Shontaan Review: ছেলেমেয়েদের প্রতি অন্ধ ভালবাসা ভয়ংকর! রাজের 'সন্তান' পারফেক্ট উদাহরণ

Raj Chakrabarty Shontaan: সন্তানকে কী ভাবে মানুষ করবেন? তাঁদেরকে অন্ধ ভালবাসা দিলে কী হয়? বিগরে যাওয়া সন্তানকে সঠিক পথে আনতে প্রয়োজনে কতটা কঠিন হতে হয় সবটাই রয়েছে রাজের 'সন্তান'-এ।

Raj Chakrabarty Shontaan: সন্তানকে কী ভাবে মানুষ করবেন? তাঁদেরকে অন্ধ ভালবাসা দিলে কী হয়? বিগরে যাওয়া সন্তানকে সঠিক পথে আনতে প্রয়োজনে কতটা কঠিন হতে হয় সবটাই রয়েছে রাজের 'সন্তান'-এ।

author-image
Kasturi Kundu
New Update
ছেলেমেয়েদের সঠিক পথে আনতে হাল ধরতে হয় মা-বাবাকেই

ছেলেমেয়েদের সঠিক পথে আনতে হাল ধরতে হয় মা-বাবাকেই

Raj Shontaan Movie: মধ্যবিত্ত পরিবার হোক বা উচ্চবিত্ত, বাবা-মা তাঁর শেষ সঞ্চয়টুকু সন্তানের নামে উৎসর্গ করে দেয়। কিন্তু, পরিবর্তে সন্তান কী করে? বয়স্ক মা-বাবাকে সংসারের বোঝা ভেবে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয় বা কখনও একটা স্যাঁতসেঁতে ঘরের কোণে তাঁদের কোনওক্রমে দিন গুজরানের ব্যবস্থা করে দায়মুক্ত হয়ে যায়। যাদের আবার সামান্য বিবেকবোধ উঁকি দেয় তাঁরা মা-বাবাকে একটা ন্যুনতম মাসোহারা দিয়ে নমঃ নমঃ করে দায়িত্বটুকু সেরে ফেলে। বাস্তবের এই চিত্রটাকে রাজ চক্রবর্তী সত্যিই তাঁর নিজস্ব ভাবনায় এত সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন...! 'সন্তান' দেখলে মনেই হবে না প্রথমবার ফ্যামিলি ড্রামায় হাতেখড়ি রাজের। 

Advertisment

বাস্তব নিয়ে ছবি তৈরি করতে রাজ চক্রবর্তী যে সিদ্ধহস্ত 'চিরদিনই তুমি যে আমার'-এর পর 'সন্তান' আদর্শ উদাহরণ। তাঁর মতো একজন দক্ষ পরিচালকই বাঙালির আবেগের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারেন। বিজয়া দশমীর সিঁদুরখেলায় শুধু এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের নাচ-সেলফি ম্যানিয়াকে প্রাধান্য না দিয়ে বৃদ্ধ দম্পতির নির্ভেজাল ভালবাসাকে নিখুঁতভাবে পরিবেশন করেছেন। আজকের জমানায় যখন লিপলক, শয্যাদৃশ্যের বাড়বাড়ন্ত তখন অর্ধাঙ্গিনীর গালটা মিষ্টি করে টিপেও যে ভালবাসার ইস্তেহার করা যায় সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন রাজ চক্রবর্তী। 

মা-বাবার প্রতি সন্তানের অন্যায়কেই কিন্তু, প্রশ্রয় দেননি পরিচালক। বরং যত বড় অন্যায় তত জোরে 'সরি' বলতে হয় সেই শিক্ষকের  ভূমিকায় মিঠুন চক্রবর্তী অতুলনীয়। ফ্যামিলি ড্রামায় মারকাটারি অ্যাকশন দৃশ্য না থাকলেও দু-একটি দৃশ্যে মিঠুনের কয়েক ঘা-তেই বাজিমাৎ। বুড়ো হাড়ের জোর কিন্তু, ডিস্কো ডান্সার মিঠুনের নস্ট্যালজিয়ায় নিঃসন্দেহে ভাসবে দর্শক। প্রথমবার মিঠুনের সঙ্গে অনসূয়া মজুমদার জুটি সন্তানের ইউএসপি বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না। 

