Bengali Television, Rana Sarkar, Artists Forum: পয়লা মে-র এমার্জেন্সি বৈঠকের প্রায় ৪০ দিন পরে অবশেষে কিঞ্চিৎ স্বস্তিতে টেলিপাড়ার প্রায় ১৭১ জন শিল্পী। মার্চ মাস থেকেই দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার থেকে প্রাপ্য তাঁদের বকেয়া পারিশ্রমিকের টাকা নিয়ে সরব হয়েছিলেন তাঁরা। অনির্দিষ্টকাল সেই পেমেন্ট ফেলে রাখার অভিযোগ জানিয়েছিলেন আর্টিস্টস ফোরামের কাছে। বিগত প্রায় দু'মাস বিষয়টি নিয়ে লড়াই করার পরে, শেষ পর্যন্ত এনওসি দিলেন রানা সরকার।
১০ জুন সন্ধ্য়াবেলা আর্টিস্টস ফোরাম ও সংশ্লিষ্ট তিনটি চ্যানেলকে শিল্পীদের পেমেন্ট সংক্রান্ত এনওসি পাঠিয়েছেন রানা সরকার, এমনটাই জানিয়েছে ফোরাম একটি প্রেস বিবৃতিতে। কিন্তু রানা সরকার এনওসি দিয়েছেন শুধুই শিল্পীদের জন্য। তাই দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া-র কাছে যে সমস্ত টেকনিসিয়ানের টাকা বকেয়া রয়েছে, তাঁদের পেমেন্টের কী হবে সেই নিয়ে এখনও সংশয় রয়েই যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাড়ছে পাওনাদারদের তালিকা, কোটি টাকার খুচরো পাওনা! ‘খুশি’ রানা সরকার
সেই প্রসঙ্গটিও ফোরাম তাদের প্রেস বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে। সেখানে লেখা হয়েছে যে, 'বহু কলাকুশলী বন্ধুর বকেয়া পারিশ্রমিক এখনও দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে আছে। আর্টিস্টস ফোরাম আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট গিল্ড, ফেডারেশন, দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া ও সংশ্লিষ্ট চ্য়ানেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছে যে অনতিবিলম্বে কলাকুশলীদের বকেয়া টাকা মেটানোর ব্যবস্থা করা হোক। আমরা এই বিষয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতেও প্রস্তুত।'
এর আগে শোনা গিয়েছিল যে ফোরাম সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে টেকনিসিয়ানরা পেমেন্ট না পেলে, শিল্পীরাও পেমেন্ট নেবেন না। ফোরামের বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে পাওয়া এই সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-তে। গোটা টেলিজগতই ফোরামের সেই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানায়। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সম্ভবত সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য় হল ফোরাম ১৭১ জন শিল্পীদের কথা ভেবে, যার মধ্য়ে অনেকেই রয়েছেন গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটে।
আরও পড়ুন: Bengali Television Industry Payment Issues: টেলিজগতের আর্থিক দুর্নীতি! ট্যাক্স কারচুপির অভিযোগ
টেলিপাড়ার বিশ্বস্ত সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, রানা সরকার শুধুমাত্র শিল্পীদের পেমেন্ট সংক্রান্ত এনওসি দিয়েছেন কারণ টেকনিসিয়ানদের প্রাপ্য টাকার বিশদ তালিকা তাঁর হাতে এখনও পৌঁছয়নি। অথচ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস এর আগে জানিয়েছিলেন যে ওই তালিকা ইতিমধ্য়েই রানা সরকারকে পাঠানো হয়েছে কিন্তু রানা সরকার ইচ্ছে করে এনওসি দিতে দেরি করছেন।
অর্থাৎ রানা সরকার ও দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার বকেয়া পেমেন্ট সংক্রান্ত জট এখনও পুরোপুরি কাটেনি। সম্ভবত এই জট ২৩ জুনের আগে কাটবেও না। কারণ ওইদিন ফেডারেশন একটি একস্ট্রাঅর্ডিনারি জেনারেল মিটিং ডেকেছে যেখানে অংশ নেওয়ার কথা ৮০০০ টেকনিসিয়ানদের। শুধু রানা সরকার নন, অন্য়ান্য় প্রযোজকরাও নানা ভাবে টাকা বাকি রাখছেন সাম্প্রতিককালে। সেই সব ইস্যু নিয়েই আলোচনা হবে ওই মিটিংয়ে এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বরূপ বিশ্বাস।
