ছবি: রেনবো জেলি
অভিনয়: মহাব্রত বসু, কৌশিক সেন, শ্রীলেখা মিত্র, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়
পরিচালনা: সৌকর্য ঘোষাল
রেটিং: ২/৫
আমাদের জিভ বাবাজির মুড সবসময় এক থাকে না। কখনও সে টকের স্বাদ চায় তো কখনও ঝাল, আবার কখনও মিষ্টি। আর জিভের স্বাদ পূরণ হওয়া মানেই তো মনের স্বাদও পূরণ হওয়া। মানেটা খুব সোজা, মন একবার গলাতে পারলেই কেল্লা ফতে! সেজন্যই ঘোতনের পরিপিসি গন্ডারিয়ার মন ভুলিয়ে সত্য সামনে আনতে একেকরকমের স্বাদের রান্না করত। রামধনুর সাত রঙের সাত রকম স্বাদ কড়াইয়ে ছড়িয়ে দিত। আঠারো বছর বয়স হলেই সব রাজ্যপাট সামলাবে ঘোতন। একথা ছোটবেলা থেকে শিখিয়ে এসেছে তার মামা। সত্যি সত্যিই কি রাজ্যপাট পাবে সে? নাকি তার দুষ্টু মামা গন্ডারিয়ার ছলচাতুরি জিতবে? মামার মন ভোলানো কথার ঘোর থেকে ঘোতনকে বের করতেই যেন আবির্ভাব পরিপিসির।
বাপ-মা মরা একরত্তি ছেলেটা পাড়া-পড়শির চোখে অপয়া। মামার কাছ মানুষ, কিন্তু আবদার তো দূর অস্ত, কথায় কথায় মেলে চড়-থাপ্পড়। মামা তো নয়, যেন সেলফিশ জায়েন্ট! সকালে চা করা থেকে দুপুর-রাতে মামার খ্যাটনের জোগান, সবই একা হাতে সামলাতে হয় ছোট্ট ঘোতনকে। এদিকে পান থেকে চুন খসেছে কী মামার চোখরাঙানি। কিন্তু ঘোতন সব সহ্য় করে। কারণ সে জানে আঠারো বছর বয়স হলেই সে রাজা হবে, যখের ধন পাবে। কিন্তু আদপে এই যখের ধন কী? রাজ্যপাটই বা কী? তা ছবি শুরুর কিছুটা পর থেকেই আন্দাজ পাবেন দর্শকরা।
আরও পড়ুন, সিনেমা রিভিউ: কতখানি চাহিদা পূরণ করল ‘পরমাণু’?
ফ্যান্টাসি রয়েছে ছবিতে, তার আঁচ পাওয়া গিয়েছে ছবির পোস্টারেই। ভেবেছিলাম, বহুদিন বাদে রূপকথার গল্প চোখের সামনে দেখব, তাও আবার বাংলায়! ভাবা যায়? কিন্তু রূপকথার গল্প যেন বাস্তব হতে চাওয়ার মরিয়া প্রচেষ্টায় খেই হারিয়ে ফেলল। ঘোতনের ফ্যান্টাসির দুনিয়ায় পরিপিসিকে কেন কাঠখড় পুড়িযে রান্না করতে হল, বোঝা গেল না। তিনি তো ম্যাজিক করে অনায়াসেই একেকটা রান্না করতে পারতেন। বাস্তব আর রূপকথা মেলাতে গিয়েই সমস্যায় পড়েছেন পরিচালক সৌকর্য ঘোষাল। ছবির শেষে দর্শকদের রূঢ় বাস্তবের মুখোমুখি করতে গিয়ে ছবির গল্পে রূপকথা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। আর এখানেই তাল কেটেছে। ছবির গল্প যেভাবে শ্লথ গতিতে এগিয়েছে, তাতে ফ্যান্টাসির মজা উধাও হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন, কবীর রিভিউ: দুরন্ত এক্সপ্রেসের মুম্বই-হাওড়া ট্রেনসফরে জোরালো চিত্রনাট্য
এ ছবির প্রাপ্তি হল ঘোতনের গল্প, একজন স্পেশাল চাইল্ডের গল্প। এধরনের শিশুদের নিয়ে বড়পর্দায়, বিশেষত বাংলা ছবিতে, খুব একটা কাজ আগে চোখে পড়েনি। সেদিক থেকে সাধুবাদ প্রাপ্য পরিচালকের। ঘোতনের চরিত্রে মহাব্রত বসু বেশ ভাল। ঘোতনের মামা গন্ডারিয়ার চরিত্রে কৌশিক সেন অনবদ্য। পরিপিসির চরিত্রে শ্রীলেখা মিত্রের তেমন কিছু করার ছিল না। তাঁর মতো অভিনেত্রীর কাছে এ ধরনের চরিত্র জলভাতের মতোই। চায়ের দোকানের মালিকের চরিত্রে শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় যথাযথ। ছবির সিনেম্যাটোগ্রাফি আলাদা করে নজর কাড়বে। তবে ছবির গানের কথা মন্দ না হলেও, গান তেমন জমাটি হল কই?
পরিশেষে, বাড়ির ভিত ভাল না হলে যেমন দামি ফার্নিচার থাকলেও ঘরের জৌলুস ফিকে হয়ে যায়, তেমনই ছবির চিত্রনাট্য এবড়োখেবড়ো হলে, বাকি সব নড়বড়েই লাগে।