Samik Roy Choudhury Maya Satya Bhram: 'বেলাইন'-র পর এবার 'মায়া সত্য ভ্রম' নিয়ে আসছেন পরিচালক শমীক রায়চৌধুরী। সাসপেন্স থ্রিলার ঘরানার ছবিই দর্শককে উপহার দেবেন পরিচালক। কলকাতার শ্যুটিং পর্ব সেরে এখন ওড়িশায় টিম 'মায়া সত্য ভ্রম' নিয়ে শ্যুটিং করছেন শমীক রায়চৌধুরী। তার মাঝেই ছবি নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অনলাইনের সঙ্গে কথা বললেন শমীক। প্রিয়াঙ্কা-সোহমের সঙ্গে শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা, সাম্প্রতিককালে চারটি বাংলা ছবি নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে অর্ন্তদ্বন্দ্ব কতটা প্রাসঙ্গিক এই সব বিষয় নিয়েই কথা বললেন 'মায়া সত্য ভ্রম' -র পরিচালক শমীক রায়চৌধুরী।
প্রশ্ন: বছরের শুরুতে প্রথম কথা। নতুন বছর কেমন কাটল?
শমীক: WBFJA-তে বেলাইন চারটি নমিনেশন পেয়েছে এটাই বছরের শুরুতে আমার জন্য দারুণ খবর। অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। বেশ ভালই লাগছে।
প্রশ্ন: পুরনো বছরের এমন কোনও অধরা ইচ্ছে আছে যা এই বছর পূরণ করতে চাও?
শমীক: আমি জীবনে স্টেপ বাই স্টেপ এগতে পছন্দ করি। একটা থাকে 'নিয়ার গোল' অপরটা থাকে 'ফার গোল'। নিয়ার গোলগুলো পূরণ করার চেষ্টা করি। তারপর ফার গোলের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যাই। প্রত্যেক বছরই একটা নির্দিষ্ট গোল থাকে। গত বছরের যা গোল ছিল সেগুলো ছুঁতে পেরেছি। এবছরও আশা করি নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।
প্রশ্ন: এটাই তাহলে নিউ ইয়ার রেজুলিউশন?
শমীক: না, এটা আমার জীবনের রেজুলিউশন। নিউ ইয়ার রেজুলিউশন বলে আমার জীবনে আলাদা করে কিছু নেই।
প্রশ্ন: নিউ ইয়ার নিয়ে কথা তো হল, এবার তাহলে 'মায়া সত্য ভ্রম'-এ আসা যাক। 'বেলাইন'-র সাফল্যই আবার থ্রিলার ছবি তৈরির অনুপ্রেরণা?
শমীক: 'বেলাইন' থেকে আমি এনার্জি নিয়েছি। তৃতীয় সপ্তাহেও মানুষ যখন ছবির প্রশংসা করছে ভাল লাগছে। খুব কম হলে জায়গা পেলেও হাউজফুল হচ্ছে, এগুলো থেকে আমি একটা এনার্জি পেয়েছি। তখন আমি পাহাড়ে চলে গিয়েছিলাম। সেখানেই 'মায়া সত্য ভ্রম'-র প্রথম খসরাটা লিখেছিলাম। বেলাইন আমাকে একটা স্ট্রং পজিটিভ ভাইব দিয়েছে।
প্রশ্ন: পাহাড়ে গিয়ে খসরা লেখার কারণ? পাহাড় স্ক্রিপ্ট লেখার এনার্জি বুস্টার?
শমীক: আমি বাড়িতে থেকে কখনই লিখি না। কোথাও না কোথাও চলে যাই। এবার পাহাড়ে গিয়ে একটা রিসর্টে পুরো একা থেকে সাত দিন ধরে গল্প লিখেছি। 'বেলাইন' লিখেছিলাম একটা জমিদার বাড়িতে একা থেকে। 'বেলাইন' আর 'মায়া সত্য ভ্রম' একদম ভিন্ন ধারার আলাদা দুটি ছবি।
প্রশ্ন: মায়া সত্য ভ্রমের গল্পের প্রেক্ষাপটা কী?
শমীক: এটা ক্রাইম-মিস্ট্রি। একটি বাচ্চা হারিয়ে যায়। তখন সেই বাচ্চাটির বাবা-মায়ের তাকে খোঁজা এবং দশ মাস বাদে এক বিদেশি গবেষক এসে সেও হারিয়ে যায়। এই দুটি ঘটনার অর্ন্তধান রহস্য উন্মোচন করতে করতে আরও অনেক ঘটনা ঘটে। শেষ মুহূর্তে কাহানিতে থাকবে একটা দারুণ ট্যুইস্ট। আমার বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত দর্শকের মধ্যে সেই টানটান উত্তেজনাটা ধরে রাখতে পারব।
প্রশ্ন: মায়া সত্য ভ্রমের জন্য প্রিয়াঙ্কা -সোহম প্রথম পছন্দ?
শমীক: চয়েজ সেভাবে ছিল না। লেখার শুরুতে হয়ত কাউকে ভেবেছি। মাঝপথে এসে মত পরিবর্তন করেছি। এই গল্প লেখার পর একটা অ্যাড ফিল্ম করেছিলাম। সেখানে প্রিয়াঙ্কাকে দেখে আমার মনে হয় প্রিয়াঙ্কা সরকারই এই ছবির জন্য পারফেক্ট চয়েজ।
প্রশ্ন: প্রিয়াঙ্কাকে কেন পারফেক্ট মনে হল?
শমীক: আমরা যে বয়সের অভিনত্রী খুঁজছিলাম সেটার জন্য প্রিয়াঙ্কা দ্য বেস্ট। ওঁর লুক, অভিনয়ের ধরন সবটাই আমাদের চাহিদার সঙ্গে মিলে যায়। সেই জন্যই ওঁর কাছে ছবির প্রস্তাব রেখেছিলাম।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ট্যানট্রাম সামলাতে হয়েছে?
শমীক: প্রিয়াঙ্কা একজন স্ট্রং অ্যাক্টর। অ্যাড ফিল্মে কাজ করতে গিয়েই বুঝেছিলাম ও কতটা ডিরেক্টর ফ্রেন্ডলি, সাদামাটা, ডাউন টু আর্থ (মাটির মানুষ), অন্য শিল্পীদের সঙ্গে কতটা ভাল মিশে যেতে পারে, শট নিয়ে কোনও সাজেশন দিলে সেটা শোনে। সবথেকে বড় কথা ওঁর কোনও ট্যানট্রাম নেই। সোহমের সঙ্গেও একটা মিটিংয়ে দেখা হয়েছে। তখন প্রিয়াঙ্কার বিপরীতে ওকেই ভেবেছিলাম।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ট্যানট্রাম নিয়ে অনেক কথাই তো শোনা যায়...
শমীক: আমরা একজন অভিনেতা-অভিনেত্রীকে তাঁর যোগ্য সম্মান দিই। উলটোদিকে তাঁরাও আমাদের সম্মান করেন। এই দুটো দিক ব্যালেন্স করে চললে ট্যানট্রামের জায়গাটা কিন্তু, তৈরি হয় না। তবুও অনেক সময় এই ধরনের ঘটনার সম্মুখান হই। তবে প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে এইরকম কিছু হয়নি। ওঁরা দুজনেই খুব ভাল মানুষ।
প্রশ্ন: সোহম-প্রিয়াঙ্কাকে কোন চরিত্রে দেখা যাবে?
