অতিমারী উত্তর পর্বে বক্স অফিসে বলিউড সিনেমার তুলনায় ব্যবসার নিরীখে দক্ষিণী ছবিগুলোর মার্কসিট ঝকঝকে। সে 'পুষ্পা: দ্য রাইস'-ই হোক, কিংবা RRR, 'কেজিএফ চ্যাপ্টার ২'। সেই তুলনায় বলিউডি ছবির আয় কম হয়েছে। যা কিনা ইতিমধ্যেই বি-টাউনের প্রযোজক-পরিচালকদের যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই সম্প্রতি মুখ খুলেছিলেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। এবার বলিউড ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন মনোজ বাজপেয়ী।
দক্ষিণী সিনেমার সাফল্য কীভাবে বলিউডকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে? সেই প্রেক্ষিতে মনোজের মন্তব্য, 'পুষ্পা: দ্য রাইস', RRR, 'কেজিএফ চ্যাপ্টার ২'- এই ছবিগুলোর এমন গগনচুম্বী সাফল্য বলিউডের মেইনস্ট্রিম পরিচালকদের শিরদাড়ায় ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিয়েছে। কোন ফর্মুলায় দক্ষিণী সিনে ইন্ডাস্ট্রির ছবিগুলো একের পর এক বাজিমাত করছে, সেই প্রসঙ্গেও মুখ খুললেন অভিনেতা। তাঁর কথায়, "ওরা এতগুলো ব্লকবাস্টার সিনেমা উপহার দিচ্ছে যে কে মনোজ বাজপেয়ী সেটা ভুলেই যান, বলিউডের খ্যাতনামা পরিচালকরাও ভয়ে কাঁপছে। ওঁরা জানেনও না যে কোন দিকে তাকাবেন.."
"কেজিএফ কিংবা আরআরআর সিনেমাগুলোর হিন্দি ভার্সনও ৩০০ কোটির ওপর আয় করছে, সেখানে সূর্যবংশীর মতো বলিউডের বিগ বাজেট ছবিকেও ২০০ কোটি কামাতে গিয়ে বেগ পেতে হচ্ছে। দক্ষিণী ছবি গুলোর সাফল্য দেখে খুব শিগগিরিই বলিউডের পাঠ নেওয়া উচিত। ওঁরা প্রথমত কাউকে ভয় পায় না। দ্বিতীয়ত, ভীষণরকম প্যাশনেট। প্রতিটা দৃশ্যের শুট এভাবে করে, যেন ওটাই বিশ্বের সেরা শট। RRR, 'কেজিএফ চ্যাপ্টার ২'- এর প্রত্যেকটা শট দেখুন, মনে হবে যেন, জীবন-মরণ অবস্থা। ঠিক এই প্যাশনটার অভাব রয়েছে বলিউডে। এখানে মেইনস্ট্রিম সিনেমগুলোর ক্ষেত্রে আমরা চিন্তাই শুরু করি বক্স অফিসে কত টাকা হবে, সেটা দিয়ে! আমরা আসলে নিজেরা নিজেদের সমালোচনা নিতে পারি না। ওঁদেরকে 'আলাদা' বলে একটা ট্যাগ লাগিয়ে দিই। এই যে দক্ষিণী ছবিগুলো এত ভাল ব্যবসা করছে, এটা বলিউডের জন্য একটা শিক্ষা। মুম্বইয়ের সিনেপরিচালকদের দেখে শেখা উচিত যে মেইনস্ট্রিম ছবি কীভাবে বানাতে হয়", মন্তব্য মনোজের।
<আরও পড়ুন: ‘হিন্দি রাষ্ট্রভাষা ছিল-আছে-থাকবে’, অজয়-সুদীপের টুইটযুদ্ধে বিতর্ক! ‘ঘি ঢাললেন’ রামগোপাল>
প্রসঙ্গত, বর্তমানে অজয় দেবগণ ও দক্ষিণী অভিনেতা কিচ্চা সুদীপের টুইটযুদ্ধ নিয়ে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া। দক্ষিণী-স্টার ‘KGF 2’ খ্যাত কিচ্চা সুদীপ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে প্যান ইন্ডিয়া সিনেমা নিয়ে কথা বলছিলেন। সেখানেই বলে বসেন- “হিন্দি আর এখন আমাদের জাতীয় ভাষা নয়…।” নজর এড়ায়নি অজয় দেবগণের। পাল্টা টুইটে দক্ষিণী অভিনেতাকে একহাত নেন তিনি। অজয় হিন্দিতে লেখেন, “কিচ্চা সুদীপ ভাই, আপনার কথা অনুযায়ী হিন্দি আমাদের রাষ্ট্রভাষা যদি না হয়, তাহলে আপনারা নিজেদের মাতৃভাষার ছবিগুলোকে কেন হিন্দিতে ডাবিং করে রিলিজ করেন? হিন্দি আমাদের মাতৃভাষা আর রাষ্ট্রভাষা ছিল, আছে, থাকবে। জন গণ মন।”
যা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল নেটদুনিয়ায়। এমনকী দক্ষিণের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা- কুমারাস্বামী, সিদ্দারামাইয়ারাও হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা বলায় টুইটে প্রতিবাদ করেছেন। অজয়ের পাল্টা সুদীপের মন্তব্য, “স্যর, আপনি হিন্দিতে যা লিখেছেন আমি বুঝেছি। কারণ আমরা সবাই হিন্দিভাষাকে ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি। আর তাই হিন্দি শিখেছিও। কিন্তু ভাবছি, আমি যদি টুইটটা কান্নাড়া ভাষায় লিখতাম, তাহলে পরিস্থিতিটা কেমন দাঁড়াত? আচ্ছা আমারা কি ভারতের অংশ নই?” এককথায় বলিউড বনাম দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির প্রতিযোগিতা এবার প্রকাশ্যে। সেই বিতর্কের মাঝেই মনোজ বাজপেয়ীর মন্তব্য বেজায় প্রাসঙ্গিক।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন