Nusrat Jahan: বাংলা ছবির কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর জন্মদিন ৮ জানুয়ারি। আবার এই দিনেই জন্ম নুসরত জাহানের যিনি ২০২০ সালে পা দিলেন তিরিশে। আর ১৯০৮ সালের ৮ জানুয়ারি, অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম হয় ম্যারি অ্যান ইভান্স-এর যিনি ভারতীয় ছবির জগতে 'ফিয়ারলেস নাদিয়া' বলে পরিচিত। সংক্ষেপে একবার ফিরে দেখা এই তিন অভিনেত্রীর যাত্রা।
এবছর তিরিশে পা দিলেন বাংলার ছবির প্রথম সারির নায়িকা ও তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান। তাঁর জন্মদিন নিয়ে বাংলার দর্শকের মধ্যে বিপুল উদ্দীপনা থাকে। ৮ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকেই সোশাল মিডিয়ার ফ্যানক্লাবগুলিতে শুভেচ্ছাবার্তার ঢল নেমেছে। কিন্তু নুসরত বাংলা ছবির জগতে আসার আগে এই দিনটি এই জগতে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ছিল সুপ্রিয়া দেবীর জন্মদিন হিসেবে। তবে এই দিনে আরও এক অভিনেত্রীর জন্ম যাঁকে বাংলা বা ভারতীয় ছবির দর্শক সেভাবে মনে রাখেননি। তিনি হলেন নাদিয়া। এই তিন অভিনেত্রীর মধ্যে বয়সের দিক থেকে প্রবীণতম নাদিয়াই। তাই তাঁকে দিয়েই শুরু করা যাক এই ফিরে দেখা।
আরও পড়ুন: নাগরিক বিরোধিতায় ‘শ্রীময়ী’, কী বললেন চিত্রনাট্যকার
ম্যারি অ্যান ইভান্স ওরফে নাদিয়া
সিনেমাজগৎ তাঁকে ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবেই চেনে কারণ তাঁর অভিনেত্রী জীবনের পুরোটাই এদেশে যদিও জন্মসূত্রে তিনি অস্ট্রেলীয়। ১৯০৮ সালের ৮ জানুয়ারি তাঁর জন্ম অস্ট্রেলিয়ার পার্থ-এ। পাঁচ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে তৎকালীন বম্বে-তে এসে পৌঁছন ম্যারি অ্যান। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত তাঁর বাবা তখন ওই শহরেই থাকতেন। ম্যারি অ্যানের সাত বছর বয়সে তাঁর বাবা প্রাণ হারান প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। এর পরেই ম্যারির পরিবার চলে যায় পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনওয়া প্রদেশে। সেখানে থাকতেই ম্যারি শেখেন শিকার, ঘোড়ায় চড়া ও বন্দুকবাজি।
১৯২৮ সালে ম্যারি বম্বেতে যখন ফেরেন, তখন তিনি এক সন্তানের মা। বম্বেতে সেলসগার্লের চাকরি করতে শুরু করেন ম্যারি। পাশাপাশি যোগ দেন একটি ব্যালে ট্রুপে। তারা বিভিন্ন সেনা ক্যাম্পে পারফর্ম করত। এভাবেই একদিন দেখা হয় এক ভবিষ্যৎদ্রষ্টার সঙ্গে। তাঁর পরামর্শেই ম্যারি অ্যান নিজের স্টেজ-নামকরণ করেন নাদিয়া। ওই সময়েই তিনি নজরে পড়েন ওয়াদিয়া মুভিটোন-এর প্রতিষ্ঠাতা জামশেদ জেবিএইচ ওয়াদিয়া-র। নাদিয়ার অসাধারণ স্টান্টের ক্ষমতা ও স্টেজ প্রেজেন্স দেখে আগেই মুগ্ধ হয়েছিলেন জামশেদ ও তাঁর ভাই হোমি। তখন ভারতীয় ছবিতে টকিজ-এসেছে সবেমাত্র। প্রথমে নাদিয়াকে দু-একটি ছবিতে ক্যামিও চরিত্রে সুযোগ দিয়ে দেখা হয়। নাদিয়ার মধ্যে সম্ভাবনা দেখে এর পরে তাঁকে তারকা হিসেবে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন ওয়াদিয়া ভ্রাতৃদ্বয়। ১৯৩৫ সালের ছবি 'হান্টারওয়ালি' দিয়েই নায়িকা চরিত্রে ডেবিউ নাদিয়ার। এর পরে আরও ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন নাদিয়া। পরবর্তী সময়ে হোমি ওয়াদিয়াকেই বিয়ে করেন তিনি।
১৯৯৬ সালে, তাঁর ৮৮তম জন্মদিনের ঠিক পরের দিন, অর্থাৎ ৯ জানুয়ারি মারা যান নাদিয়া। বিশাল ভরদ্বাজের ছবি 'রেঙ্গুন'-এ, কঙ্গনা অভিনীত চরিত্রটি অনেকটাই 'ফিয়ারলেস নাদিয়া'-র জীবন অনুপ্রাণিত।
