Sabitri Chatterjee On Birthday: বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগের অভিনেত্রী। রূপে-গুণে অনন্যা। ৮৮ বছরে পা রেখেও চেহারার সেই লালিত্য কিন্তু, হারিয়ে যায়নি। বার্ধক্যজনিত কারনে চামড়া খানকটা কুঁচকে গেলেও আজও যেন বাঙালির মনের মণিকোঠায় 'ধন্যি মেয়ে'-র ইমেজটাই গেঁথে রয়েছে। হ্যাঁ, তিনি সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। ২১ ফেব্রুয়ারি এই স্বনামধন্য অভিনেত্রীর জন্মদিন। পদ্মশ্রী, বঙ্গবিভূষণের মতো পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন তিনি। দীর্ঘ ৬০ বছরের বেশি সময় অভিনয়ের জন্য নিজেকে সমর্পন করেছেন। তাঁর জীবন যেন পরিবারের জন্যই উৎসর্গ। বিয়ে-সাদি করেননি। নিউ আলিপুরে রাস্তার উপর নিজের বাড়ি তৈরি করেছেন। প্রত্যেকবারের মতো এবারেও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিনে সাজ সাজ রব। সকাল থেকেই আত্মীয়স্বজনদের আনাগোনা। সেই সঙ্গে ফোনে জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তা পেয়ে বেজায় খুশি সাবিত্রী।
জন্মদিনের সকালে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অনলাইনের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আজকের দিনে বিশেষ কী আয়োজন? এই প্রশ্ন করতেই মৃদু হেসে বলেন, 'বাড়িতে কিছু আয়োজন করিনি। বুড়ো হয়ে গিয়েছি এখন আবার কীসের জন্মদিন! আমি যে ক্লাবের সদস্য সেখান থেকে আমন্ত্রণ পাঠিয়েছে। জন্মদিন উপলক্ষে আমাকে সংবর্ধনা দেবে। আজ সন্ধ্যায় কিছুক্ষণের জন্য ওখানে যাব। ছোটবেলায় মা-ঠাকুমা জন্মদিন পালন করতেন। পায়েস বানিয়ে ঠাকুরকে দিতেন। পরে সেটা খেতাম। এখন আর সেরকম কেউ নেই যে ওই রীতিগুলো পালন করবে। সবাই এখন ব্যস্ত। তাছাড়া সিং ভেঙে বাছুরের দলে ঢুকতে আমার ভাল লাগে না।'
জন্মদিনে কউকে কিছুতেই কেক আনতে দেন না। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ফোনের ওপারেই রীতিমতো লাজুর সুরে বলেন, 'আমার না কেক কাটতে খুব লজ্জা করে। ওগুলো বাচ্চারা করলেই ভাল লাগে। আসলে যে বয়সে যেটা মানায়। আজকের দিনটা সবাই মনে রেখেছে, ফোন করে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে সেটাই আমার পরম পাওনা।' বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, 'এই যে তুমি ফোন করলে কত ভাল লাগল।' যখন নিয়মিত সেটে যেতেন শুটিং করতেন তখনও কিন্তু, বাড়িতে জন্মদিন সেলিব্রেট হত। স্মৃতির সাগরে ডুব দিয়ে বলেন, 'সেই সময় ঘরোয়া আয়োজনে জন্মদিন পালন করেছি। সবাই আসতেন। এমনকী উত্তম কুমারও এসেছেন। যদিও ওঁর সঙ্গে সম্পর্কটা একদম অন্যরকম ছিল। আমার দিদির সঙ্গেও খুব ভাল বন্ধুত্ব ছিল। যখন ইচ্ছে হত আমাদের বাড়িতে আসতেন, গল্প করতেন, খাওয়াদাওয়া করতেন। তাই জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর আমাদের বাড়িতে আসার আলাদা কোনও আলাদা তাৎপর্য ছিল না। সেই দিনগুলোতো আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। এখন আত্মীয়স্বজনরা আসেন। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করি, এটাই আনন্দের।'
পুরনো দিনের স্মৃতিচারণা করে বলেন, 'আমি কয়েক বছর আগেও বাড়িত একটা আয়োজন করতাম। তবে সেটা সম্পূর্ণ অন্য একটা কারনে। বছরে একটা দিন ইন্ডাস্ট্রির সকলের সঙ্গে দেখা হবে সেই জন্য।' সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের সমসাময়িক অভিনেতা-অভিনেত্রীরা এখনও কাজ করছেন। কিন্তু, তিনি কোনও প্রস্তাব পাচ্ছেন না, অথচ লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনে ফেরার প্রবল বাসনা। বেশ খানকিটা উৎকণ্ঠা নিয়েই বলেন, 'বয়স হচ্ছে তো। তাই সকলের মনে ভয় যদি হঠাৎ করে মরে যাই। তাহলে কাজটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। আর ৮৮ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে একজন মানুষ তো সত্যিই ভাববে, যাওয়ার দিন এগিয়ে এল। আমার মৃত্যু নিয়ে কত ভুয়ো খবরও রটেছে। এখন আর কেউ বলার মতোও নেই দীর্ঘজীবী হও। সেসব দিন পার করে এসেছি।'