মিঠুন-অনুসূয়ার ছেলের ভূমিকায় ঋত্বিক চক্রবর্তী রাজের পারফেক্ট চয়েজ।  'মা কা লাডলা বিগর গ্যায়া', এই চরিত্রটা ঋত্বিকের থেকে ভাল কেউ করতেই পারে না। ঠিক তেমনই দায়িত্বকর্তব্যহীন ছেলেকে সঠিক পথে আনতে মিঠুনের লড়াইয়ের যোগ্য পার্টনার আইনজীবী ইন্দিরা। যে চরিত্রে শুভশ্রী সত্যিই ফাটাফাটি। সন্তানকে অন্ধ ভালবাসা না দিয়ে একটু মেপে ভালবাসা উচিত, ঋত্বিককে সঠিক পথে আনতে মিঠুন-শুভশ্রীর এই লড়াইয়ের সঙ্গী হন অনসূয়াও।

Advertisment

সিনেমার এই পার্টটা আরও একবার বুঝিয়ে দিল সম্পর্কের ভাঙা কাচ সত্যিই কোনওদিন জোড়া লাগে না। সময় চলে গেল তখন আর আপশোস করে কোনও লাভ হয় না। ঋত্বিকের সুমতি ফিরল ঠিকই, কিন্তু ততক্ষণে চিতার আগুনে পুড়ে ছাই মায়ের (অনসূয়া) মৃতদেহ। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাওয়া ছেলেটা বাবার হাত শক্ত করে ধরল ঠিকই, কিন্তু সেই সুখের স্বাদ থেকে বঞ্চিত থাকল মা। রোম্যান্টিক, কমেডি, অ্যাকশন, হরর মুভি প্রেমীরাও এই দৃশ্য থেকে চোখের জল ধরে রাখতে পারবে না। 

অভিনয়ের সঙ্গে জোড়াল সংলাপের সংমিশ্রণ সন্তান ছবিটার অন্যতম আকর্ষণ। মা-বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্যের যে পাঠ রাজ চক্রবর্তী পড়ালেন তাতে আপনি একজন দর্শক হিসেবে কত নম্বর দেবেন জানি না। তবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অনলাইনকে যে বিশ্বাসের সঙ্গে রাজ বলেছিলেন তাঁর সিনেমা ১০-এ ১০ পাবে সেটার সঙ্গে আমি কিন্তু, সহমত। 

কোর্ট কেসে জিতলে বিপক্ষের আইনজীবীকে (খরাজ) কচি পাঠার রেঁধে খাওয়ানোর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ইন্দিরা। পর্দায় তো কেস জিতেছেন, বাস্তবেও সন্তান 'সাকসেস'। অনুরাগীরা কিন্তু, শুভশ্রীর হাতের রান্না খাওয়ার বায়না করতেই পারে। সবশেষে একটা কথা না বললেই নয়, নবাগতাদের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে আরও একবার সঠিক প্রমাণ করলেন রাজ। টেলিভিশনের খলনায়িকা মিশকা (অহনা দত্ত) ঋত্বিকের স্ত্রীর চরিত্রে নিঃসন্দেহে দশ গোল দিয়েছেন।

 

ছবির নাম: সন্তান

পরিচালক: রাজ চক্রবর্তী

অভিনয়: মিঠুন চক্রবর্তী, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, অনসূয়া মজুমদার, অহনা দত্ত ও অন্যান্য

রেটিং: ৪.৫/৫

Bengali Film Industry Bengali Cinema Bengali Film Bangla Movie Review Raj Chakrabarty