Rupankar Bagchi in web series The Stoneman Murders: ১৯৮৯ সালের জুন মাসে কলকাতায় প্রথম খুনটা হয়। ৬ মাসে মোট ১৩টি খুন করে স্টোনম্যান। গোটা বাংলায় তখন এই আতঙ্ক ঘরে ঘরে। সন্ধ্যার পরে বেশিক্ষণ ঘরের বাইরে থাকতে ভয় পেতেন নাগরিকরা। আর নির্জন রাস্তায় একা হাঁটার মতো বিভীষিকা আর কিছুই ছিল না। ২৪ বছর পরে আবারও সেই আতঙ্ক ফিরছে হইচই-এর ওয়েব সিরিজ 'দ্য স্টোনম্যান মার্ডারস'-এ। আর সেখানেই কেস সলভ করার দায়িত্ব রূপঙ্কর বাগচীর কাঁধে।
এই সিরিজে স্টোনম্যানের রহস্যকে এনে ফেলা হয়েছে ২০১৯-এ। ১৯৮৯ সালের ওই সিরিয়াল কিলার কিন্তু ধরা পড়েনি। কলকাতা পুলিশ তার কোনও নাগালই পায়নি। বেশ কিছু সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করা হলেও তাঁদের ছেড়ে দিতে হয় কারণ তাঁদের বিরুদ্ধে তেমন কোনও প্রমাণ পায়নি পুলিশ। এই সিরিজের গল্পে স্টোনম্যান এখনও জীবিত এবং সে তার পরবর্তী শিকারের খোঁজে। আর গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি ডায়েরি যা এসে পৌঁছয় এক সাংবাদিকের হাতে। তবে কি স্টোনম্যান তাঁর পুনরাবির্ভাবের কথা জানাতে চায় সংবাদমাধ্যমকে?
আরও পড়ুন: ক্রাইম, হরর ও অ্যাকশনে জমজমাট সেপ্টেম্বর! মাসের ৭টি সেরা ওয়েব সিরিজ
গায়ক-সঙ্গীত পরিচালক রূপঙ্করকে থিয়েটারের মঞ্চে, বড়পর্দায় এবং ছোটপর্দায় অনেকবারই বিভিন্ন চরিত্রে দর্শক দেখেছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সম্ভবত ব্যোমকেশ ছবিতে ডেপুটি কমিশনারের চরিত্রটি। 'দ্য স্টোনম্যান মার্ডারস'-এ আবারও তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের চরিত্রে আসছেন রূপঙ্কর। তাঁর হাতে আসে সেই রহস্যজনক ডায়েরি, আর ফিরে আসে অনেক বছর আগে ফেলে আসা সেই সময়ের কিছু ভয়ঙ্কর স্মৃতি। পুলিশ হলও রক্তমাংসের মানুষই তো। ভয়ডর তো তারও রয়েছ।
'দ্য স্টোনম্যান মার্ডারস'-এ রূপঙ্কর
সম্প্রতি সোশাল মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে 'দ্য স্টোনম্যান মার্ডারস'-এর একাধিক প্রোমো। রূপঙ্কর বাগচী অভিনীত চরিত্রের প্রোমোটি দেখে দর্শক বুঝবেন, কতটা আকর্ষণীয় হতে চলেছে এই রহস্য সমাধান। আর সেখানেই রয়েছে ওই অনবদ্য সংলাপটি - "পুলিশ হলেও মানুষ তো! ভয়ডর নেই বললে মিথ্যে বলা হবে।" দেখে নিতে পারেন সেই প্রোমোটি এক ঝলক -
''আমি প্রথমে চরিত্রটা নিয়ে এক রকম প্রস্তুতি নিয়েছিলাম কিন্তু পরিচালক অন্য রকম কিছু চাইছিলেন,'' ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানালেন রূপঙ্কর। ''আমাকে বশির ভাই বলেছিলেন একদম সাদামাটা লুক হবে, আর কোনও ম্যানারিজম থাকবে না। আমি সেটাই চেষ্টা করেছি। মুম্বইয়ের একটি টিম এসে কাজ করেছে, খুবই ভালো লেগেছে কাজ করে।''
প্রসঙ্গত, স্টোনম্যানের কিসসা কিন্তু প্রথম শুরু হয় মুম্বইতেই। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত মুম্বইতে চলেছিল পাথর বা কংক্রিটের স্ল্যাব দিয়ে খুনের ঘটনাগুলি। আশ্চর্যজনকভাবে ১৯৮৮-র পরে কিন্তু মুম্বইতে তেমন কোনও ঘটনা আর ঘটেনি। আর তার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৯-তেই কলকাতায় ৬ মাসের মধ্যে পর পর ১৩টি খুনের ঘটনা। মুম্বই ও কলকাতার খুনগুলির বেশ কিছু সাযুজ্য দেখে পুলিশের ধারণা হয়েছিল যে খুনি সম্ভবত একজনই, এবং সে মুম্বই থেকেই কলকাতায় এসেছিল।
আরও পড়ুন: অগাস্ট মাসে মিস করবেন না এই ৫টি ওয়েব সিরিজ
কেনই বা সে হঠাৎ ফুটপাথবাসীদের খুন করতে শুরু করে এবং কেনই বা হঠাৎ সেই খুন বন্ধ হয়ে যায়, ২৪ বছরে আর একবারও এমন কোনও ঘটনা কেন ঘটল না, সেই রহস্যের কোনও কিনারা হয়নি এখনও। কিন্তু যে কোনও আরবান লেজেন্ডের মতোই স্টোনম্যান এখনও কলকাতার নাগরিকদের মনে আতঙ্ক হয়ে রয়েছে। সেই আতঙ্কেরই পুনর্জাগরণ ঘটবে 'দ্য স্টোনম্যান মার্ডারস'-এ। আর ওয়েব সিরিজে সেই রহস্য সমাধানের গুরুদায়িত্ব রূপঙ্করের কাঁধে। শেষ পর্যন্ত রহস্যের কিনারা হয় কি না সিরিজে, সেটা আগামী ১৩ সেপ্টেম্বরই জানতে পারবেন দর্শক, কারণ ওইদিনই হইচই-তে শুরু হবে স্ট্রিমিং।
তারিখটি কিন্তু লক্ষ্যণীয় - ১৩ সেপ্টেম্বর! আর কলকাতায় স্টোনম্যান ১৩টি খুন করেছিল বলেই জানা গিয়েছে। আরও একটা মজার ব্যাপার লুকিয়ে রয়েছে এর মধ্যে। এবছর ১৩ সেপ্টেম্বর কিন্তু পড়েছে শুক্রবার। অর্থাৎ এই 'ফ্রাইডে দ্য থার্টিনথ'-এই আসছে স্টোনম্যান মার্ডারস। সব মিলিয়ে গা ছমছম ব্যাপারটা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। শোনা যায়, ২০১৬ সালে আসামের রাজধানী গুয়াহাটি-তে নাকি একই ধাঁচের কিছু খুনের ঘটনা ঘটে। তবে কি স্টোনম্যান কলকাতা ছেড়ে চলে গিয়েছে, নাকি কলকাতারই কোনও এক গলিতে মিশে রয়েছে সাধারণ নাগরিকের বেশে?