দীর্ঘ লকডাউনে বহু মানুষ অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছেন। একেবারেই দিনমজুর শ্রেণিভুক্ত যাঁরা, তাঁদের জন্য বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি অর্থসাহায্য ইতিমধ্যেই এসেছে কিন্তু ছোট ব্যবসায়ী, সেলফ এমপ্লয়েড শ্রেণিভুক্ত পেশাদাররা এমনকী অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরও একটা বড় অংশ দৈনিক পারিশ্রমিকে কাজ করেন। তাঁদের কথাও ভাবতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানালেন অভিনেত্রী রূপা ভট্টাচার্য।
জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবং বিজেপি-সদস্য রূপা সম্প্রতি তাঁর টুইটার হ্যান্ডল থেকে একটি টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। প্রধানমন্ত্রীর অফিস, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং অভিনেত্রী-সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কেও ট্যাগ করেছেন সেই টুইটে। রূপা আদতে যা লিখেছেন তা হল প্রধানমন্ত্রীকে একটি খোলা চিঠি।
আরও পড়ুন: লকডাউনে পিছিয়ে গেল অভিরূপের হিন্দি ওয়েব সিরিজের মুক্তি
এই চিঠির সারমর্মটি অনুবাদ করলে দাঁড়ায়--
''পরম শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রীজি,
বাংলার মধ্যবিত্ত দিনআনি মানুষের অবস্থা সব থেকে বেশি শোচনীয়। এঁরা না কোনও অন্তর্দয় যোজনার সুবিধা পান, না পারেন কারো কাছে হাত পাততে। দয়া করে এঁদের জন্য একটু ভাবুন..। ছোট দোকানদার, ফাস্ট ফুড সেন্টার, বিউটি পার্লার, টিউটরিয়াল, ডেইলি কন্ট্রাক্টর, সেলসম্যান, অ্যাপ-কার মালিক ও ড্রাইভার, জামাকাপড় ও ইলেকট্রনিক্স খুচরা বিক্রেতা এবং বাংলা চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন জগতের ছোট শিল্পী-কলাকুশলীরা। এঁদের জন্য একটু ভাবুন মোদীজি।''
উপরের আবেদনটি নিয়ে একটি অনলাইন পিটিশন থ্রেড তৈরি করেছেন রূপা, যেখানে সই সংগ্রহের কাজ চলছে। তবে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী নন, মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও একটি আবেদন রয়েছে তাঁর যা একেবারেই বাংলার বিনোদন জগৎকে কেন্দ্র করে। যেহেতু এই জগতের বহু শিল্পী-কলাকুশলীরা দৈনিক পারিশ্রমিকে কাজ করেন, এবং তাঁদের অনেকেই দরিদ্র শ্রেণিভুক্ত নন, তাই এঁদের অনেকেই দ্বিগুণ সমস্যায় রয়েছেন-- এক তো আয়ের পথ বন্ধ, দ্বিতীয় সামাজিক সমীক্ষা অনুযায়ী এঁরা নিম্ন শ্রেণিভুক্ত না হওয়ায় কোনও সরকারি অনুদানেও বঞ্চিত।
এই মধ্যবিত্ত দৈনিক পারিশ্রমিকের শিল্পীদের জন্যই রাজ্য সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন রূপা। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, ''আমাদের ফোরাম ও ফেডারেশনে প্রচুর শিল্পীদের আবেদন জমা পড়ছে, কলাকুশলীদের আবেদন জমা পড়ছে, যাদের বেঁচে থাকাটা এখন মুশকিল। এই সমস্যার জন্য ফোরাম সিনিয়র আর্টিস্টদের কাছে অনুদান চাইছে এবং ফেডারেশন সিনিয়র টেকনিশিয়ান, যাঁরা নিয়মিত কাজ করেন, তাঁদের থেকে অনুদান চাইছে। কিন্তু যাঁদের কাছে চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হাতেও তো কাজ নেই। আর টেলিভিশনের কথা যদি ধরি, যাঁদের যত বেশি উপার্জন, তাঁদের খরচও ততটাই বেশি। ছবির ক্ষেত্রে যাঁরা সুপারস্টার রয়েছেন, তাঁদের বাদ দিলে বাকিদের হাতে কিন্তু সঞ্চয় খুব বেশি থাকে না। এই ইন্ডাস্ট্রির শিল্পীরা কোনওভাবেই শাহরুখ-সলমনের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেন না। প্রচুর শিল্পী রয়েছেন, যাঁরা সারা মাস কাজ করেননি, মাসে তিন-চারদিন কাজ করেছেন, আবার হয়তো তিন-চার মাস বসে থেকেছেন। তাঁদের পক্ষে অনুদান দেওয়া যেমন অসম্ভব, পাশাপাশি তাঁদের অর্থনৈতিক সংকটের জন্য কোনও সাহায্য নেই। মুখ্যমন্ত্রী তো বরাবরই শিল্পী-টেকনিসিয়ানদের পাশে থেকেছেন, তাই তাঁর কাছে আবেদন, যাঁরা আবেদন করছেন ফোরামে, তাঁদের যদি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সাতদিনের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়, তাহলে তাঁদের কোনওমতে বেসিক খরচটুকু চলে যাবে। ঠিক সেভাবেই যদি টেকনিশিয়ানদেরও কিঞ্চিংৎ সাহায্য করা যায়।''