/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/23/madan-mohan-2025-09-23-19-58-22.jpg)
কে এই সুরকার?
‘গজল রাজা’ নামে পরিচিত কিংবদন্তি সুরকার, মদন মোহন জীবদ্দশায় কখনও প্রাপ্য সম্মান পাননি- এমনটাই বলা হয়। সমসাময়িকদের মতো দ্রুত এগোতে না চেয়ে তিনি ধীরে, মন দিয়ে সুর বেঁধেছিলেন। তাঁর সৃষ্ট সংগীত আজও অমর, যদিও অনেক ছবিই দর্শক ভুলে গেছে।
১৯২৪ সালে বাগদাদে এক কূটনীতিক পরিবারের ঘরে জন্ম মদন মোহনের। বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অভিনয়ের স্বপ্ন নিয়ে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখলেও শেষ পর্যন্ত তিনি সুরকার হয়েই ইতিহাস গড়েন। সেনাবাহিনীতে কাজ ও লখনউ অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও সমৃদ্ধ করেছিল। তবে বাবার সমর্থন না থাকায় জীবনের শুরুর দিনগুলো ছিল কঠিন। এক সময় টানা পাঁচ দিন অনাহারে থেকেছেন তিনি- তবু সাহায্যের জন্য কারও কাছে যাননি।
অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার পর তিনি সুরের জগতে মন দেন। তাঁর নিজের কথায়, “গান ছিল আমার রক্তে, কোনও কিছুই এটিকে থামাতে পারেনি।” বিষাদময় সুরে তাঁর বিশেষ দক্ষতা ছিল। বিশ্বাস করতেন, হালকা গান অল্প সময় টিকে থাকে, কিন্তু দুঃখের গান যুগ যুগ বেঁচে থাকে। তাই তিনি বছরে গড়ে মাত্র তিনটি সিনেমায় কাজ করতেন, যেন প্রতিটি সুরের আবেগ অটুট থাকে।
১৯৬০-এর দশকে ‘আনপাড’, ‘মনমাউজি’, ‘আপ কি পারছাইয়াঁ’, ‘গজল’ এবং ‘হকিকত’ ছবির মাধ্যমে তিনি আলোচনায় আসেন। ১৯৬৪ সালে একসঙ্গে আটটি ছবিতে তাঁর সুর প্রকাশিত হয়। লতা মঙ্গেশকর, রফি, তালাত মাহমুদের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ক বহু অমর গান উপহার দিয়েছে। ‘দস্তক’ ছবির জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার জিতেছিলেন।
কিন্তু ৭০-এর দশকে চলচ্চিত্রের ধারা পাল্টে যায়। অমিতাভ বচ্চনের অ্যাকশনধর্মী ছবি এবং নতুন প্রজন্মের সুরকারদের ভিড়ে মদন মোহন ক্রমে উপেক্ষিত হন। অনেক বড় প্রযোজক মনে করতেন তিনি ধীরে কাজ করেন, ফলে তিনি কিছু ছবির কাজ হারান। এমনকি এক সময় বি-গ্রেড সিনেমা থেকেও তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এরপরেই তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। বেশ আঘাত পান তিনি।
Shah Rukh Khan-National Award: জাতীয় পুরস্কার হাতে শাহরুখ, বিজ্ঞান ভবনে উন্মাদনা নারী-ভক্তদের
তাঁর বড় ছেলে সঞ্জীব এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, বাবার প্রতিভা বোঝার মতো মানুষ তাঁকে সম্মান দিয়েছেন, কিন্তু তিনি কখনও বড় তারকাদের ছবি পাননি। ‘ঝুমকা গিরা রে’ তাঁর কয়েকটি জনপ্রিয় গানের মধ্যে একটি হলেও সিনেমাগুলি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়েছিল। এই ব্যর্থতা তাঁকে তিক্ত করে তুলেছিল।
তাঁর ব্যক্তিজীবনে, স্কচ হুইস্কির প্রতি ছিল বিশেষ দুর্বলতা। তবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তিনি পানীয় থেকে বিরত থাকতেন। সন্তানদের স্মৃতিতে তিনি ছিলেন একদিকে গর্বিত শিল্পী, অন্যদিকে অভিমানী এক মানুষ। যিনি নিজের সুর নিয়ে কখনও আপস করেননি। অবশেষে লিভার সিরোসিসে মাত্র ৫১ বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান ঘটে। মৃত্যুর তিন সপ্তাহ আগেই তিনি ৫১তম জন্মদিন পালন করেছিলেন।
তাঁর মৃত্যুর বহু বছর পর, ছেলেরা তাঁর সংগীতকে নতুন করে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেন। যশ চোপড়ার ‘বীর-জারা’ ছবিতে তাঁর পুরোনো সুর ব্যবহার করে গান পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল, যা বিপুল সাড়া পেয়েছিল। লতা মঙ্গেশকর, যিনি মদনের মৃত্যুর পর তাঁর সন্তানদের দেখাশোনা করতেন, আবারও সেই গানগুলি নিজের গলায় গেলে মুগ্ধ করেন সকলকে।