মহানায়ক উত্তম কুমারকে নিয়ে নানা ধরনের গল্প শোনা যায়। তিনি নায়ক হিসেবে এমন ইন্ডাস্ট্রির খুব কাছের ছিলেন, ঠিক তেমনই মানুষ হিসেবেও সকলের খুব কাছের ছিলেন। এমনকি তৎকালীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিধান চন্দ্র রায়, তাঁকে ভালবেসে একদম অন্য নামে ডাকতেন। না উত্তম বলে ডাকতেন, না তাঁকে অরুণ বলে ডাকতেন। সেই নাম একবার প্রকাশ্যে আসতেই যা হয়েছিল। বিধান চন্দ্র রায় এমন একজন মানুষ ছিলেন, বলা উচিত এমন একজন চিকিৎসক ছিলেন, যিনি দুর থেকে দেখেই নাকি সকলের রোগ বলে দিতেন।
মহানায়কের একবার বেজায় শরীর খারাপ। ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন তিনি। এই গল্প নিজেই জানিয়েছিলেন তরুণ কুমার। সেসময় খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম এর কারনে এবং কাজের চাপের ফলে, মহানায়ক বেজায় অসুস্থ। নিত্যদিন আমাশা এবং গ্যাসের জন্য শরীরে অস্বস্তি। ঠিক করে শুটিংও করতে পারছিলেন না। শরীর খারাপের জন্য মেজাজও সবসময় সপ্তমে চড়ে থাকত। কিন্তু.. একদিন মহানায়ককে একজন বললেন তুমি বিধানচন্দ্র রায়ের কাছে যাও। তোমায় তো খুবই স্নেহ করেন দেখো যদি তোমাকে সুস্থ করে দিতে পারেন। আর এক মিনিটও সময় নষ্ট না করে, বিধান বাবুর কাছে গিয়েছিলেন মহানায়ক।
তখন তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হলেও রোগী দেখতে কিন্তু তার দেরি হতো না। ওয়েলিংটন স্কোয়ারের বাড়িতে তিনি, নিত্যদিন সকাল থেকে রোগী দেখতেন। একদিন সকাল সকাল মহানায়ক হাজির হলেন তার বাড়িতে। বাড়িতে তখন রোগীর হাট। উত্তমকে সামনে দেখে সকলেই তাকে এগিয়ে যাওয়ার পথ করে দিলেন। এবং সেদিন মহানায়ক কে দেখে, তাকে শ্যামল বলে ডেকেছিলেন বিধানচন্দ্র রায়? তাহলে কি উত্তমবাবুর ডাকনাম শ্যামল ছিল? এখানে উপস্থিত প্রত্যেকেই অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলেন। উত্তম কুমারকে কি তবে চিনতে ভুল করলেন? তাদের সকলের কৌতূহল এক নিমিষে থামিয়ে দিলেন বিধান বাবু।
Abhijit Gangopadhyay Health: এখন কেমন আছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়? সুস্থ…
বললেন এই নামটা আপনাদের জানার কথা না, কারণ এই নামটা আমারই দেওয়া। বেশ লম্বা-চওড়া মানুষ ছিলেন বিধান বাবু। উত্তমকে দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কী হে শ্যামল? আবার কী মনে করে? কিন্তু শ্যামল বলে কেন ডাকতেন তাকে? সেই সময় মহানায়ক নিজেই হাটে হাড়ি ভেঙে ছিলেন। আর শ্যামল নামের নেপথ্যে যে এক চমকপ্রদক ঘটনা রয়েছে সে কোথায় জানিয়েছিলেন তিনি। উত্তম যে শুধু সিলভার স্ক্রীনে অভিনয় করতেন এমনটা নয়। রীতিমতো নাটক এবং থিয়েটার ও করতেন তিনি। একদিন তার অভিনয় জনপ্রিয়তার কথা শুনে, স্টার থিয়েটারে শ্যামলি নাটক দেখতে হাজির হয়েছিলেন ডক্টর বিধানচন্দ্র রায় খোদ। নাটক দেখে তার এত ভাল লেগেছিল...
বিধান বাবু সোজা পৌঁছে গিয়েছিলেন গ্রীন রুমে। সেখানে মহানায়ককে শুধু অভিনন্দন জানিয়েছিলেন এমনটা নয়। বরং উত্তম যখন তার পায়ে প্রণাম করেন, তখন মহানায়ককে তিনি আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, "ওহে শ্যামল তুমি অনেক বড় অভিনেতা হবে। তুমি অনেক নাম করবে দেখো। কিন্তু আজ থেকে তোমাকে আমি শ্যামল বলেই ডাকবো।" যদিও এই ঘটনার পরবর্তীতে উত্তম, কাতর আর্জির চোখে মিজান বাবুর দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন আমি ভীষণ আমার সঙ্গে কষ্ট পাচ্ছি আপনি আমাকে বাঁচান। কিন্তু বাঙালি তার আবার পেটের গন্ডগোল হবে না, বিধানবাবু আশ্বাস করে মহানায়ক কে বলেছিলেন, এত কিছু ভেবোনা, ওষুধ দিচ্ছি সেরে যাবে।"