রিয়্যালিটি শো অনেক মানুষেরই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। প্রাক্তন 'মীরাক্কেল' প্রতিযোগী সঙ্গীত তিওয়ারি-র ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। যিনি এক সময় স্ট্যান্ড আপ কমেডি ভালবেসে প্রতিযোগিতার মঞ্চে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি আজ বাংলা টেলিপর্দার রিয়্যালিটি শোয়ের ব্যস্ততম নেপথ্যনায়কদের একজন। 'মীরাক্কেল' থেকে 'দাদাগিরি'-র ব্যাকস্টেজ-- এই দীর্ঘ যাত্রা নিয়ে কথা বললেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে।
সঙ্গীত পড়াশোনা করেছেন মেটালার্জি নিয়ে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়াশোনার শেষে নিয়মমতো ক্যাম্পাসিংয়ে চাকরিও পেয়েছিলেন। সেই সময়েই মীরাক্কেল-এর অডিশনের খবরটি আসে। সঙ্গীত একটা ঝুঁকি নিয়েছিলেন এবং তার পরে পরিশ্রম করেছেন দিনরাত। তাই যা ছিল তাঁর প্যাশন, পেশা হিসেবে তাকেই পেয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেলেন রাজেশ শর্মা
''আমি যে কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছিলাম, সেখানকার এইচআর ম্যানেজারকে বলে এসেছিলাম যে আমি যাচ্ছি, কী হবে জানি না। যদি কিছু করতে না পারি, তাহলে প্লিজ চাকরিটা রাখবেন আমার জন্য'', বলেন সঙ্গীত। মীরাক্কেল সিজন ৬-এর মঞ্চ পুরোপুরি বদলে দিয়েছিল তাঁর জীবন। ওই সিজনে ফাইনালিস্ট ছিলেন সঙ্গীত।
ওই মঞ্চেই বাংলা রিয়্যালিটি শোয়ের দুই দিকপাল-এর সংস্পর্শে আসেন সঙ্গীত-- মীর ও শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। ''মীরদা হলেন আমাদের গুরু। ওঁর মতো সহজাত প্রতিভা বিরল। আর রিয়্যালিটি শোয়ের কাজটা শেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন শুভঙ্করদা। 'মীরাক্কেল'-এর পরের সিজনগুলোতে আমরা অনেকেই গেস্ট পারফরমার হয়ে আসতাম বা মেন্টর হিসেবে থাকতাম। একদিন শুভঙ্করদা বলেন, আমার সঙ্গে কাজ করবি? সেখান থেকেই আমার রিয়্যালিটি শোয়ের প্রথম কাজ ২০১২ নাগাদ, 'ডান্স বাংলা ডান্স'-এ।''
আরও পড়ুন: ‘নেতাজি’ ধারাবাহিকে মহাত্মা! তিন ধাপে প্রস্তুতির গল্প শোনালেন দেবপ্রিয়
'মীরাক্কেল'-এর গ্রুমিং এবং সঙ্গীতের নিজস্ব সেন্স অফ হিউমর-- এই দুই নিয়েই রিয়্যালিটি শোয়ের স্ক্রিপ্ট লেখা, জোকস লেখা, স্কিট পরিকল্পনা করা দিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন সঙ্গীত। আস্তে আস্তে পরিচালনার কাজেও হাতেখড়ি হয়। বাংলা টেলিভিশনে বিগত ৬-৭ বছরে যা যা বড় রিয়্যালিটি শো দেখেছেন দর্শক, তার বেশিরভাগেরই নেপথ্যে থেকেছেন সঙ্গীত।
এর মধ্যে দীর্ঘতম জার্নি তাঁর 'দাদাগিরি'-র সঙ্গে। ''মীরদা আমাদের গুরু, তাই ওনাকে বাদ দিয়ে বলছি, দাদা এবং যিশুদা হলেন সেরা অ্যাঙ্কর। এঁদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাটাই আলাদা'', বলেন সঙ্গীত, ''রিয়্যালিটি শোয়ে আমরা কিছু কিছু আগে পরিকল্পনা করি ঠিকই কিন্তু এটা তো স্ক্রিপ্টেড নয়, কখনও হয়তো খুব সেনসিটিভ একটা মুহূর্ত চলে এল, সেটাকে সঙ্গে সঙ্গে ম্যানেজ করে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনা, সময়ের মধ্যে শুটিং শেষ করাটা খুব চ্যালেঞ্জিং হয়। ১১-১২টা ক্যামেরা থাকে এই ধরনের শো-তে। তিনজন অনলাইন এডিটর থাকেন। পিসিআর-এ বসে এই গোটা ব্যাপারটা ম্যানেজ করাটা খুব থ্রিলিং। আগে আমার টেনশন হতো, এখন সামলে নিতে শিখে গেছি।''
'দাদাগিরি'-র 'টস' আর 'গুগলি' রাউন্ডের তত্ত্বাবধান করেন এখন সঙ্গীত। তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ঘুমনোর সময়টুকু ছাড়া সর্বক্ষণই তাঁর মাথায় জোকস ও প্রশ্ন ঘুরতে থাকে। তবে এই ধরনের রিয়্যালিটি শোয়ের স্ক্রিপ্টে পুরো রাইটিং টিম এবং ডিরেক্টোরিয়াল টিমের ইনপুট থাকে। সঙ্গীত বলেন, ''শুভঙ্করদা, আমি আর টিমে যাঁরা যাঁরা রয়েছেন, আমরা সবাই মিলে সারাক্ষণ আলোচনা করতে থাকি, যেটা ভাবছি, সেখানে মজা-টা আসছে কি না, সেগুলো সবাই সবাইকে দিয়ে যাচাই করে নিই।''
শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের টিমের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সঙ্গীত এখন স্বাধীনভাবেও কাজ শুরু করেছেন। এখন তাঁর কাজটা মূলত পরিচালনার, পরিকল্পনার এবং গবেষণার। তাই কখনও-সখনও একটু মিস করেন 'স্ট্যান্ড আপ কমেডি'-র মঞ্চ, জানান সঙ্গীত। কিন্তু মনেপ্রাণে তিনি রিয়্যালিটি শো-য়ের এই জগতেই বাঁচেন।