অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন এবং রাজেশ খান্না নাকি ১৯৭০ এর দশকে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন? রাজেশ ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৭০ এর দশকের গোড়ার দিকে তার সুপারস্টারডম দিয়ে হিন্দি সিনেমা জগতে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। তবে ১৯৭৩ সালে 'জঞ্জির' মুক্তি পাওয়ার পরপরই জোয়ার অমিতাভ বচ্চনের পক্ষে ঘুরতে শুরু করে। যদিও রাজেশ ১৯৭০-এর দশক জুড়ে হিট ছবিতে অভিনয় অব্যাহত রেখেছিলেন। তবে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠছিল যে অমিতাভ তখন বিরাট বড় তারকা।
১৯৭১ সালের 'আনন্দ'-এর পর থেকে দু'জনকে একসঙ্গে আর পর্দায় দেখা যায়নি। তাই পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় যখন নমক হারাম ছবিতে দুই তারকাকে একসঙ্গে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন সেটা স্ক্রিন লড়াইয়ে পরিণত হয়। রাজেশ বিশ্বাস করেছিলেন যে অমিতাভ তার বিরুদ্ধে পরিচালকের কানে বিষ ঢেলেছেন। পরিচালককে সিনেমার ক্লাইম্যাক্স পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছিলেন। চেয়েছিলেন, যাতে ক্লাইম্যাক্স পুরোটাই তাঁর পক্ষে যায়।
রাজেশের চরিত্রটিকে, আনন্দ সিনেমার শেষে মরে যেতে দেখা যায়। যা নিশ্চিত করেছিল যে দৃশ্যটি দর্শকদের উপর ছাপ ফেলে। তাই হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের অন্য পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও রাজেশ জোর দিয়ে বলেছিলেন যে তাঁর চরিত্রটির মারা যাওয়া উচিত। ইয়াসির উসমানের বই 'রাজেশ খান্না: দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব ইন্ডিয়া'স ফার্স্ট সুপারস্টার'-এ গুলজার বলেছিলেন, "নমক হারাম'-এ আমাদের শেষটা বদলাতে হয়েছিল, কারণ হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় রাজেশ খান্নাকে মৃত্যুর দৃশ্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।"
Bollywood: ফের সুশান্তের মতো অবস্থা হতে চলেছে আরেক অভিনেতার? আগেভাগেই ইন্ডাস্ট্রির মুখোশ খুললেন জনপ্রিয় গায়ক..
অমিতাভের এই চুক্তি সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না, এবং শুটিংয়ের দিনই এটি সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন। গুলজার আরও বলেছিলেন, "হিন্দি ছবিতে যিনি মারা যান তাঁকে নায়ক হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তাই দুজনেই নায়ক হতে আগ্রহী ছিলেন। শুটিংয়ের দিনই অমিতাভ অবশেষে সত্যিটা জানতে পারেন। তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েছিলেন। তিনি এতটাই আঘাত পেয়েছিলেন যে বেশ কয়েকদিন আমার সাথে কথা বলেননি। তিনি অনুভব করেছিলেন যে আমি তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি।"
রাজেশ খান্নার সেক্রেটারি তথা ২০ বছরের অ্যাসোসিয়েট প্রশান্ত রায় বইয়ে লিখেছেন, "সেই সময় অমিতাভ বচ্চনের ওপর খুব রেগে থাকতেন কাকাজি। ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বলতেন, হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় তাঁর প্রিয় পরিচালক, কিন্তু অমিতাভ কান খাড়া করে রাখতেন। কাকাজি বলতেন, নমক হারামের পুরো শুটিংয়ের সময় অমিতাভ তাঁর সঙ্গে নোংরা রাজনীতি করেছেন। কাকাজীর সঙ্গে ২০ বছর কাজ করার সময় অমিতাভকে কখনও আশীর্বাদে আসতে দেখিনি। আগে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় প্রায়ই আসতেন, কিন্তু নমক হারামের পর তাঁর আসাও বন্ধ হয়ে যায়।" রাজেশ ও অমিতাভ এরপর আর কখনও স্ক্রিন শেয়ার করেননি। ২০১২ সালে ৬৯ বছর বয়সে মারা যান রাজেশ।