিয়ে যান মুখোশ পরিহিতা রহস্যময়ী। সব একেবারে ছবির মতো, কিন্তু একেবারেই নিরর্থক।
Advertisment
'লাল কাপতান' ছবিতে সঈফের লুক।
তাঁর প্রথম ছবি ছিল 'মনোরমা সিক্স ফিট আন্ডার', 'চায়নাটাউন' ছবির অনুকরণে এদেশের প্রেক্ষিতে তৈরি, ধারালো, ঝকঝকে তার উপস্থাপনা। পরবর্তীকালে সেই ছবির মান আর ছাপিয়ে যেতে পারেন নি পরিচালক নভদীপ সিং। তবু তাঁর 'এনএইচ ১০' ছবিতে বেশ কিছু অসঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও শেষমেশ ছবিটির পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে বার্তা আমাদের আকৃষ্ট করে। কিন্তু বর্তমান ছবিটি নিয়ে তিনি যে ঠিক কী করতে চেয়েছেন, সেটাই তো বোঝা গেল না। এক এক সময় মনে হয়, এবার ঠিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলবে এই ছবি, কিন্তু সে আশায় জল ঢেলে ফের একই ক্লান্তিকর, এবং অনন্ত 'সেট পিসের' পথে হাঁটেন পরিচালক।
ছবিতে সইফ আলিকে বেশিরভাগ সময়েই নাগা সাধুর মেক-আপে দেখা যায়, মুখে সাদা-কালো রেখা, পিঠ বেয়ে নামছে জটার ঢাল, হাতে খোলা তলোয়ার বা ছুরি। দেখতে দিব্য লাগে। যেমন লাগে দীপক দোবরিয়ালকে, যাঁর ভূমিকা মোটামুটি ভাঁড়ের, যদিও তাঁর ভাগ্যেই সম্ভবত ছবির সবচেয়ে ভালো সংলাপগুলি জুটেছে। তাঁর লেজুড় হিসেবে রয়েছে এক খুদে মারাঠা রাজপুত্র, যাকে নিয়ে ছবিতে একাধিক ঠাট্টা-তামাশা হয়। 'অন্ধাধুন' ছবিতে যিনি মুগ্ধ করেছিলেন, সেই মানব ভিজ এই ছবিতে একেবারেই বর্ণহীন। নিম্নবর্গের কালো, কাজল-পরা সুন্দরী হিসেবে নজর কাড়েন জোয়া হুসেন, যাঁর বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেন ফর্সা, সুন্দরী রানী (সিমোন)।
কিন্তু প্লট বলে এই ছবির যদি আদৌ কিছু থেকে থাকে, তা একেবারেই চলে না, কাজেই চরিত্রগুলো বড় অবান্তর মনে হয়। এর আগে একবারই সইফ এবং দীপককে একসঙ্গে দেখা গেছে পর্দায়, বিশাল ভরদ্বাজের 'ওমকারা'-য়, যেখানে নিখুঁত ছিল তাঁদের যুগলবন্দী। 'লাল কাপ্তান'-এ তাঁরা দুজনেই লক্ষ্যের পিছনে তাড়া করছেন। একটি দৃশ্যে আগুনকে ঘিরে তাঁদের আদিম নৃত্য তাক লাগিয়ে দেয়, এবং এটা মনে হতেই পারে যে ওই দৃশ্যে যেভাবে দুজনে একে অপরকে ব্যালান্স করেন, সেখানেই রয়েছে ছবিটির প্রাণভোমরা।
বাকিটা স্রেফ দীর্ঘ আঁকাবাঁকা পথচলা, জীবন-মরণ নিয়ে কিছু সংলাপ, যা আপাতদৃষ্টিতে গভীর, কিন্তু বাস্তবে একেবারেই পানসে।