Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

'সত্যজিৎ রায়ের ছবি দেখে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল'

পথের পাঁচালীতে অপুর চোখের ওই অসামান্য ক্লোজ-আপ, এবং দৃশ্যটি কাট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রবিশঙ্করের সুরের ঝঙ্কার - চিত্রনির্মাতা হিসেবে আমার ওপর গভীর এবং চিরস্থায়ী রেখাপাত করেছিল। 

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
satyajit ray 100 years

সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে তাঁর পছন্দের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। এযাবৎ এই সিরিজে প্রকাশিত হয়েছে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়মমতা শঙ্কর, বরুণ চন্দ, এবং মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকার। তবে এই সিরিজে ব্যতিক্রম হলেন কিংবদন্তী অস্কারজয়ী মার্কিন পরিচালক মার্টিন স্করসেসে, সত্যজিৎ সম্পর্কে তাঁর মুগ্ধতা ব্যক্ত করতে যিনি নিজেই কলম ধরেছেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর জন্য:

Advertisment

মার্টিন স্করসেসে

সিনেমার নাতিদীর্ঘ ইতিহাসে সত্যজিৎ রায় নামটা আমাদের জানা দরকার, তাঁর ছবি আমাদের দেখা দরকার। এবং বারবার দেখা দরকার, যেমন আমি প্রায়শই করে থাকি।

পশ্চিমে আমাদের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে অপু ট্রিলজি - পথের পাঁচালী (১৯৫৫), অপরাজিত (১৯৫৬), এবং অপুর সংসার (১৯৫৯)। ততদিন আমরা বড় পর্দায় ভারতকে দেখেছি বটে, তবে সম্পূর্ণ ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, যার অর্থ স্বভাবতই ছিল যে মুখ্য চরিত্রে আমরা দেখতাম পশ্চিমী দুনিয়ার প্রতিনিধিদের, এবং ভারতীয়রা ছিলেন 'এক্সট্রা', যাঁরা প্রচ্ছন্ন থেকে 'লোকাল কালার' যোগাতেন। আমরা কেউ জানতাম না, সেইসব ছবির পটভূমি গুজরাট, না কাশ্মীর, না পশ্চিমবঙ্গ, নাকি মহারাষ্ট্র - সবটাই ছিল স্রেফ 'ইন্ডিয়া'।

জঁ রেনোয়া-র ছবি 'দ্য রিভার' (১৯৫১), যার লোকেশন খুঁজতে সাহায্য করেছিলেন সত্যজিৎ, একটু অন্য ধরনের ছিল, যার মূলে ছিল ভারতের প্রতি এবং বাংলা সংস্কৃতির প্রতি গভীর অনুরাগ। তবে মেলানি-র ভূমিকায় রাধা বার্নিয়ার ছাড়া সমস্ত প্রধান চরিত্রই ছিল হয় ইংরেজ, নাহয় আমেরিকান।

সুতরাং প্রথমবার অপু ট্রিলজি দেখে আমাদের শুধু চক্ষুরুন্মীলন হয়েছিল তাই নয়, আবেগে ভেসে গিয়েছিলাম আমরা। যেসব মানুষ এতদিন ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকতেন, তাঁরাই আজ মুখ্য চরিত্র হিসেবে ক্যামেরার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। দৈনিক জীবনের গল্প বলছিল এইসব ছবি, কিছুটা ইটালিয়ান নিও-রিয়েলিজমের মতো। কিন্তু ছবি তৈরির শিল্প, শৈলী দেখে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। একাধারে কাব্যিক, সুদূর-বিস্তৃত, এবং একান্ত অন্তরঙ্গ।

satyajit ray 100 years পথের পাঁচালী ছবিতে ছোট অপুর ভূমিকায় সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

ম্যানহ্যাটান-এর একটি হলে বসে একবারে পরপর তিনটি ছবি দেখে ফেলেছিলাম। মন্ত্রমুগ্ধের মতো। পথের পাঁচালীতে অপুর চোখের ওই অসামান্য ক্লোজ-আপ, এবং দৃশ্যটি কাট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রবিশঙ্করের সুরের ঝঙ্কার - সিনেমা হলে বসে অকস্মাৎ কিছু আবিষ্কার করার যে দুর্লভ মুহূর্তগুলি, তার মধ্যে একটি - এবং চিত্রনির্মাতা হিসেবে আমার ওপর গভীর এবং চিরস্থায়ী রেখাপাত করেছিল সেই মুহূর্ত।

এবং সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজের স্রেফ সূচনা ছিল ওই ট্রিলজি।

আমাদের সকলেরই সত্যজিৎ রায়ের ছবি দেখা দরকার, এবং বারবার, বারবার, দেখা দরকার। সবকটি ছবিকে একত্রিত করে আমাদের পরম মূল্যবান সম্পদ হিসেবে দেখা উচিত।

(মার্টিন স্করসেসে অস্কারজয়ী প্রবাদপ্রতিম পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক, এবং অভিনেতা)

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Advertisment