তাঁর অভিনয় জীবন ছিল মাত্র ৩ বছরের। তার মধ্যেই দিব্যা ভারতীর বিপুল জনপ্রিয়তা অনেক বলিউড নায়িকার কাছেই ঈর্ষণীয় ছিল। ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল যখন তাঁর মৃ্ত্যু হয়, মাত্র ১৯ বছর বয়স ছিল অভিনেত্রীর। সবাই জানেন মৃত্যুর কারণ হিসেবে বলা হয় যে নিছক দুর্ঘটনা কিন্তু ওই মৃত্যু আজও বহু মানুষের কাছেই রহস্য।
১৯৯০ সালে দক্ষিণী ছবি দিয়ে শুরু করেছিলেন অভিনয়ের কেরিয়ার। প্রথম দুবছর তেলুগু ও তামিল ছবিতে অভিনয়ের পরে হিন্দি ছবির জগতে তাঁর কেরিয়ার শুরু হয় ১৯৯১ সাল থেকে। ১৯৯২ সালটি ছিল হিন্দি ছবিতে দিব্যা ভারতীর বছর। ওই একটি বছরে দিব্যা অভিনীত ১২টি ছবি মুক্তি পায়।
আরও পড়ুন: কাপুর পরিবারের এই পুরনো ছবি মন জয় করছে নেটিজেনদের
তাঁর পর্দার উপস্থিতি এতটাই আবেদনময় ছিল দর্শকের কাছে যে এই অষ্টাদশী নায়িকাকে দিয়ে ছবি সই করাতে প্রযোজকদের মধ্যে হু়ড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল। ১৯৯২ সালেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার। ভারসোভা-র তুলসী অ্যাপার্টমেন্টে নাদিয়াদওয়ালাদের ফ্ল্যাটেই গোপনে বিয়ে করেন দুজনে।
ছবি: দিব্যা ভারতীর ফেসবুক ফ্যান পেজ থেকে সংগৃহীত
সেই সময় নায়িকা বিবাহিত হলে তাঁর আবেদন কমে যায় বলে মনে করা হতো। তাই বিয়ের বিষয়টি একেবারেই গোপন রাখা হয়েছিল। বলিউডের অন্দরে তখন সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা ছিলেন সম্ভবত সবচেয়ে ঈর্ষণীয় মানুষ যিনি খুব অল্পদিনের আলাপেই সারা দেশের মানুষের হার্টথ্রবের মন জয় করেছিলেন।
মাত্র এক বছরও টিকল না এই দাম্পত্য। ১০ মে দিব্যা-সাজিদের প্রথম বিবাহবার্ষিকীর একমাস আগেই চলে গেলেন দিব্যা। দিব্যার আকস্মিক মৃত্যু ঘটে ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায়। সেই সময়ে দিব্যা-সাজিদের বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন ডিজাইনার নীতা লুল্লা, তাঁর স্বামী এবং দিব্যার নিজস্ব কর্মচারী। শোনা যায়, পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটের জানলা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন দিব্যা। নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
অনেকে এর পর নানা তত্ত্ব নিয়ে নাড়াচাড়া করেন। কেউ বলেন তাঁর মৃত্যু আসলে পরিকল্পিত খুন, কেউ বলেন দিব্যা সেই সময় মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন ইত্যাদি। ১৯৯৮ সালে অনেক তদন্তের পরে মুম্বই পুলিশ এই মৃত্যুকে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বলে ফাইলটি ক্লোজ করে দেয়।
ছবি: দিব্যা ভারতীর ফেসবুক ফ্যান পেজ থেকে সংগৃহীত
তাঁর মৃত্যুর সময় অন্তত ৫-৬টি ছবি অসমাপ্ত ছিল। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই প্রযোজকদের নতুন নায়িকাদের নিয়ে নতুন করে শুটিং করে ছবি শেষ করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে 'লাডলা', যা নতুন করে শুটিং করা হয় শ্রীদেবীকে নিয়ে। অসমাপ্ত ছবিগুলির তালিকায় রয়েছে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য ছবি-- 'মোহরা', 'কর্তব্য', 'বিজয়পথ', 'দিলওয়ালে' এবং 'আন্দোলন'। আরও কয়েকটি বিগ ব্যানার ছবির কাজও বন্ধ হয়ে যায় যেগুলিতে কাস্টিং চূড়ান্ত ছিল। যেমন-- অক্ষয়কুমারের সঙ্গে 'পরিণাম', সলমন খানের সঙ্গে 'দো কদম', ঋষি কাপুরের সঙ্গে 'কন্যাদান', সানি দেওলের সঙ্গে 'বজরঙ্গ' ও জ্যাকি শ্রফের সঙ্গে 'চল পে চল'।
তাঁর মৃত্যুর ঠিক আগেই শুটিং শেষ হয়েছিল 'রং' ও 'শতরঞ্জ' ছবির। দিব্যার মৃত্যুর পরেই মুক্তি পায় দুটি ছবি। বলিউড-বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন যে মাত্র তিন বছরে যে অভিনেত্রী সাফল্যের এই উচ্চতায় উঠতে পারেন, বেঁচে থাকলে হয়তো আজকের দিনে তিনি মাধুরী অথবা শ্রীদেবীর মতোই হয়ে উঠতেন বলিউডের আর এক কিংবদন্তি নায়িকা।