রুদ্রনীল ঘোষ বড্ড ঠোঁটকাটা। এ পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে তার অগাধ জ্ঞান। শুধু তাই নয় তিনি এই পশ্চিমবঙ্গের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কী হচ্ছে সে সম্পর্কেও জানেন। শুধু রাজনৈতিক মতামত নয় টলিউডের অন্দরেও তিনি বহুদিনের মানুষ। টালিপাড়ার বড় বড় পরিচালক থেকে প্রযোজক, তাদের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল তার। কিন্তু তারপরে রাজনৈতিক মতামতটা অন্য হতেই, সবাই যেন অভিনেতাকে নিয়েই তেড়েফুঁড়ে নানা মন্তব্য করতে শুরু করলেন।
অভিনেতার কাছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা প্রশ্ন রেখেছিল, গিল্ড এবং পরিচালকের বিরোধের কারণে হওয়া অশান্তি নিয়ে। দিন আনি দিন খাই টেকনিশিয়ানরা, এই দ্বন্দ্বের কারণে কাজ হারাচ্ছেন। নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ফেডারেশনের কারণে। রুদ্রনীল এই প্রসঙ্গে কি বলছেন?
ফেডারেশন বনাম পরিচালকের লড়াইয়ে টেকনিশিয়ান:
টলিউড ইন্ডাস্ট্রি বুকে, পরিচালকদের সঙ্গে টেকনিশিয়ানদের কোনো রকম কোনো অশান্তি নেই। এটা ঘটানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে ওদের কার্ড কেড়ে নেওয়া হবে। ভারতবর্ষের কোন আইনে এরকম বলা নেই যে আপনার কাছে কার্ড আছে মানে আপনি কাজ করার যোগ্য। আমাদের দেশে কম্পিটিশন কমিশন আছে। ফেডারেশন দাদাগিরি করবে কেন? যে আমাকে এতগুলো লোক নিতেই হবে? সারা ভারতবর্ষের আইন বিরুদ্ধে কাজ এটা। তাহলে শিল্পীরাও তো বলতে পারে আর্টিস্ট ফোরাম। এতগুলো শিল্পী নিয়ে কাজ করতে হবে বলতেই পারে। আমার দেশের নিয়ম যিনি ইনভেস্ট করছেন, তিনি ঠিক করবেন। প্রযোজক জানেন, তার কটা লোক নিয়ে কাজ করতে হবে এবং তিনি পরিচালকের সঙ্গে একমাত্র যোগাযোগ করতে পারেন এই বিষয়ে। কোন টেকনিশিয়ান, কোনও আর্টিস্ট চায়না একদিনের জন্য শুটিং বন্ধ হোক। এবং এই দ্বন্দ্ব করাচ্ছে কারা? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণা থাকা কিছু আহম্মক। যাদের, এই টলিউড ইন্ডাস্ট্রির প্রতি কোনরকম ভালোবাসা কোনদিন ছিল না, তারা শিল্প ভালোবাসেনা। কোটি কোটি টাকা তাদের। তাঁরা না ছবি আঁকতে পারেন, না গান গাইতে পারেন। একটাই পারত, টাকা তুলতে।
'আরোপিত দেশপ্রেম আমার মধ্যে নেই', ভারতের কূটনীতি প্রসঙ্গে বাম মনষ্ক শ্রী…
টলিউডে তাঁকে বয়কট প্রসঙ্গ:
যে যে তৃণমূল করেন তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে পকেটে কার্ড গুঁজে দিয়েছেন। আপনি পয়সা খেলেন, এই পয়সা প্রডিউসারকে দিতে হবে? পুরোটাই উল্টো নিয়মে চলছে ইন্ডাস্ট্রিতে। এই পশ্চিমবঙ্গের বুকে যত অফিস চলছে, এই সর্বত্র শাসক দল নিজেদের ইচ্ছামতো নিয়ম বানিয়ে রেখে দিয়েছি। আর পুলিশ অশোক স্তম্ভ লাগিয়ে অশোক স্তম্ভের অপমান করে। টলিউড ইন্ডাস্ট্রিকে এক রকম ভাবে দেখবেন না। এখানে দালাল যারা তারাই একমাত্র কাজের সুযোগ পাবে। তাই আপনি ভাল মানুষ হলেও, যদি দালালি না করতে পারেন তাহলে সুযোগ নেই। এই অবস্থা শুধু ইন্ডাস্ট্রিতে নয় পশ্চিমবঙ্গের যে কোন জায়গায়। খুব সিম্পল একটা ঘটনা বলি, বলে দেওয়া হয়েছিল যে সমস্ত শিল্পীরা এদিক ওদিক প্রতিবাদী মিছিলে যাচ্ছে, তাঁদের শো দেওয়া হবে না। গানের প্রোগ্রাম বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে যখন আমি এই কথা বলেছিলাম, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় এই লুটেরাগুলো, তারা আমার বিরুদ্ধে আমার টেকনিশিয়ান বন্ধুদের, যাদের সঙ্গে আমি চা বিড়ি একসঙ্গে খেতাম এখনো খাই, তাদের বুকে কালো ব্যাশ লাগিয়ে আমাকে টলিউড থেকে বয়কট করার জন্য মিছিল বার করেছিল। আর যারা মিছিলে হাঁটছে, তারাই কালো ব্যাচ পড়ে আমাকে ফোন করে বলেছিল, তোর বিরুদ্ধে মিছিলে হাঁটছি ভাই। আর আজকে যে যে পরিচালকদের অসুবিধা হয়েছে, তারা সেদিন আমার বিরুদ্ধে ঘটনা দেখেও চুপ করেছিল। সেদিনই জানতাম, যেদিন বন্ধু তোমার ঘরটা পুড়বে, আমি দেখব। যারা ওদের হয়ে লেজ হেরেছিল, কিংবা প্রাণ বাঁচাবার ভয়ে চুপ করেছিল, তারাই আজকে ভুগছে। তাদের যখন অন্য কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে, তখন তারা রাস্তায় নেমেছেন প্রতিবাদ করেছেন। এরা বাঁচবে বেশিদিন? আমি তো বলব সাবধান হোন।