Prosenjit Chatterjee on payment recovery: ন্যায্য পারিশ্রমিক উদ্ধার নিয়ে নাজেহাল টেলিপাড়ার শিল্পীদের একাংশ। মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রযোজক রানা সরকার যে সমস্ত ধারাবাহিকের প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন, সেই সব ইউনিটের বেশিরভাগ শিল্পী ও কলাকুশলীদের কয়েক মাসের পারিশ্রমিক বকেয়া রয়েছে। টাকা উদ্ধারের জন্য ভুক্তভোগী শিল্পীরা দ্বারস্থ হয়েছেন আর্টিস্টস ফোরামের। গতকাল, পয়লা মে একটি বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছিল আর্টিস্টস ফোরামের পক্ষ থেকে। ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইমপা)-এর অফিসে এই বৈঠক শুরু হয় সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ। প্রায় ৪ ঘণ্টা বৈঠকের পরে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র মুখোমুখি হয়ে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্য়ায় জানান যে বকেয়া টাকা পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই কিন্তু ঠিক কবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
এদিনের বৈঠকে আর্টিস্টস ফোরামের একশোরও বেশি সদস্য়, ইমপা-র সভাপতি পিয়া সেনগুপ্ত ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্টার জলসা, জি বাংলা ও কালারস বাংলা-- এই তিন চ্যানেলের প্রতিনিধিরা। ওই তিন চ্য়ানেল মিলিয়ে মোট পাঁচটি স্লটের ধারাবাহিকের প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন রানা সরকার। তার মধ্য়ে 'প্রথম প্রতিশ্রুতি' ছাড়া বাকি চারটি ধারাবাহিকের প্রযোজনার দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয় গত মার্চ মাসেই। হস্তান্তরের অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যায় 'প্রথম প্রতিশ্রুতি'।
আরও পড়ুন: শুধু শিল্পীরা নন, বকেয়া টাকা নিয়ে নাজেহাল টেকনিশিয়ানরাও
এই হস্তান্তর নিঃসন্দেহে ঘটেছিল নির্দিষ্ট চ্য়ানেলগুলির উদ্য়োগে কারণ সব ধারাবাহিকের স্বত্বাধিকারী কিন্তু সংশ্লিষ্ট চ্য়ানেল। হস্তান্তরের পরে সেই সব ধারাবাহিকের ইউনিটের পেমেন্টের দায়িত্ব যেমন নতুন প্রযোজকের, তেমনই হস্তান্তরের আগের পর্যায়ের পেমেন্টের দায়িত্ব পুরনো প্রযোজকের অর্থাৎ এক্ষেত্রে রানা সরকারের। টেলিভিশনের বর্তমান মোডাস অপারেন্ডি অনুযায়ী, চ্য়ানেল প্রত্য়েক মাসে বা দু'মাস অন্তর প্রযোজককে চুক্তি অনুযায়ী ধারাবাহিক প্রযোজনার টাকা দিয়ে থাকেন। কিন্তু চ্য়ানেলের থেকে নির্দিষ্ট সময়ে টাকা আসুক বা না আসুক, নিয়ম অনুযায়ী প্রত্য়েক মাসের শেষেই শিল্পী-কলাশকুশলীদের টাকা মিটিয়ে দেওয়ার কথা। সেটাই প্রযোজকের তরফে 'বেস্ট প্র্য়াকটিস' হিসেবে ধরা হয়। রানা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এক্ষেত্রে অনির্দিষ্টকাল পেমেন্ট ফেলে রেখেছেন।
কিন্তু রানা সরকার চ্যানেলগুলির থেকে টাকা পেয়েও পেমেন্ট বাকি রেখেছেন নাকি চ্য়ানেলের তরফ থেকে এখনও কোনও টাকা পাননি বলে ফেলে রেখেছেন, সেই নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। এই প্রসঙ্গে রানা সরকারের থেকে বিবৃতি পাওয়া যায়নি কারণ তিনি বিগত প্রায় তিন মাস ধরেই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন। আর পয়লা মে-র বৈঠকে চ্য়ানেলের যে প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করেন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৈঠক শুরু হয়। প্রায় দু'ঘণ্টা পরে চ্য়ানেলের প্রতিনিধিরা বেরিয়ে যান ইমপা-র অফিস থেকে। কিছুক্ষণের বিরতির পরে আবারও বৈঠক শুরু করেন ফোরামের সদস্যরা। দ্বিতীয় দফায় বৈঠক চলে আরও দেড় ঘণ্টা প্রায়। সাড়ে ন'টা নাগাদ ফোরামের বেশিরভাগ সদস্যই বেরিয়ে এসে জানান যে বৈঠক শেষ হয়েছে। কিন্তু বৈঠক সম্পর্কে আর কোনও তথ্য দিতে তাঁরা নারাজ। অরিজিৎ চৌধুরী, সৌমিলি বিশ্বাস-সহ বকেয়া টাকার সমস্যায় জর্জরিত একাধিক প্রবীণ ও নবীন শিল্পীরা জানিয়েছেন যে ফোরামের পদাধিকারীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনও বিবৃতি তাঁরা দেবেন না।
আরও পড়ুন: জানেন, দূরদর্শনের টেলিছবিতে অভিনয় করেছিলেন মান্না দে?