শমীক: সোহম-প্রিয়াঙ্কা এখানে স্বামী-স্ত্রীর চরিত্রে। যে বাচ্চাটি হারিয়ে যাবে তাঁর মা-বাবা ওঁরা। সাব ইন্সপেক্টরের ভূমিকায় অভিনয় করছে সোহম।
প্রশ্ন: সোহম-প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে এখনও পর্যন্ত কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
শমীক: খুব ভাল অভিজ্ঞতা। কাজের প্রতি দুজনেরই সমান এনার্জি। যখন শ্যুট চলছে আমার মনে হচ্ছে চরিত্র দুটোর জন্য আমার চয়েজটা একদম পারফেক্ট ছিল। এছাড়াও এই ছবিতে আরও অনেকে স্টার কাস্ট রয়েছেন। তাঁরা প্রত্যকেই ভীষণ সহযোগীতা করছেন। একজন শিশুশিল্পীও আছে। ওর নাম শঙ্খদীপ। ১০ বছরের এই ছোট্ট বাচ্চাটাও দারুণ। মায়া সত্য ভ্রমে মোট ৫৬ টা চরিত্র রয়েছে।
প্রশ্ন: শঙ্খদীপের জন্য আলাদা ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করতে হয়েছে?
শমীক: শুধু শঙ্খদীপ নয়, প্রত্যেকের সঙ্গে আমি ওয়ার্কশপ করেছি। সকলে সময় বের করে ওয়ার্কশপে এসেছে। আমার সঙ্গে বসে চরিত্র নিয়ে আলোচনা করেছে। সোহম তো রাত দুটো-আড়াইটের সময়ও অনেক বিষয় জানতে চেয়েছে। সোহম-প্রিয়াঙ্কা একসঙ্গে সাতদিন আমার বাড়িতে এসে একসঙ্গে ওয়ার্কশপ করেছি। সত্যিই দারুণ অভিজ্ঞতা।
প্রশ্ন: ছবি মুক্তির পরিকল্পনা কবে?
শমীক: ছবি মুক্তি নিয়ে এখনও কিছু ভাবিনি। আগে ভালভাবে শ্যুটিং শেষ করব। অনেক VFX-এর কাজ বাকি আছে। ফেস্টিভ্যালে এই ছবিকে পাঠানোর একটা পরিকল্পনা রয়েছে। তারপর সিনেমাহলে মুক্তি। বাণিজ্যিক দিক নিয়ে এখনও খুব বেশি গভীরে চিন্তাভাবনা করি না। কারণ আমি নিজেকে এখন শিক্ষানবিশই ভাবি। বড় মাপের পরিচালক-প্রোডাকশন হাউজ সেই প্ল্যানিংগুলো করে। আমার সেই সময় এখনও আসে নি।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে অল্প দিন কাজ করছেন বা পা রেখেই তাঁদের ছবি অস্কারে মনোনয়ন পাচ্ছে। নিজের ছবি নিয়ে এমন স্বপ্ন দেখেন?
শমীক: আমি ভাল ছবি বানাতে চাই। যা দর্শককে বিনোদন দেবে। সেই সঙ্গে ছবির একটা গুণগত থাকবে। এরপর যে কোনও পুরস্কার আমার জন্য বাড়তি পাওনা হবে।
প্রশ্ন: ক্রিসমাসে চারটি বাংলা ছবি মুক্তির পর ইন্ডাস্ট্রিতে একটা অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে। একজন পরিচালক হিসেবে এটা সমর্থনযোগ্য?
শমীক: প্রতিযোগীতা যদি হেলদি হয় তাহলে সেটা নিঃসন্দেহে ভাল। ভাল ছবি তৈরির খিদে আরও বাড়বে। আমরা যদি ভাল ছবি তৈরি করি তাহলে প্রতিযোগীতা বাড়বে। সেই সঙ্গে দর্শকের ছবি দেখার চাহিদাও বাড়বে। কোনওক্রমে ছবি তৈরির প্রবণতা বাড়লে ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি হবে। প্রতিযোগীতা চলতে থাকুক।
প্রশ্ন: মায়া সত্য ভ্রমের পর নতুন কাজ পাইপলাইনে রয়েছে?
শমীক: হ্যাঁ, এই ছবির কাজ মোটামুটি শেষ হয়ে গেলে নতুন ছবির কাজ শুরু করার ইচ্ছে আছে। বেশ কিছু সিনেমা আর একটি ওয়েব সিরিজ আমার ভাবনায় রয়েছে। একটি শেষ করে আরেকটি কাজে হাত দেব। একসঙ্গে সব করব না।