গ্ল্যামারের হাতছানি। ঝকঝকে, চাকচিক্য জীবনযাপনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অন্ধকার মনোজগত। একের পর এক রহস্যমৃত্যু গ্ল্যামারজগতে। গত ১৫ মে বাংলা টেলিপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পল্লবী দের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় তাঁর ফ্ল্যাট থেকে। তার দিন দশেকের মাথায় আরেক মডেল-অভিনেত্রী বিদিশা দে মজুমদার, যিনি নিজেই পল্লবী অস্বাভাবিক মৃত্যু মেনে না নিতে পেরে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন, বৃহস্পতিবার তাঁরও ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় দমদম নাগেরবাজার ফ্ল্যাট থেকে। এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরতে না পেরতেই বিদিশার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মঞ্জুষা নিয়োগীরও একই পরিণতি। গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয় টলিপাড়ার উঠতি অভিনেত্রীকে। পল্লবী, বিদিশা, মঞ্জুষাদের মতো তরতাজা প্রাণ কেন অকালেই নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে? ভাবিয়ে তুলছে সমাজকে।
পরপর তিন-তিনজনের এমন পরিণতিতে আঁতকে উঠেছে গ্ল্যামারজগৎ। নেটদুনিয়ায় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন- মৃত্যু কি এতই সহজ? এপ্রসঙ্গে মঞ্জুষার মায়ের কথায়, পল্লবী ও বিদিশার মৃত্যুর পরই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন মডেল-অভিনেত্রী। মাসখানেক আগেও একবার ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সময়ে মঞ্জুষার স্বামী-ই তাঁকে বাঁচান। হাজার বুঝিয়েও লাভ হয়নি। পাশাপাশি অভিনেত্রীর মা সাফ জানিয়ে দেন যে, জামাইয়ের প্রতি কোনও অভিযোগ নেই। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করার সিদ্ধান্তও নেননি তিনি।
<আরও পড়ুন: আরও এক অভিনেত্রীর রহস্যমৃত্যু, ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার বিদিশার বান্ধবী মঞ্জুষার>
উঠতি মডেল-অভিনেত্রীর মা আরও জানান, বিদিশার মৃত্যুর পর নাকি সারাদিনই তাঁর কথা বলছিলেন মঞ্জুষা। এমনকী বৃহস্পতিবারও বাঘাযতীনে শুট সেরে আসেন তিনি। রাতে স্বাভাবিকভাবে খাওয়া-দাওয়াও করেন। প্রায় আড়ইটে অবধি ফোনে কারও সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। মঞ্জুষা নিয়োগীর রহস্যমৃত্যুর পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একথাই জানান তাঁর মা। তবে বিদিশাকে ব্যক্তিগত স্তরে মঞ্জুষার চেনার দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন, তাঁর বন্ধুরা। সংবাদমাধ্যমের কাছে বিদিশার বন্ধুদের দাবি, ওর মুখে কোনওদিন মঞ্জুষার নাম শুনিনি। বিদিশা যেরকম মিশুকে মেয়ে ছিল, ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলে সবসময়েই তাঁর সঙ্গে ছবি তুলে পোস্ট করত। কিন্তু মঞ্জুষার সঙ্গে ওঁর কোনও ছবি কোনওদিন দেখিনি। প্রচারের আলোয় আসতে, কিংবা পারিবারিক কোনও সমস্যা ধামা চাপা দিতেই বিদিশার নাম করেননি তো ওই মডেল-অভিনেত্রীর মা? এমন প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা আনন্দবাজার অনলাইন-এর কাছে।
প্রসঙ্গত, একবছরও যায়নি এক চিত্রগ্রাহকের সঙ্গে বিয়ে করেছিলেন মঞ্জুষা। তাঁর মায়ের কথায়, "কোনও অভাব-ই ছিল না। তবে মঞ্জুষা আরও কাজ করতে চাইতেন। স্বামী হাজারবার বুঝিয়েছিলেন যে, কাজ না পেলে না পাওয়া যাবে। কোনও চাপ নেই।" এমনকী বিদিশার মৃত্যুর পরই মৃত্যুর কথা আরও বেশি করে বলা শুরু করেন মঞ্জুষা। মেয়ের কাছে এও বলেছিলেন যে, "পল্লবীর বাড়িতে সাংবাদিকরা এসেছিল, তোমার বাড়িতেও আসবে।" মেয়ের মুখে একথা শোনার পরও বারবার বুঝিয়েছিলেন মা। কিন্তু কোনও লাভই হয়নি। শুক্রবার সকালে পাটুলিতে নিজের বাপের বাড়ি থেকেই মঞ্জুষার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন