সংসারে অভাব-অনটন। দু'বেলা, দু'মুঠো ভাতও ঠিক করে জোগাড় হত না। পেটের দায়ে তাই গায়ক হওয়ার ইচ্ছে শিকেয় তুলে রাখতে হয়েছে। তবে 'আইডল' মহম্মদ রফিকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারেননি। গানের গলাও যে অসাধারণ। তাই সাধারণ হয়েও কোথাও গিয়ে আবদুল যেন তার পাড়া-প্রতিবেশী, এলাকার মানুষের কাছে অসাধারণ। গলায় সাক্ষাৎ সরস্বতীর বাস। গলা ছাড়লেই মহম্মদ রফির কথা মনে করিয়ে দেন আশেপাশের মানুষজনদের। তাই যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি আবদুল এখন সকাল-বিকেল গান গেয়ে তাঁদের মনোরঞ্জন তো করেন-ই। উপরন্তু মহম্মদ রফির গানের মধ্য দিয়েই করোনাকালে সতর্কবার্তাও পৌঁছে দেন শ্রোতাদের কাছে।
পুরো নাম আবদুল মহম্মদ মুজফফর। বাড়ি উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার মাল ব্লকের ওদলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের চুইয়া বসতিতে। পেশায় টোটো চালক। ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল মহম্মদ রফির মতো গায়ক হওয়ার। কিন্তু সাংসারিক অভাবে পড়ে সে ইচ্ছে আর পূরণ হয়ে ওঠেনি। তবে বছর চল্লিশের আবদুল পরিস্থিতির কাছে হার মানতে নারাজ। তাই এই অতিমারী আবহেও টোটো পরিষেবা চালু রেখে যাত্রীদের মনোরঞ্জনে ব্যস্ত। তবে শুধু গান শুনিয়ে মন ভাল রেখেই ক্ষান্ত থাকেন না তিনি। বরং, এই গানের মাধ্যমেই মানুষের কাছে করোনা সংক্রমণ এড়ানোর সতর্কবার্তা পৌঁছে দেন। টোটো উঠে যাত্রীরাও তাঁর গান শুনতে শুনতে পৌঁছে যান গন্তব্যে।
পুজোর সময়ে করোনা আতঙ্কে যখন সবাই কাঁটা। আবদুল টোটো নিয়ে তখন এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় গিয়ে মাস্ক পরে, স্যানিটাইজা ব্যবহার করে মন্ডপ দর্শনের বার্তা দেন সবাইকে। কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও করোনা যেন আবার কামড় বসাতে না পারে স্বাভাবিক জনজীবনে, সেটাই আপাতত মহম্মদ রফি-কণ্ঠী আবদুলের একমাত্র উদ্দেশ্য। যাঁর গান শুনে মুগ্ধ ওদলবাড়ির মানুষেরা।