Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

'জোনাকি' রিভিউ: জোনাকিরা নিভে যায়, স্ফুলিঙ্গ হন ললিতারা

Jonaki movie review: আদিত্যবিক্রম সেনগুপ্তের ছবি 'জোনাকি' দৃশ্যমাধ্যমে এমন একটি যাত্রা যা বাংলা ছবির জগৎ দেখেনি সাম্প্রতিককালে। স্বর্ণযুগের অভিনেত্রী ললিতা চট্টোপাধ্যায় যেন অপেক্ষা করেছিলেন এমনই একটি চরিত্রের জন্য।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Lolita Chatterjee starrer Aditya Vikram Sengupta film Jonaki review

ছবি: সিনেমার ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত।

Netflix Bengali Film Jonaki review: একদিন খুব ভোরে সদ্য ঘুম ভাঙা চোখ শুধু কড়ি-বরগায় দেখে পায়রার চলন। জোনাকির নিভু নিভু আলোয় ভেসে ওঠে প্রথম প্রেম, শরীরের ওমে কমলালেবুর গন্ধ। আর জীবনের শেষ ছবিতে স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে ওঠেন ললিতা চট্টোপাধ্যায়। আদিত্যবিক্রম সেনগুপ্তের ছবি 'জোনাকি' দৃশ্যমাধ্যমে এমন একটি যাত্রা যা বাংলা ছবির জগৎ দেখেনি সাম্প্রতিককালে। স্বর্ণযুগের অভিনেত্রী ললিতা চট্টোপাধ্যায় যেন অপেক্ষা করেছিলেন এমনই একটি চরিত্রের, যা তাঁর অভিনেত্রী জীবনের ক্রেসেন্ডো।

Advertisment

 জোনাকি ছবির পোস্টার

কখনও পথচলতি চোখে পড়েছে এমন কোনও ইমারত যার পরতে পরতে শুধুই অতীত কথা বলে? তেমনই কোনও ইমারতের প্রাণভোমরা হয়ে যেন জেগে থাকে জোনাকি। সে ইমারতে বনেদিয়ানা চোখ রাঙায়, সাদা পোশাকের বিয়ে সেখানে ব্রাত্য। এমন অনেক অনেক ইমারতের কোণে, অলক্ষ্যে, নেপথ্যে জোনাকিরা মরে যায়। আর একমুঠো কমলালেবু হাতে অপেক্ষা করে থাকে তার প্রেম।

আরও পড়ুন: নৃশংস ধর্ষণ আর মাংসের জন্য প্রাণী হত্যা, খুব আলাদা কী? সিনেমায় প্রশ্ন তুলছেন তথাগত

'জোনাকি' সেই নারীত্বের গল্প, যা ফুরিয়ে যায় একা একা। আসলে যার দাবানল হয়ে ওঠার কথা ছিল, অথচ সে ক্রমশ আগুন হারাতে থাকে। গা থেকে প্রথম আগুনটুকু কেড়ে নেয় তার মা। তার পরে ক্রমশ খসতেই থাকে জোনাকির আগুনপালক। জোনাকির কোনও প্রতিবাদ নেই, প্রতিরোধও দৃঢ় নয় তেমন। জোনাকি সেই অনাবিল অনন্ত প্রেমিকা, অভিমান ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না কখনও। শুধু বয়ঃসন্ধিতে, কমলালেবু হাতে যে যুবক খুঁজে পেয়েছিল তাকে, সে ছাড়া জোনাকিকে বুঝে ফেলার দায় নেই কারও। সে যুবক বেঁচে থাকে শুধুই জোনাকির জন্য। জোনাকির এগজিসটেনশিয়াল প্রেমে মিশে যায় অবলীলায়, চিরন্তন প্রেমিকের ডিভাইন কমেডীয় আর্তি।

 ছবিতে ললিতা চট্টোপাধ্যায় ও জিম সরাব।

'জোনাকি'-র মতো এত লিরিকাল ছবি, খুব কমই এসেছে বাংলা ছবিতে। আদিত্যবিক্রম হয়তো নিজে একজন শিল্পী বলেই এত ভীষণভাবে নান্দনিক তাঁর ছবি। পলেস্তারা খসা দেওয়াল অথবা বাগানের এককোণে পড়ে থাকা ভাঙা টেবিলের মতো সহজ ও সুন্দর যে কিছু হতে পারে না। তবে 'জোনাকি' দেখতে বসে চলচ্চিত্রমোদী দর্শকের বার বার মনে পড়বে তারকোভস্কির ছবির কথা। পরিচালকের মননের অনেক গভীরে সম্ভবত রয়েছেন রুশ চলচ্চিত্রকার। তাই জোনাকির গল্প বলতে গিয়ে বার বার প্রিয় পরিচালকের দৃশ্যকল্পেরই যেন নতুন নির্মাণ করেছেন আদিত্যবিক্রম।

আরও পড়ুন: শুধু ওয়েবক্যামে শুটিং! সৌমন বসু নিয়ে আসছেন অভিনব ওয়েব সিরিজ

ললিতা চট্টোপাধ্যায় ও জিম সরাবকে যিনি এত সুন্দরভাবে সাজাতে পারেন তাঁর ফ্রেমে, তাঁর ছবিতে যে ভায়োলেন্স ধরা পড়বে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ছবিটি না দেখলে বোঝা সম্ভব নয়, পারিবারিক হিংসাকে কী অদ্ভুতভাবে চলচ্চিত্রে এঁকেছেন আদিত্যবিক্রম। পরিবার নামক সিস্টেম সেখানে এক ভৌতিক বহমানতা। খুব সংবেদনশীল দর্শক ছাড়া এ ছবির রসাস্বাদন করা সহজ নয়। পাশাপাশি দর্শকের নান্দনিক বোধও জরুরি। ছবিটি ২০১৮ সালের কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়। বিদেশের উৎসবেও প্রশংসিত হয়। কিন্তু এই ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল না। তেমনটা হলে বাণিজ্যের চর্বিতচর্বণে বোধহয় আরও বেশি নাভিশ্বাস উঠত জোনাকির। তাই জোনাকি এসেছে ওটিটি-তে, নেটফ্লিক্সে। যে পৃথিবীর কথা হাইপোথিসিস হয়েও ধরা দেয়নি কখনও জোনাকির চেতনায়।

 ছবিতে ললিতা চট্টোপাধ্যায় ও জিম সরাব।

এই ছবিতে একেবারেই অন্যভাবে ধরা দিলেন অ্যাডম্যান সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়, জোনাকির বাবার চরিত্রে। জোনাকির গল্পের প্রিলুড তিনি যা বেজে চলে প্রায় গোটা ছবি জুড়েই। সময় এগিয়ে যায়, শৈশব থেকে হাসপাতালের বেড, অক্সিজেন মাস্ক ছুঁয়ে জোনাকি শুধুই ভেসে বেড়ায় অনন্তে। আর প্রেম এসে থমকে যায় তার পায়ের কাছে। জোনাকি আসলে সেই প্রেমিকা, যাকে দূর থেকে ভালবেসে জীবন সুগন্ধি হয়ে ওঠে। আর সে শুধুই তার ডানা জুড়ে জ্বালিয়ে রাখে আগুন, প্রেমিককে একটু ওম দেবে বলে।

'জোনাকি' একটা জার্নি যা পেরতেই হবে বাংলা ছবির দর্শককে।

bengali films
Advertisment