Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

মহিলারা যে মানুষ সেটাই তো ধরা হয় না: প্রিয়াঙ্কা

Priyanka Rati Pal: 'আমি আমার বাড়িতে সম্পূর্ণ অন্য রকম একটা পরিবেশ পেয়েছি কিন্তু বেশিরভাগ পরিবারেই মেয়েদের উপর সবকিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়। তার উপর রয়েছে অজস্র কুসংস্কার, ছেলে-মেয়ে সবার মধ্যেই।'

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
model actress priyanka rati pal in zee bangla cinema originals ekchakra

আইপিএস অফিসার জোয়া রহমানের চরিত্রে প্রিয়াঙ্কা রতি পাল।

Priyanka Rati Pal in Ekchakra: জি বাংলা সিনেমা অরিজিনালস 'একচক্র'-তে এক নির্ভীক আইপিএস অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন প্রিয়াঙ্কা রতি পাল। টেলিভিশনে দর্শক এতদিন তাঁকে একদমই অন্য রকম চরিত্রে দেখেছেন। তিনি কখনও 'করুণাময়ী রাণী রাসমণি'-র বাঈজি ময়নাসুন্দরী, কখনও 'জয় বাবা লোকনাথ'-এর জমিদারগিন্নি। সেই স্টিরিওটাইপ ভেঙে 'একচক্র'-তে প্রিয়াঙ্কা এলেন এমন একটি ঋজু চরিত্রে, যে চরিত্রটি শুধুমাত্র নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলে না, পাশাপাশি কুসংস্কার-আশ্রিত সমাজের দিকে প্রশ্ন তোলে।

Advertisment

একচক্র একটি গ্রাম যা মিলেনিয়াম-পরবর্তী সময়েও অশিক্ষা ও কুসংস্কারের অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। সেই গ্রামেরই দায়িত্ব পেয়ে আসে আইপিএস ব্যাচের টপার জোয়া রহমান। প্রতি পদে পদে নিজের জীবন বিপন্ন করে কীভাবে একচক্রে ঘটে চলা অপরাধের মোকাবিলা করে জোয়া, সেই নিয়েই এই টেলিছবির গল্প যা সম্প্রচার হবে ২০ অক্টোবর দুপুর ১টায় জি বাংলা সিনেমায়। ''এই চরিত্রটা খুব সর্টেড একজন আইপিএস অফিসারের, যে তার কাজের জায়গায় যেমন খুব দক্ষ আবার সে তার ফ্যামিলির দায়িত্বটাও সামলায়। আর এই সর্টেড ব্যাপারটায় আমি নিজের সঙ্গে খুব মিল পেয়েছি, বাদবাকি খুব একটা মিল নেই চরিত্রটার সঙ্গে'', ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন প্রিয়াঙ্কা, ''আমার নিজের যেটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে, সেটা হল এই চরিত্রটার সঙ্গে 'দিল্লি ক্রাইম'-এর শেফাশি শা-র চরিত্রকে রিলেট করতে পারে। এই কাজটা আসার আগেই আমি 'দিল্লি ক্রাইম' দেখেছি। তখনই মনে হয়েছিল, এরকম একটা চরিত্র যদি পেতাম দারুণ হতো।''

Model Actress Priyanka Rati Pal প্রিয়াঙ্কা রতি পাল। ছবি: প্রিয়াঙ্কার ফেসবুক পেজ থেকে

আরও পড়ুন: টলিউড টাইপকাস্ট করবে কিনা তা জানি না: অরিজিতা

২০০২ সালে, স্কুলে পড়তে পড়তেই মডেলিংয়ে আসা। পড়াশোনা ও মডেলিং পাশাপাশি চালিয়ে গিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। ওই সময় তাঁর প্রতিবেশী এক মডেলের প্রস্তাবেই প্রথম ব়্যাম্প শো-তে অংশগ্রহণ করেন। ''আমি তো জানতাম না কাজটা ঠিক কী। যখন গিয়ে দেখলাম যে ব়্যাম্প-এ হাঁটতে হবে, কী খুশি যে হয়েছিলাম। আর শো-টাও ছিল খুব বড়-- তানিশক-এর একটি কালেকশন লঞ্চ ছিল। ওরকম সাজগোজ, একটা লার্জার দ্যান লাইফ ব্যাপার, আমার কাছে বেশ স্বপ্নের মতো লাগল। আর ওই শোয়ের পরে প্রচুর বড় ব্র্যান্ডের অফার পেলাম। আশিস ব্যানার্জি-র কাজ শুরু করলাম। অনিরুদ্ধদা, সনৎদার সঙ্গে আলাপ হল, আস্তে আস্তে ফ্যামিলির মতো হয়ে গেল'', বলেন প্রিয়াঙ্কা।

model actress priyanka rati pal মডেলিং থেকেই অভিনয়ে এসেছেন প্রিয়াঙ্কা।

প্রাথমিকভাবে মডেলিং থেকে অভিনেত্রী হয়ে ওঠার কোনও ইচ্ছা ছিল না প্রিয়াঙ্কার। বরং বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি অভিনয়ের প্রস্তাব শুধুই ফিরিয়ে দিয়েছেন। প্রিয়াঙ্কা জানালেন, কখনও কোনও নামী প্রযোজনা সংস্থাকে সরাসরি না বলতে পারেননি বলে মিটিংয়ে উপস্থিত থেকেও পরে সরে গিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যে বিজ্ঞাপনের ছবির কাজ করছিলেন রিংগো বন্দ্যোপাধ্যায় ও ইন্দ্রাণী হালদারের উৎসাহে। ২০০৪-এ দুটি টেলিছবিতে অভিনয় করলেও তার পরে দীর্ঘ সময় আবারও অভিনয় থেকে দূরেই থেকেছেন। কিন্তু প্রিয়াঙ্কার মধ্যে অভিনেত্রী হয়ে ওঠার সমস্ত সম্ভাবনা আঁচ করেছিলেন তাঁর বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ২০১০ সালে তাই আবারও দুটি টেলিছবি এবং ২০১১-তে স্টার জলসা-র ধারাবাহিক 'মুখোশমানুষ'।

