Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

কঙ্গনা দেখুন দুচোখ ভরে

আরাম করে বসুন, (মাঝে মাঝে কিঞ্চিৎ মেদবহুল) অ্যাকশনের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিন, এবং কঙ্গনার জ্বালাময়ী অভিনয় দেখুন দুচোখ ভরে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

Manikarnika: The Queen Of Jhansi movie cast: কঙ্গনা রানাউত, যিশু সেনগুপ্ত, অতুল কুলকার্নি, মহম্মদ জিশান আয়ুব, অঙ্কিতা

Advertisment

লোখান্ডে, কুলভূষণ খারবান্দা, ড্যানি ডেনজংপা, রিচার্ড কিপ।

Manikarnika: The Queen Of Jhansi movie directors: কঙ্গনা রানাউত, রাধাকৃষ্ণ জগরলামুড়ি

Manikarnika: The Queen Of Jhansi movie rating: ২.৫/৫

মণিকর্নিকা, ঝাঁসির রানী। আবার মণিকর্নিকা, কঙ্গনা রানাউত। এই দুইয়ে মিলেমিশে একাকার হয়ে তৈরি হয়েছে যা হওয়ার কথাই ছিল: উচ্চগ্রামের, উচ্চমার্গের ভাষণে অলঙ্কৃত এক বীরগাথা, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন নিজের রাজ্য এবং সে রাজ্যের প্রজাদের জন্য শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়ে যাওয়া এক রানী।

তিন ঘন্টার এই ছবিতে জটিল ভাবনাচিন্তার কোনো ব্যাপারই নেই। যার ফলে শেষের দিকে ছবির দম ফুরিয়ে যায়, কারণ সময় কাটাতে যুদ্ধের দৃশ্য সবিস্তারে দেখানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। প্রতিটি দৃশ্যেই ইচ্ছাকৃত সরলীকরণের ছাপ সুস্পষ্ট। ঘটনাবলী একদম সোজাপথে হাঁটে - প্রথমে এই হলো, তারপর ওই হলো, যাতে দর্শক হিসেবে আপনাকে বিন্দুমাত্র মাথা খাটাতে না হয়। আরাম করে বসুন, (মাঝে মাঝে কিঞ্চিৎ মেদবহুল) অ্যাকশনের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিন, এবং কঙ্গনার জ্বালাময়ী অভিনয় দেখুন দুচোখ ভরে।

সত্যিই জ্বালাময়ী, ঠাট্টা নয়। পুরোদমে যখন অভিনয় করছেন, তখন সত্যিই দেখার মতো কঙ্গনা। পুরোপুরি অন্তঃস্থ করে নিয়েছেন সেই বিশেষ নারীকে, যিনি অল্প বয়সে বিবাহসূত্রে বাঁধা পড়েছেন রাজ পরিবারে, যাঁর নারীস্বভাব রাজপুত্র স্বামী (যিশু) বর্তমান থাকতেও তাঁকেই রাজ্যভার গ্রহণ করতে হয়। তিনি চান বলে নয়, তাঁর আশেপাশের সমস্ত পুরুষের মধ্যে তিনিই একমাত্র 'প্রকৃত পুরুষ' বলে।

স্বাভাবিকভাবেই তাঁর চেয়ে বেশি সময় ধরে আর কাউকে পর্দায় দেখা যায় না। কিছুক্ষণ পর মনে হতেই পারে, প্রতিটি দৃশ্যেই রয়েছেন কঙ্গনা। মণিকর্নিকা: দ্য কুইন অফ ঝাঁসি আপনাকে প্রথমে নিয়ে যাবে বেনারসের মণিকর্নিকা ঘাটে, সেখান থেকে বিঠুর, যেখানে এক কিশোরীর চটপটে কথা এবং তলোয়ার চালানোয় মোহিত হন এক পুুুুরুষ (খারবান্দা)। তাঁর দৌলতেই কিশোরীর প্রথমে ঝাঁসির রাজপরিবারে বিয়ে, তারপর রানী লক্ষ্মীবাঈ হয়ে ওঠা।

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতির জন্য বিশেষ স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা টিম মনিকর্ণিকার

এই ধরনের ছবিতে যা হয়, তা এখানেও হয়েছে। নির্মাতারা (যাঁদের মধ্যে একজন খোদ কঙ্গনা) প্রথমেই বলে নিয়েছেন যে ছবিটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি হলেও যাকে বলে শিল্পের স্বার্থে একটু আধটু সত্যের অপলাপ তো ঘটেছে বটেই। কাজেই পর্দায় যা দেখছেন, তার সত্যি মিথ্যে নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামাবেন না। যেমন ধরুন ভিলেন-রূপি ক্ষমতালোভী এক ভাই (আয়ুব), যিনি সিংহাসনে বসার চেষ্টা করেই চলেছেন, ওদিকে কঙ্গনা সখী পরিবৃত হয়ে একশোটা সিংহাসন সাজানো যায় এমন পরিমাণে সোনাদানা গায়ে পরে নেচে গেয়ে একাকার করছেন। এটি হলো তাঁর ঘরণী গৃহিণী অবতার, কিন্তু বড়ো বিরক্তিকর এই চূড়ান্ত মেক আপ করা, নকল চোখের পাতা পরা (১৮৩০ সালে), বলিউডি রোমান্সে ভরপুর রূপ

পাশাপাশি অবশ্য তাঁর মহিলা বাহিনী গঠন করার গল্পও ছুঁয়ে যাওয়া হয় ছবিতে। এই সুযোগে তলোয়ার হাতে লম্ফঝম্প সহকারে আরও একটি গান গাইয়ে ফেলানো হয় মহিলাদের দিয়ে। অন্যান্য চরিত্র আসে যায়। যেমন অতি বিশ্বস্ত ঘৗেস বাবা (ড্যানি), তাঁতিয়া টোপে (খারবান্দা), এবং একগুচ্ছ বোকাহাঁদা ইংরেজ, যাদের ধারণা, এই রানীও তাঁর পড়শী রাজাদের মতো ব্রিটিশদের ধমক শুনেই রাজত্ব বিসর্জন দিয়ে হাসিমুখে ইংরেজদের দেওয়া পেনশনের টাকায় তাদের হাতের পুতুল হয়ে জীবন চালিয়ে নেবেন।

অবশ্যই ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের গল্প আছে। 'চর্বি মাখানো কার্তুজ', 'মিরাটের ছাউনি', রাস্তার ধারে পড়ে থাকা বিদ্রোহী সেপাই আছে। কিন্তু আমরা এতক্ষণে বুঝে নিয়েছি যে এ সবই অলঙ্কার, রানীর উত্থানের প্রেক্ষাপট মাত্র, যাতে তিনি আমাদের শেখাতে পারেন, সাহস এবং দেশপ্রেম কাকে বলে। আগেই বলেছি, যুদ্ধসাজে সজ্জিতা অপ্রতিরোধ্য কঙ্গনা সত্যিই দেখার মতো। ঘোড়ায় চড়ে, তলোয়ারের এক কোপে দুশমনের মুণ্ডু কেটে নিচ্ছেন, ঘামে রক্তে মাখামাখি, ভয়াল মুখমণ্ডল। যুদ্ধের দৃশ্য নিয়ে বলার কিছু নেই। একেবারে জোশে ভরপুর।

জাতীয়তাবোধের সংজ্ঞা বোঝাতে গিয়ে ছবিটি স্বাভাবিকভাবেই শাসকের দিকেই ঝোঁকে (সিন্ধিয়া-গোয়ালিয়র সংক্রান্ত অসামান্য একটি কটাক্ষ রয়েছে এখানে)। একটি বাছুরকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা হয়। 'ভারত মাতা' এবং তাঁর 'বেটি' নিয়ে অনেক কথা বলা হয়। পয়সা উসুল হিসেবে একটি লাইনই যথেষ্ট: "যব বেটি উঠ খাড়ি হোতি হ্যায় তো জিৎ বড়ি হোতি হ্যায়।" সিটি, হাততালি।

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, মণিকর্নিকা জাতীয়তাবাদের কোনো সংজ্ঞাই বাদ দেয় না। ফলস্বরূপ প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো শুভদিনে মুক্তিলাভ। লালমুখো সাহেব তাড়ানোর দৃশ্যে একটু ভ্রূ কুঁচকাতেই পারেন, কিন্তু অস্বীকার করতে পারবেন, যে ঝাঁসির পতাকা উত্তোলন আসলে আমাদের তেরঙ্গা উত্তোলনেরই পূর্বাভাস? সর্বোপরি, এই ছবির সঙ্গে আমাদের বেঁধে রাখেন কঙ্গনা। ছবির শ্রেষ্ঠ মুহূর্তে তাঁর অভিনীত চরিত্র, ছবির কাহিনী, এবং পর্দা, সবটাই তাঁর দখলে।

Movie Review Kangana Ranaut
Advertisment