সুপ্রিয়া দেবী
১৯৩৩ সালে বর্মায় জন্ম সুপ্রিয়া দেবীর। তাঁর বাবা, আইনজীবী গোপালচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় সেদেশেই কর্মরত ছিলেন। বর্মায় থাকতেই নাচ শিখেছিলেন তিনি। সেদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থাকিন নু তাঁকে পুরস্কৃতও করেন তাঁর নাচের প্রতিভা দেখে। ১৯৪২ সালে জাপান সেদেশ দখল করলে রিফিউজি হিসেবে পায়ে হেঁটে সীমান্ত পার করে এদেশে আসে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। কলকাতায় এসেও তাঁর নৃত্যশিক্ষার তালিম চলে। বাংলা ছবির সেই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী চন্দ্রাবতী দেবী ছিলেন সুপ্রিয়া দেবীর প্রতিবেশী। মূলত তাঁর উৎসাহ ও সাহায্যেই বাংলা ছবিতে পা রাখেন সুপ্রিয়া দেবী। প্রথম ছবি ১৯৫২ সালে 'বসু পরিবার', যেখানে নায়কের ভূমিকায় ছিলেন উত্তমকুমার।
১৯৫৪ সালে বিয়ে হয় বিশ্বনাথ চৌধুরীর সঙ্গে এবং ১৯৫৮ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বিয়ের পরে অভিনয় জগত থেকে কয়েক বছরের জন্য সরে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী, ফিরে আসেন আবার ১৯৫৮ সালেই 'মর্মবাণী' ছবি দিয়ে। ১৯৫৯ সালে তাঁর দুটি ছবি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়-- 'আম্রপালী' ও 'সোনার হরিণ'। ষাটের দশকের শুরু থেকেই প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসিত হন সুপ্রিয়া দেবী। ১৯৬০ সালেই মুক্তি পেয়েছিল দুটি গুরুত্বপূর্ণ ছবি-- 'মেঘে ঢাকা তারা' ও 'শুন বরনারী'। তার পরের বছরই আসে 'কোমল গান্ধার' ও 'স্বরলিপি'। বলিউডে সুপ্রিয়া দেবীর ডেবিউ ১৯৬৩ সালে ধর্মেন্দ্রর বিপরীতে 'বেগানা' ছবিতে। সুপ্রিয়া দেবী অভিনীত 'জননী', বাংলা ছোটপর্দার দীর্ঘতম ধারাবাহিকগুলির অন্যতম।
২০০৬ সালের হিন্দি ছবি 'নেমসেক' বড়পর্দায় তাঁর শেষ কাজ। ২০১৮ সালের ২৬ জানুয়ারি, ৮৫ বছর বয়সে জীবনাবসান হয় বাংলা ছবির এই কিংবদন্তি অভিনেত্রীর।
নুসরত জাহান
১৯৯০ সালে কলকাতায় জন্ম নুসরত জাহানের। স্নাতক স্তর পর্যন্ত কলকাতাতেই পড়াশোনা করেছেন সাংসদ-অভিনেত্রী। ২০১০ সালে ফেয়ার ওয়ান মিস কলকাতা খেতাবের পর বাংলা ছবির জগতে তাঁর ডেবিউ 'শত্রু' ছবি দিয়ে। প্রথম ছবি থেকেই বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছেন নুসরত। অরিন্দম শীলের 'হর হর ব্যোমকেশ' ও সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'জুলফিকার' ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয় এবং ওই দুটি ছবিতেই বাণিজ্যিক ছবির নায়িকার ইমেজ থেকে বেরিয়ে চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন নুসরত। ২০১৮ থেকেই তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসতে শুরু করেন। ২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচনে বসিরহাট কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নুসরত ও বিরাট ব্যবধানে জিতে নেন সিটটি।
তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান ২০১৯ সালের জুন মাসে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন কলকাতার ব্যবসায়ী নিখিল জৈনের সঙ্গে। কিন্তু নুসরত তাঁর রাজনৈতিক দায়িত্বের জন্য অভিনেত্রী জীবনকে বর্জন করেননি। ২০২০ সালের গোড়াতেই মুক্তি পেয়েছে নুসরত-অভিনীত ছবি 'অসুর'। আগামী দিনেও দুটি ক্ষেত্রকেই সমান গুরুত্ব দেবেন তিনি, এমনটাই জানিয়েছেন তিনি বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে।