/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/10/lead-15.jpg)
ডানদিকে ঝাড়গ্রামের দত্তবাড়ির পুজোর প্রতিমা। ছবি সৌজন্য: রূপাঞ্জনা মিত্র
Rupanjana Mitra Jhargram Dutt Barir Pujo: রূপাঞ্জনা মিত্রের ব্যস্ততা দ্বিগুণ বেড়ে যায় শারদোৎসবের সময়। একদিকে পুজোর ওপেনিং, তার সঙ্গে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে প্ল্যানিং আর অন্যদিকে বাড়ির পুজোয় আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সময় কাটানো। প্রতি বছর পুজোতে অন্তত একটিবার তিনি যান ঝাড়গ্রামে, তাঁর মামার বাড়ির পুজোয়। সেখানকার বাছুরডোবায় দত্তবাড়ির পুজোর কথা জানেন সবাই। অত্যন্ত ধুমধাম করে পুজো হয় এবং ওই এলাকার সব মানুষই আসেন পুজো দেখতে।
''আমার দাদুর বাবা জগদীশ চন্দ্র দত্ত রায়সাহেব উপাধি পেয়েছিলেন। এই পুজো তিনিই শুরু করেন। আমার মামার বাড়ির পুজো হয় বিশুদ্ধ মতে। অষ্টমীতে আমরা মা দুর্গাকে পান্তাভাত ও ইলিশ মাছ ভোগ দিই'', বলেন রূপাঞ্জনা, ''আমাদের কমপ্লেক্সেও পুজো হয়, সেখানেও আমি খুবই ইনভলভড কিন্তু একটা দিন অন্তত ঝাড়গ্রামে যাই। মায়ের দিকের সব আত্মীয়স্বজনরা আসেন। এটাই এই বাড়ির রীতি। আর আজকের দিনে সবাই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে বড় হয়। উৎসব উপলক্ষে সবাই একসঙ্গে হওয়াটা খুব দরকার। পরের জেনারেশন তবেই কাজিন-আত্মীয়স্বজনদের চিনবে।''
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/10/WhatsApp-Image-2019-10-06-at-15.41.05.jpeg)
আরও পড়ুন: নুসরতের ধর্ম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য শিবাজি পাঁজার
ঝাড়গ্রামের দত্তবাড়ির পুজো, পারিবারিক পুজো হলেও বহু মানুষ এই পুজোতে আসেন এবং তাঁদের পাত পেড়ে খাওয়ানোর রেওয়াজ রয়েছে এই পরিবারে, বিশেষ করে অষ্টমী-নবমীতে। ঠাকুরের ভোগ এবং অতিথিদের খাওয়াদাওয়ার জন্য খুব বড় করেই রান্নার আয়োজন করা হয়। ''অনেকগুলো উনুন বানানো হয়, আমিষ-নিরামিষের আলাদা আলাদা শেড থাকে। কোথাও লুচিভাজা হচ্ছে, কোথাও নিরামিষ তরকারি হচ্ছে। সারাদিন যে কত লুচি ভাজা হয়, তার হিসেব থাকে না'', মজা করেই বলেন রূপাঞ্জনা, ''আর আমার মা হলেন ফুড কমিটির হেড। এই বাড়িতে পুজোর আয়োজনকে যতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়, খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারটাও তাই। জলখাবারে প্রতিদিন নিত্যনতুন পদ যাতে থাকে, দুপুরে বা রাতের খাবারে যাতে সকলের মনের মতো পদ থাকে সেই সব দিকে অত্যন্ত খেয়াল রাখা হয়। তবে এই বাড়িতে এখনও পর্যন্ত মুরগি ঢোকে না। এটা রায়সাহেবের আমল থেকেই চলে আসছে। চিকেন খেতে গেলে বাড়ির বাইরে গিয়ে খেতে হয় এখনও।''
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/10/inside1-6.jpg)
বিগত ৭২ বছর ধরে এই পুজো চলছে। রাজ্য রাজনীতি সম্পর্কে যাঁরা অবহিত তাঁরা জানেন, একটা সময় কতটা অশান্ত পরিবেশ ছিল এই অঞ্চলে। বছর কয়েক হল সেই অবস্থাটা বদলেছে। রূপাঞ্জনা জানালেন, কোনও রকম পরিস্থিতিতেই কখনও এই পুজো ব্যাহত হয়নি। যেই সময় এলাকার বাইরের মানুষ ঝাড়গ্রামে পা রাখতে ভয় পেতেন, তখনও দত্তবাড়ির সবাই পুজোতে একত্রিত হয়েছেন, ধুমধাম করে পুজো হয়েছে। গ্রামের সবাই সানন্দে অংশগ্রহণ করেছেন পুজোতে। এই পুজো নিয়ে এলাকার মানুষ যে বেশ আবেগপ্রবণ সেটা এই তথ্যেই বোঝা যায়।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/10/WhatsApp-Image-2019-10-06-at-15.41.10.jpeg)
আরও পড়ুন: নবমীতে কাদামাটি আর ঠাকুরদালানে নাটক! সুজন মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজোর গল্প
''আমাদের পুজোতে ধুনুচি নাচ থেকে সিঁদুরখেলা, সব আচারই নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হয়। সন্ধিপুজোটা এবছর আমি মিস করলাম আমার অন্য কমিটমেন্ট ছিল সেই কারণে। নবমীর সকাল থেকে আছি মামার বাড়ির পুজোতে। আমার ছেলে অবশ্য আমার মায়ের সঙ্গে আগেই চলে এসেছে। নবমীর দিন আমাদের বাড়িতে যজ্ঞ হয়। এটাও রায়সাহেবের চালু করা। এই যজ্ঞতে কারেন্ট জেনারেশনের যে সবচেয়ে বড়, তাকে বসতে হয়'', বলেন রূপাঞ্জনা, ''আর আমাদের পুজোতে ধুনুচি নাচটা মাস্ট। আমরা সবাই প্রাণখুলে আনন্দ করি। এত আনন্দ করি যে দশমীর দিন খুব কষ্ট হয়। আমাদের ঠাকুর বিসর্জনটা দেখার মতো। বৈতা নদীতে ভাসান হয়। ঠাকুরমশাই যখন হাত তুলে মা-কে বিদায় জানান, তখন সবার চোখে জল, আসলে ভক্তিভরে পুজো করলে দেবীকে নিজের মা বলেই মনে হয়, আর মাকে বিদায় জানানোর যে কষ্ট সেটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই।''