২০২৫-এর গরমের ছুটিতে আসছে রাজর্ষি দে-র আগামী ছবি ও মন ভ্রমণ। কলকাতার শ্যুটিং ইতিমধ্যেই শেষ। পরবর্তী ডেস্টিনেশন থাইল্যান্ড। তার আগে ছবি নিয়ে কথা বললেন পরিচালক রাজর্ষি দে।
বাঙালি ভ্রমণ পিপাসু। বাংলা ছবির দর্শককে হলমুখী করতেই কি 'ও মন ভ্রমণ'?
না, একেবারেই সেটা নয়। বেড়াতে যাওয়ার ছবি দিয়ে যদি দর্শক টানার প্রয়াস থাকত তাহলে তো সেটা আমি আবার কাঞ্চনজঙ্ঘাতে করে ফেলেছি। ১৭ জন মিলে দার্জিলিং যাওয়া, সেখানে থাকা, দার্জিলিঙের আকর্ষণীয় যে স্থানগুলো 'গ্লেনারিজ', 'কেভেন্টার্স', 'ম্যাল' সেগুলোকে পুরোপুরি ব্যাবহার করেছি। বেড়াতে যাওয়ার ছবি বাঙালি দর্শক পছন্দ করে ঠিকই তবে এবার কিন্তু, সেই বিষয়টাকে লক্ষ্য করে 'ও মন ভ্রমণ' তৈরি করছি না। এই সিনেমার ইউএসপি-টা একদম আলাদা।
এই ছবির 'ইউএসপি' কী?
আসলে আমরা তো প্রত্যেকেই কম-বেশি বেড়াতে যাই। কিন্তু, কতজন মনের আগল ভেঙে ঘুরতে পারে? মনের ইচ্ছেটাকে খোলা আকাশের নীচে মেলে ধরতে পারে? আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি মনোভাব কাটাতে অনেক সময় বলি যে একটা চেঞ্জ দরকার। মনের এই বদলটাই ঘোরার মাধ্যমে কী ভাহে সম্ভব সেটাই ও মন ভ্রমণে তুলে ধরার প্রয়াস। তিন বান্ধবীর একটা জায়গায় ঘুরতে যাওয়া আর সেখানে গিয়ে যে জীবনটা আমূল বদলে যায় সেই প্রেক্ষাপটেই তৈরি এই গল্প। যা বাংলায় বেড়াতে যাওয়ার ছবি অনেক তৈরি হয়েছে কিন্তু, এই বিষয়টার উপর ছবি তৈরি হয়নি। এটাই এই ছবির 'ইউএসপি' ।
কোন বিশেষত্ব রয়েছে যার জন্য দর্শক হলে গিয়ে 'ও মন ভ্রমণ' দেখবে?
প্রথমবার বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির তিন সুপারস্টার স্বস্তিকা-শ্রাবন্তী-নুসরতকে এক সুতোয় বাঁধা এটা আমার কাছে চ্যালেঞ্জের মতো। এই তিনজনকে আগে কখনও একসঙ্গে এক ছবিতে দেখা যায়নি। তিনজনই অসম্ভব পপুলার। একছাদের তলায় ত্রয়ীর অভিনয় দেখতে বাংলা ছবির দর্শক নিশ্চয়ই হলমুখী হবে। আর দর্শককে হলমুখী করার এটা আমার প্রয়াস। ভারতে যখন নারীকেন্দ্রীক ছবি (ওম্যান এনপাওয়ারমেন্ট) মারাত্মক সমাদৃত, বক্স অফিসেও ভাল রেজাস্ট করে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বাংলাতেও এই কাজ করার চেষ্টা করেছি। তিনজন পাওয়ারফুল অভিনেত্রীকে এক ছবিতে কাস্ট করিয়ে দর্শককে হলমুখী করার প্রচেষ্টা।
কোন ধরনের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই সিনেমা তৈরির চিন্তাভাবনা?
'জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা' থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি। কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই এ মন ভ্রমণ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলা ছবি। এটা দেখে অনেকেরই 'থ্রি ইডিয়ডস'-র কথাও মনে পড়তে পারে। কেউ আবার 'দিল চাহতা হ্যায়'-র নস্ট্যালজিয়াতেও ডুব দিতে পারে। এই ছবি আবার 'অরণ্যের দিনরাত্রি'-র স্মৃতিকেও উসকে দিতে পারে। তিন-চারজন বন্ধুর ঘুরতে যাওয়ার গল্প বিভিন্ন আঙ্গিকে পরিবেশন করা হয়েছে।
তিন নায়িকার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কোনও 'ট্যানট্রাম' সামলাতে হয়েছে?
স্বস্তিকা-শ্রবন্তী-নুসরত, তিনজনই সুপারস্টার। ইন্ডাস্ট্রির নামজাদা অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে এই 'ট্যানট্রাম' শব্দটা খুব ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু, না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না এরা কতটা মাটির মানুষ (ডাউন টু আর্থ) আর প্রোডাকশন ফ্রেন্ডলি। কতটা প্রিপেয়ার্ড হয়ে সেটে আসেন সেটা যে কাজ করে সেই জানে। অহংবোধ, পার্সোনাল রিলেশনশিপ নষ্ট, পরস্পরের প্রতি ইগো এগুলো একবারও দেখেনি। বরং নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে একসঙ্গে বসে আলোচনা করা, সিন পড়া এগুলো করেছে। একটু চিল-আউট করা, যাতে অন স্ক্রিন বন্ডিংটা আরও ভালভাবে ফুটে ওঠে। এটা আমার কাছে পরম পাওয়া। নুসরতকে নিয়ে প্রথমবার কাজ করলাম। খুব ভাল অভিজ্ঞতা। অনেক সময় তো ওঁরাই আমাকে সামলেছে। আমাকে টেনশনে দেখলে বলেছে, সব হয়ে যাবে। কোনও চাপ নেই।
লুক প্রকাশ্যে আসার পর তো দর্শক বেশ উৎসাহী...
হ্যাঁ, এই ছবি দর্শক হলে কতটা উপভোগ করবে জানি না। তবে তিন অভিনেত্রীর যে লুক সেটা সত্যিই দারুণ। এই ছবি বাংলা ছবির ক্ষেত্রে অন্যতম সেরা লুকিং ফিল্ম হিসেবে থেকে যাবে। অসম্ভব সুন্দর ও পাওয়ারফুল পারফরম্যান্স এখনও পর্যন্ত। ডিসেম্বরে থাইল্যান্ড যাচ্ছি পরবর্তী ভাগের শ্যুটিং করতে। ২০২৫-এর গরমের ছুটিতেই ছবি মুক্তির চিন্তাভাবনা রয়েছে।
আগামীতেও মাল্টিস্টার কাস্ট ভিত্তিক ছবির ধারাবাহিকতাই বজায় রাখবেন?
আমি সবচেয়ে বেশি স্টার কাস্ট নিয়ে কাজ করেছি। আবার কাঞ্চনজঙ্ঘাতে ১৭ জন অভিনেতা-অভিনেত্রী ছিল। মায়াতে ১৯ জন আর সাদা রঙের পৃথিবীতে ২২ জন ছিলেন। এই ছবিতে তো সবচেয়ে কম স্টার কাস্ট, মাত্র ১০ জন। ও মন ভ্রমণে যাঁরা পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করছেন তাঁরাও অসম্ভব পাওয়ারফুল। জুন মালিয়া, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, পায়েল, সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (বাচিক শিল্পী) মতো আরও অনেকে কাজ করছেন। বলিউড অভিনেতা সাহিল ফুলের এটা প্রথম বাংলা ছবি। এই সিনেমায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকায় রয়েছেন অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কাউন্সিলরের মতো একটা পদে রয়েছেন। ব্যস্ত সময়ের মাঝেও যেভাবে পাঠ করেছেন তা অকল্পনীয়। সিনেমায় দেখলে ওঁর বাস্তবের লুকের সঙ্গে কোনও মিল পাওয়া যাবে না। অনন্যার চরিত্রটা শুরু থেকে নেগেটিভ মনে হলেও শেষে একটা দারুণ ট্যুইস্ট আছে।