Zee5 Krishanu Krishanu review: দীর্ঘ কয়েক মাসের প্রতীক্ষার অবসান। জিফাইভ-এ ২৯ অগাস্ট থেকে শুরু হয়েছে 'কৃশানু কৃশানু' ওয়েবসিরিজের স্ট্রিমিং। ভারতের মারাদোনা, কৃশানু দে-কে নিয়ে নির্মিত এই সিরিজ এ পর্যন্ত বাংলা ওয়েবের অন্যতম সেরা কাজ। থ্রিলার ও শরীরী সুড়সুড়ি যখন বাংলা ওয়েবকে প্রায় গ্রাস করে নিয়েছে বলা যায়, তখন ঠিক এমনই একটি সিরিজের প্রয়োজন ছিল। 'সুফিয়ানা'-র পরে আর একটি চোখ জুড়োনো সিরিজ পেলেন ওয়েব দর্শক।
মেকিংয়ের মুন্সিয়ানা, ট্রিটমেন্ট ও সিনেম্যাটিক ল্যাঙ্গোয়েজে এই সিরিজ ছাপিয়ে গিয়েছে সমসাময়িক বাকি ওয়েবসিরিজগুলিকে। একই সঙ্গে প্রশংসনীয় সিরিজের স্টোরিটেলিং। এই গল্পটা শুধুই ভারতের মারাদোনা, কৃশানু দে-র নয়, এই গল্পটা আসলে বাংলা ও বাঙালির ফুটবলের। তাই কৃশানু দে-র গল্পকে ফিরে দেখেছেন চিত্রনাট্যকারেরা এই সময়ের আলোতে।
আরও পড়ুন: আসছে ‘কৃশানু কৃশানু’, দর্শক যে ৫টি বিষয় দেখতে পাবেন এই সিরিজে
সিরিজটি দেখতে বসে মনে পড়ে যেতেই পারে 'রং দে বাসন্তী'-র কথা। 'কৃশানু কৃশানু'-র সমান্তরাল কাহিনিবিন্যাসের ধাঁচটি অনেকটা সেই কাল্ট বলিউড ছবিকে মনে করাবে। তবে অতীতের পুনর্নির্মাণের তুলনায় দর্শককে টেনে রাখবে বর্তমানের গল্প-- এই সময়ের এক লেফটফুটারের জীবনসংগ্রাম। এই সিরিজের একটা বড় ইউএসপি কাস্টিং। প্রধান চরিত্রে অনুরাগ উরহাম অত্যন্ত ভালো কিন্তু বাদশা মৈত্র, দেবেশ রায়চৌধুরীর মতো অভিনেতাদের অনবদ্য অভিনয়-সঙ্গত ছাড়া এই সিরিজ উপভোগ্য হতো না।
পার্শ্বচরিত্রে বহু নতুন অভিনেতারা কাজ করেছেন, যাঁদের মধ্যে অনেকেই এসেছেন থিয়েটারের মঞ্চ থেকে। বাংলা থিয়েটার যে আজও ভাল অভিনেতা-অভিনেত্রী তৈরির কারখানা, তা আরও একবার প্রমাণিত। আবার বাংলা টেলিভিশনের বহু পরিচিত অভিনেতা-অভিনেত্রীকেও দেখতে পাবেন দর্শক। দর্শকের জেনে ভালো লাগবে, কৃশানু দে-র ছেলে সোহম দে-কেও তাঁর নিজের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে এই সিরিজে। এই গল্প যতটা কৃশানু দে এবং কলকাতা ময়দানের, ততটাই কৃশানু দে-র প্রেম ও পরিবারের।
কৃশানু দে-কে নিয়ে একটি ডকুফিচার বানাতে বিদেশ থেকে আসে এক মহিলা পরিচালক। দেখা করে কৃশানু দে-র পরিবারের সঙ্গে, পাশাপাশি বেশ নাটকীয় কিছু মুহূর্তে আলাপ হয় সাম্প্রতিক সময়ের এক ক্রীড়াসাংবাদিকের সঙ্গে, যে মনে করে তথ্যপঞ্জী দিয়ে কৃশানু দে-কে বোঝা সম্ভব নয় কারণ কৃশানু দে আসলে একটা আবেগ। ঠিক সেই কারণেই সিরিজের নামকরণটি এমন-- যেভাবে এই নামটি প্রতিধ্বনিত হতো ময়দানের গ্যালারিতে।
আরও পড়ুন: অগাস্ট মাসে মিস করবেন না এই ৫টি ওয়েব সিরিজ
সিরিজটি পরিচালনা করেছেন কোরক মুর্মু, যিনি বাংলা ওয়েবের সবচেয়ে প্রতিভাবান পরিচালক হিসেবে ইতিমধ্যেই স্বীকৃত। কোরকের আগের তিনটি কাজের নাম করলেই বুঝবেন দর্শক-- 'ক্ষ্যাপা' সিজন ১ এবং ২, 'সুফিয়ানা' সিজন ১ এবং 'কালী' সিজন ১। কোরকের পরিচালনার পরিপূরক মৃন্ময় মণ্ডলের চিত্রগ্রহণ ও শৌভিক দাশগুপ্ত-সারণ দত্তের সৃজনশীল প্রযোজনা। শৌভিক দাশগুপ্ত, অভ্র চক্রবর্তী ও কল্লোল লাহিড়ি চিত্রনাট্যে ভারি সুন্দর করে বুনেছেন অতীত ও বর্তমানের আসা-যাওয়া। একই সঙ্গে প্রশংসনীয় এই সিরিজের সঙ্গীত পরিচালনা এবং আবহ। গৌরব চট্টোপাধ্যায় বা গাবু সিরিজের নাটকীয় মুহূর্তগুলিকে আরও মনোজ্ঞ করে তুলেছেন। আনন্দ আঢ্যের শিল্প নির্দেশনা ও প্রোডাকশন ডিজাইনও বেশ ভাল।
ময়দানের দলবদল, সমসাময়িক রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল থেকে ক্রীড়া সাংবাদিকতার প্যারাডাইম শিফট-- সবকিছুকেই প্রাসঙ্গিক ভাবে ছুঁয়ে গিয়েছে এই সিরিজ। বরং বলা যায় সাম্প্রতিক সময়ের বিনোদন-মিশ্রিত ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে এক রকম সমালোচনাই করা হয়েছে। একটি নামকরা ক্রীড়া পত্রিকার এডিটর যখন তার টিমের অন্যতম সেরা সাংবাদিককে বলে, অমুককে নিয়ে খারাপ কথা বললে আমরা আর স্কুপ পাবো না, অথবা খেলোয়াড়দের বান্ধবী-স্ত্রীদের নিয়ে একটি ফিচার লেখো, তখন বুদ্ধিমান দর্শক এবং ক্রীড়া প্রতিবেদনের নিয়মিত পাঠক অনেক কিছুই বুঝে ফেলেন, চুপচাপ।
কিন্তু বাস্তব যেমন কড়া, তেমনই আবার মিঠেও। মৃত্যু ও প্রেম একই সঙ্গে নিঃশ্বাস নেয় প্রত্যেকটা মুহূর্তে। তাই ফুটবল ও কৃশানু দে-র মধ্যে যত জাগতিক কোলাহলই এসে পড়ুক না কেন, সময়কে ছাপিয়ে যায় কলকাতার রাস্তায়, যানজট, উদ্বেগ আর তীব্র বাঁচার লড়াইয়ের মাঝে একটা দুরন্ত সাইড ভলি!