কিন্তু এক্ষেত্রে আরও একটি প্রশ্ন উঠছে। যদি রানা সরকারের এনওসির উপর ভিত্তি করেই শিল্পীদের বকেয়া টাকা পুনরুদ্ধার সম্ভব ছিল তবে অদিতি রায় ও অরিন্দম পাল-এর এক্ষেত্রে ভূমিকা ঠিক কী? টেলিপাড়ার বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, যে সময় রানা সরকার ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন, মূলত এপ্রিল-মে মাসে, সেই সময় অদিতি রায় ও অরিন্দম পালের দ্বারস্থ হন ফোরামের প্রতিনিধিরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, যেহেতু এখনও মিনিস্ট্রি অফ করপোরেট অ্য়াফেয়ার্স-এর তথ্য অনুযায়ী এখনও ওঁরা দুজনই দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার বোর্ড অফ ডিরেক্টর পদে রয়েছেন, তাই তাঁদের এনওসি-র উপর ভিত্তি করেই চ্য়ানেল বকেয়া পেমেন্ট মিটিয়ে দিতে পারে।
কিন্তু অদিতি রায় ও অরিন্দম পাল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে গত ২৫ মে জানিয়েছিলেন যে তাঁরা দুজনেই মার্চ মাসে পদত্য়াগ করেন এবং তার পর দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার কোম্পানি সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে তাঁরা কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেন না। সেই তথ্যকে চ্য়ালেঞ্জ জানায় ফোরাম। কারণ ফোরামের কাছে এমন একটি নথি রয়েছে, যেখানে দেখা গিয়েছে যে ২৪ এপ্রিল ওই কোম্পানির আর একজন প্রাক্তন ডিরেক্টর, চৈতালি বক্সি ইস্তফা দেন এবং ওই ইস্তফা গ্রহণ করেন অদিতি রায় ও অরিন্দম পাল। উপরের ছবিটিতে পদত্য়াগপত্রের উপর অরিন্দম পালের সইটি লক্ষ্যণীয়।
আরও পড়ুন: লক্ষ লক্ষ টাকা বকেয়া টেকনিসিয়ানদের, কবে পাবেন তাঁরা
মার্চ মাসে যদি কেউ পদত্য়াগ করে থাকেন তবে কী করে তিনি ২৪ এপ্রিল অন্য় আর একজন ডিরেক্টরের ইস্তফা গ্রহণ করেন, সেই প্রশ্ন আগেই তুলেছিল ফোরাম। ফোরামের বক্তব্য ছিল, কোনও মৌখিক কথায় নয়, মিনিস্ট্রি অফ করপোরেট অ্য়াফেয়ার্স সূত্রে পাওয়া তথ্য়ের ভিত্তিতেই অদিতি রায় ও অরিন্দম পালকে এনওসি দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিল।
গত ২৫ মে আর্টিস্টস ফোরামের সাংবাদিক বৈঠকের পরেই ফোরামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন রানা সরকার। তিনি মেল মারফত জানান যে এনওসি দিয়ে দেবেন এবং বহু টালবাহানার পরে, বেশ কিছু ডেডলাইন মিস করার পরে শেষ পর্যন্ত ১০ জুন সন্ধ্য়াবেলা তিনি এনওসি দিয়েছেন আর্টিস্টস ফোরামকে। তাই এখন আর অরিন্দম পাল বা অদিতি রায়ের এনওসির প্রয়োজন পড়ছে না।
কিন্তু মিনিস্ট্রি অফ করপোরেট অ্য়াফেয়ার্স-এর তথ্য় অনুযায়ী, রানা সরকার দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার অংশীদার কিন্তু বোর্ড অফ ডিরেক্টরস-এর অন্তর্ভুক্ত নন। তবে তাঁর এনওসি ঠিক কোন যুক্তিতে মেনে নেবে সংশ্লিষ্ট চ্য়ানেল কর্তৃপক্ষ? এই বিষয়ে ফোরামের বক্তব্য়, যেহেতু ওই তিনটি চ্য়ানেলের সংশ্লিষ্ট পাঁচটি ধারাবাহিকের কনট্রাক্টটি সরাসরি রানা সরকারের সইয়ের ভিত্তিতেই হয়েছিল তাই এক্ষেত্রে রানা সরকারের এনওসি-র উপর ভিত্তি করেই সংশ্লিষ্ট চ্য়ানেলগুলি শিল্পীদের পেমেন্টটি দিতে রাজি হয়েছে।
ওদিকে ফোরামের প্রেস বিবৃতিটি রিলিজ হওয়ার পরেই সোশাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দিয়েছেন অদিতি রায়। সেখানে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যে কেন তাঁকে এনওসি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সেই প্রশ্নের উত্তর ইতিমধ্যেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে দিয়েছে ফোরাম। তবে অদিতি তাঁর পোস্টে লিখেছেন যে তাঁরও অনেক টাকা পাওনা রানা সরকারের থেকে। এবং তাঁর মতো আরও অনেকেই রয়েছেন যাঁদের পেমেন্ট সংক্রান্ত জটিলতা এখনও মেটেনি। তাই সোশাল মিডিয়ায় অদিতি লিখেছেন, ''কারও ক্ষতি চাই না। ঈশ্বর সবার মঙ্গল করুন।''