Priyanka Rati Pal in Ekchakra ছবি সৌজন্য: প্রিয়াঙ্কা

মোটামুটি ২০১০-১১ থেকেই প্রিয়াঙ্কার পেশাগত দ্বৈত জীবন শুরু-- একদিকে মডেলিং ও অন্যদিকে অভিনয়। ''আমি একেবারেই নিজের মনের কথা শুনে চলি। আমি একা বসে ভাবি যে আমি ঠিক কী চাই'', বলেন প্রিয়াঙ্কা, ''আমি ভুল করা নিয়ে বেশি ভাবি না। আমার মনে হয়, ভুল-ঠিক তো এক এক রকম পার্সপেক্টিভ। আমি অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি হয়তো আগে। কিন্তু ওই সময় আমার মনে হয়েছিল ওইটাই ঠিক। আমি সময় নিই, প্রোজ অ্যান্ড কনজ বিচার করে যেটা মনে হয় করা উচিত সেটাই করি। আর আমি মনে করি আমার ভুল থেকে আমাকেই শিখতে হবে। তাই ভুল থেকে শিখে নিতে ভয় পাই না।''

আরও পড়ুন: কোনও চরিত্রই সাদা বা কালো নয়, সব চরিত্রই ধূসর: মিশমী

প্রিয়াঙ্কার এই ব্যক্তিত্বের ছাপ 'একচক্র'-এর জোয়া চরিত্রে পড়েছে বেশ খানিকটা। এই চরিত্রটি যেমন প্রিয়াঙ্কার মনোমতো, তেমনই এই ছবির গল্পের সারমর্ম সম্পর্কেও একটি স্বচ্ছ্ব ও সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি আছে তাঁর। এই গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সমাজে কুসংস্কারের বাড়বাড়ন্তের বিষয়টি। ''খুবই ভালো গল্পটা। এর আগে ঠিক এই ধরনের গল্প নিয়ে জি বাংলা অরিজিনালস আমরা দেখিনি। আমাদের ডিরেক্টর সঞ্জয় ভট্টাচার্য নিজেই লিখেছেন স্ক্রিপ্ট এবং অসাধারণ লিখেছেন'', বলেন প্রিয়াঙ্কা, ''এখনও তো আমাদের সমাজে মেয়েরা নিজেদের জীবনের ডিসিশন নিজে নিতে পারে না। মহিলারা যে মানুষ সেটাই তো ধরা হয় না। আমি আমার বাড়িতে সম্পূর্ণ অন্য রকম একটা পরিবেশ পেয়েছি কিন্তু বেশিরভাগ পরিবারেই মেয়েদের উপর সবকিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়। তার উপর রয়েছে অজস্র কুসংস্কার, ছেলে-মেয়ে সবার মধ্যেই। এগুলো আমাদের অনেককেই প্রত্যেকদিন ডিল করতে হয়। যারা কুসংস্কার মানে না, তাদের উপর ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয় যে তারা বিদেশি হয়ে গেছে। আমি দেখেছি এগুলো নিয়ে অশান্তি করেও লাভ হয় না, আবার ঠান্ডা মাথায় বসে বুঝিয়েও লাভ হয় না। মানুষের মধ্যে থেকে কুসংস্কার দূর করতে যেটা প্রয়োজন সেটা হল এডুকেশন।''

'একচক্র'-তে প্রিয়াঙ্কা অভিনীত চরিত্রটি এই কথাগুলোই বলে তার মতো করে। এই চরিত্রের জন্য প্রিয়াঙ্কাকে অনেকটাই টোন ডাউন করতে হয়েছে নিজের লুক। স্বেচ্ছায় অভিনেত্রী নিজেই নিজেকে ডিগ্ল্যামারাইজ করেছেন চরিত্রটিকে আরও বেশি করে মাটির কাছাকাছি আনতে। তাছাড়া চরিত্রের লুক যাতে কখনোই বিষয়বস্তুর গাম্ভীর্যকে ছাড়িয়ে না যায়, সেটাও একটা কারণ। তবে প্রিয়াঙ্কা কোনওভাবেই মেথড-অভিনেত্রী নন। ''এত সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কাজ কিন্তু আমি গোটা শুটিংটায় এত ফাজলামি করেছি সবার সঙ্গে যে একটা সময় ডিরেক্টরও বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিল। আমি আসলে সুইচ অন, সুইচ অফ করতে পারি। একটা বাচ্চাকে বুকে নিয়ে কান্নার সিন ছিল, আমি তার আগে এত হাসাহাসি করছিলাম যে ডিরেক্টর এসে আমাকে বলল, একটু ইমোশনটা নিয়ে ভাব, নিজের জীবনের কিছু কথা মনে কর। আমি বললাম, আমার জীবনের দুঃখ-দুর্দশার কথা ভাবলে কিছুই হবে না। কারণ আমি যেটা পেরিয়ে এসেছি, সেটা আমাকে আর একটুও কষ্ট দেয় না। ওই সিনটা ওয়ান টেক ওকে হয়েছিল। কাট বলার পর দেখলাম ইউনিটের অনেকেরই চোখে জল'', বলেন প্রিয়াঙ্কা।

Bengali Actress Bengali Television
Advertisment