তবে ইমপা অফিসে এর পরেও থেকে যান প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্য়ায়, পল্লবী চট্টোপাধ্যায়, অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়, লামা হালদার, কুশল চক্রবর্তী-সহ আর্টিস্টস ফোরামের এগজিকিউটিভ কমিটির সদস্য়রা। প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ তাঁরা ইমপা অফিস থেকে বেরিয়ে আসেন। ওই সময়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র মুখোমুখি হয়ে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ''পেমেন্টের ব্য়াপারে বেশ কিছু আইনি বিষয় রয়েছে, সেগুলো মিটে গেলেই পেমেন্ট পেয়ে যাবেন শিল্পীরা।''
এদিনের বৈঠকে ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস অ্য়ান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া-র কোনও পদাধিকারী উপস্থিত ছিলেন না। অথচ টেলিপাড়ার বিশ্বস্ত সূত্রের খবর ছিল যে এই বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য় ফেডারশনকেও আহ্বান জানানো হয়। ফেডারেশনই হল বাংলা বিনোদন জগতের সবচেয়ে বড় সংগঠন। আর্টিস্টস ফোরাম, প্রোডিউসারস গিল্ড-সহ টেকনিশিয়ানদের সমস্ত গিল্ড এই ফেডারেশনের আওতায় পড়ে। তার পরেও কেন এই বৈঠকে ফেডারেশনের পদাধিকারীরা কেউ অংশ নিলেন না, সেটাই বেশ আশ্চর্যের।
আরও পড়ুন: সব প্রযোজক টাকা বাকি রাখেন না, বলছে টেলিপাড়া
এখন প্রশ্ন হল, ঠিক কবে টাকা পাওয়া যাবে এবং কীভাবে সুরাহা হবে? শিল্পীদের ন্যায্য পারিশ্রমিক উদ্ধার করা যে সম্ভব হবে, সেই নিয়ে অবশ্যই আশাবাদী প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় কিন্তু তিনিও নির্দিষ্ট কোনও সময়সীমা উল্লেখ করতে পারেননি। গত বছর যখন পেমেন্ট সংক্রান্ত ইস্য়ুতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল টেলিপাড়ায়, পাঁচদিন শ্য়ুটিং বন্ধ থাকার পরে বেশ কিছু ধারাবাহিকের সম্প্রচার আটকে যায়। শেষ পর্যন্ত কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই নিষ্পত্তি হয়।
যেহেতু পয়লা মে ফোরামের বৈঠকের পরেও বকেয়া টাকা পাওয়ার কোনও নির্দিষ্ট তারিখ বা সময়সীমা ঘোষণা করা হয়নি, তাই এক্ষেত্রেও মুখ্য়মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হতে পারে। অন্তত সেই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তা যদি হয়, তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে এই সমস্যার সমাধান না হওয়ারই আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। অর্থাৎ ধরে নেওয়া যেতে পারে, শিল্পীদের বকেয়া টাকা উদ্ধার হতে নিদেনপক্ষে আরও একমাস সময় লাগবে।